সৌভিক তুমি তো ধর্ম-ভগবান এসব মানোনা‚ তাহলে হঠাৎ হিন্দু মুসলিম নিয়ে এত মাথাব্যাথা কিসের?
এই প্রশ্নটা মাঝেমধ্যেই শুনতে হয় রাজনৈতিকভাবে অপরিপক্ক ব্যক্তিগত চেনাজানাদের কাছ থেকে।
বা‚ ধর্মীয় হিন্দুদের থেকেও মাঝেমধ্যে বিভিন্ন ট্যারাব্যাঁকা কথা শুনতে হয়। জানোনা‚ অহিংসা পরম ধর্ম ? ( ওরে হতভাগা পুরো লাইনটা হলো অহিংসা পরম ধর্ম‚ ধর্ম হিংসা তথৈবচ। অর্থাৎ অহিংসা পরম ধর্ম। কিন্তু ধর্ম রক্ষার্থে হিংসার আশ্রয় নেওয়াটাও ধর্ম। এখানে ধর্ম অর্থাৎ রিলজিয়ন না। ধর্ম মানে ধৃ ধাতু থেকে যার উৎপত্তি। অর্থাৎ যে ধারণ করে )
কিংবা‚ জানোনা শ্রীচৈতন্যদেব কি বলে গেছেন? মেরেছ কলসীর কানা‚ তাই বলে কি ব্লা ব্লা ব্লা ( বলদের বাচ্চা বলদ‚ তোদের শ্রীচৈতন্যই হিন্দু ধর্মের শোভাযাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য লোকলস্কর নিয়ে কাজীর বাড়ি আক্রমণ করেছিলো। যে যুগে জিজিয়া কর দিয়ে হিন্দুদের জিম্মি হয়ে বাঁচতে হতো সেই যুগে চৈতন্যের নেতৃত্বে হিন্দুদের রুদ্ররুপ দেখে কাজী প্রাণ বাঁচাতে পেছনের দরজা দিয়ে পাই পাই করে দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচে। রাখিস সে খবর ? )
যাইহোক‚ মোট কথা হলো ধর্মীয় হিন্দুত্বের সাথে রাজনৈতিক হিন্দুত্বের পার্থক্যটা সাধারণ মানুষকে বোঝানো কঠিন তো অবশ্যই‚ এক প্রকার অসম্ভবও বটে।
তা ইতিহাস থেকে একটা উদাহরণ দিই। তাহলে এই ধর্মীয় আর রাজনৈতিক - এর পার্থক্যটা আর কোনটা বেশি প্রয়োজন - দুটোই পরিষ্কার হবে।
ভৌগোলিক কারণেই ভারতে ইসলামী আগ্রাসন শুরু হওয়ার বহু আগেই ইরাণে মানে তৎকালীন পারস্যে ইসলামী আগ্রাসন শুরু হয়ে যায়। আর ভারতীদের মতোই ওরাও প্রথমে বিপদের গুরুত্ব বুঝতে না পারলেও খুব শিগগিরই আরবীদের হাতে (আক্ষরিক অর্থে) পরাধীন হয়ে পড়ে। বেশিরভাগ জরাথ্রুস্ট্রিয়ান ( ওদের ধর্ম ) মারা পড়ে। কিছু কনভার্টেড হয়। আর বাকিরা ভারতে পালিয়ে এসে শেল্টার নেয়। আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যাদের বংশধর আরকি!
যাইহোক‚ তা এই অষ্টম শতাব্দী নাগাদ‚ জোরাথ্রুস্ট্রিয়ানরা যখন বুঝলো আরবী আগ্রাসনের কারণে তাদের ধর্ম আর টিকবে না। তখন তারা একটি ফোনেটিক বর্ণমালা তৈরি করে আর তাদের ধর্মগ্রন্থগুলো লিখে রাখার কাজে হাত দেয়! যার বর্তমান রূপ এই জেন্দ-আবেস্তা।
এবার জাস্ট কল্পনা করুন যে‚ ওরা যদি তখন ধর্মীয় জোরাথ্রুস্ট্রিয়ান না হয়ে রাজনৈতিক জোরাথ্রুস্ট্রিয়ান হতো? অর্থাৎ ধর্মগ্রন্থ না লিখে সেই সময় চলা রাজনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি‚ প্রাচীন অধিবাসীদের ভারতে পালিয়ে আসার বর্ণনা‚ আরবী আক্রমণ‚ পারসিক জীবনে তার ফলাফল ইত্যাদি সবিস্তারে লিখে যেত তবে পারস্যের পূর্ব দিকের দেশ অর্থাৎ তৎকালীন অখন্ড ভারতবর্ষের জন্য কতবড় একটা সতর্কবাণী হতো সেটা। হয়তো সেই লেখাগুলো ভারতীয় রাজাদের মন-মানসিকতা বা ভবিষ্যৎ চিন্তা তথা সম্পূর্ণ উপমহাদেশের ইতিহাসই পালটে দিতে সক্ষম হতো। হয়তো বা জোরাথ্রুস্ট্রিয়ানরা নিজেদের পালিয়ে আসা মাতৃভূমিও পুনরুদ্ধার করতে পারতো সতর্ক ভারতীয়দের সাহায্যে! কে বলতে পারে?
এই জন্যই বলি। ধর্মীয় হিন্দুদের নিয়ে কোনো সমস্যা নেই‚ যতক্ষণ না তারা শাস্ত্রের ভুলভাল ব্যাখ্যা করে আমাদের পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে ( অহিংসা পরম ধর্ম দ্রস্টব্য )‚ তবে যদি হিন্দু হতেই হয় তবে রাজনৈতিক হিন্দু হোন। এটা সময়ের দাবি!
✍️ সৌভিক দত্ত
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................