অশ্বিনীকুমার দত্তের মত লোকজন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলো বলেই পূর্ববঙ্গের মুসলমানের ছেলেপুলে লেখাপড়া শিখতে পেরেছিলো।

ডা. মনীষা চক্রবর্তী বরিশালে অশ্বিনীকুমার দত্তের নামে কলেজ নামকরণের পক্ষে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। কিছুদিন আগে উনার বাবা ও ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকায় উঠানো হয়েছিলো। অথচ এরা দুইজনই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। এখন তিনি অশ্বিনীকুমার দত্তের স্মৃতি রক্ষার্থে মাঠে নেমেছেন। তার প্রতিপক্ষ যারা তারা কেউ মাদ্রাসা পড়ুয়া ফান্ডামেন্টালিস্ট নয়। বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার রীতিমত ছিলছাপ্পর মারা পার্টির লোকজন। 

অশ্বিনীকুমার দত্তের মত লোকজন স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছিলো বলেই পূর্ববঙ্গের মুসলমানের ছেলেপুলে লেখাপড়া শিখতে পেরেছিলো। ড. আহমদ শরীফও অনুরূপ লিখেছিলেন যে ইংরেজ আমলে অবস্থাপন্ন হিন্দুরা নিজ গ্রামে স্কুল কলেজ নির্মাণ করেছিলো বলেই সেকালে বাঙালী মুসলমানদের প্রথম শিক্ষিত প্রজন্ম তৈরি হতে পেরেছিলো। অশ্বিনীকুমার দত্ত বরিশাল শহরে নিজের দান করা জায়গায় পিতার নামে ‘ব্রজমোহন বিদ্যালয়’ ও ‘ব্রজমোহন কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ২০ বছর কলেজ শিক্ষকতা করেছিলেন বিনা বেতনে। এমন কি বরিশাল শহরে স্ত্রী শিক্ষার্থে একটি বালিকা বিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বর্তমান বরিশাল সরকারি কলেজটিও তার নিজের বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আধুনিক বরিশালের জনক বলা হয় অশ্বিনীকুমার দত্তকে। সেই মানুষটির নামে একটি কলেজ হবে তার জন্য এখন বরিশাল শহর আগুন হয়ে উঠেছে। তারই নিজের বসতভিটায় যে কলেজ প্রতিষ্ঠিত তারই সাবেক ছাত্ররা আন্দোলন করছে যেন তাঁর নামে কলেজের নামকরণ করা না হয়!

এদেশের মাটিতে এখনো দশ হাত খুড়লে মূর্তি পাওয়া যাবে। শশ্মানের পোড়া চেলা কাঠ বেরিয়ে আসবে। এখনো এদেশের মাঠঘাট নদনদীর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কথিত হিন্দুয়ানী। সব মুছে ফেলতে সময় লাগবে। মদিনা গড়তে ঋতিত্ব ঘটকের বাড়ি ভেঙ্গে সাইকেল গ্যারেজ, সুচিত্রা সেনের বাড়িতে জামাতে ইসলামী অফিস, অশ্বিনীকুমার দত্তের নাম কলেজ থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে একেকটি ধাপ। মনীষা চক্রবর্তী বাম রাজনীতি করেন। তাকে দেখলে ষাটের দশকের পূর্ববঙ্গের প্রগতিশীল হিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কথা মনে পড়ে যায়। দেশভাগের পর পূর্ববঙ্গে থেকে যাওয়া শিক্ষিত অল্প সংখ্যক হিন্দুরা তখন সবাই কমিউনিস্ট পার্টি করত। তখনো হিন্দুরা আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক হয়নি। বরং দেশভাগের কারণে মুসলিম লীগের প্রতি হিন্দুদের ছিলো ভীতি। সেই মুসলিম লীগ থেকেই জন্ম হয়েছিলো আওয়ামী লীগ। ৬৪-৬৫ সালের ভারতের দালাল, পাকিস্তানের শত্রু নির্মূল করতে সরকারী আক্রমনের ঢেউয়ে কমিউনিস্ট মধ্যবিত্ত শিক্ষিত হিন্দুদের বড় একটি অংশ দ্বিতীয়বার দেশভাগে বাধ্য হয়েছিলো। ব্রাহ্মণ হিন্দুদের অধিনে থাকার চেয়ে পাকিস্তানে থাকা নিম্মবর্ণের হিন্দুদের জন্য শ্রেয় বলে মত দেয়া যোগেন মন্ডল সেই স্রোতেই ভারতে প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়েছিলেন।…

মনীষা চক্রবর্তী যেন সেই স্রোতেরই বিপরীতে বয়ে চলেছেন। আবারো মনে হচ্ছে দেশভাগের আগের চেতনা যেন ফিরে এসেছে। নইলে অশ্বিনীকুমার দত্তের নাম মুছে ফেলতে বরিশালে পরিস্কার দুইভাগে ভাগ হতে হলো কেন? আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ যুবলীগ বিএনপি জামাত কেন একঘাটে জল খাচ্ছে? নিজের বাবা ঠাকুরমার নাম না হয় আপাতত রাজাকারের তালিকা থেকে বের করা গেছে। অশ্বিনীকুমার দত্তের নাম থাকল কি থাকল না- তাতেও কিন্তু কেউ গ্যারান্টি দিতে পারবে না ‘যোগেন মন্ডল’ বারবার ফিরে ফিরে আসবে কিনা…।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted