কবির সুমন গান লিখেছেন ‘সিরিয়ার ছেলে’ আর সেই গান গেয়েছেন বাংলাদেশের আসিফ আকবর। জর্জ হ্যারিসনও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরের বোমার আঘাতে জর্জরিত মৃতপ্রায় মা আর ক্ষুধাত্ব শিশুদের নিয়ে গান করেছিলেন। সেই গান পৃথিবীর ইতিহাসে মহান শিল্পকর্ম হয়ে উঠেছিলো কারণ সেখানে কোন ভুয়া কাহিনীকে সত্য বানানোর চেষ্টা হয়নি। কবির সুমনের গান একটি ভুয়া নিউজকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠা। সিরিয়ার তিন বছরের একটা বাচ্চা ছেলে বোমার আঘাতে মৃত্যুর আগে বলেছিলো ‘আমি আল্লাহকে গিয়ে সব বলে দিবো’। বাস্তবে এই রকম কোন ঘটনা ঘটেনি। যদিও সারা বিশ্বে এই ভুয়া নিউজ ছড়িয়ে পড়েছিলো। বিশেষত মুসলিমরা তো এটাকে তাদের উপর বিশ্বব্যাপী নির্যাতনের একটা আইকন হিসেবে প্রচার করেছিলো।
তিন বছরের একটা বাচ্চা গোটা বিশ্বকে, পৃথিবী যারা চালায় তাদেরকে দায়ী করে বলছে ‘উপরে গিয়ে সে আল্লাহকে সব বলে দিবে’- এটা একটা তিন বছরের বাচ্চার পক্ষে সম্ভব কিনা আমরা কেউ ভেবে দেখিনি। তবে কেউ কেউ আবেগে না ভেসে ঠিকই এরকম কিছু ঘটেছি্লো কিনা সেই সন্দেহ করেছিলো। এবং তদন্তে বেরিয়ে আসে সিরিয়ার একটি শিশুর বোমা হামলার ছবির সঙ্গে ঐ আবেগপূর্ণ কথাগুলোর কোন সম্পর্ক নেই। কথাগুলো আসলে একটি গানের কলি। সিরিয়া যুদ্ধের সময় যুদ্ধের বিরোধীতা করে বিখ্যাত এই ছবিটির সঙ্গে কেউ একজন প্রথম ঐ গানের কলিগুলো লিখে ফেইসবুকে পোস্ট দিয়েছিলো। তারপর কিভাবে কেমন করে ছবিটির শিশুর মুখের কথা বলে গানের ঐ কথাগুলো ভাইরাল হয় তা বলা মুশকিল। তবে ছবিটির ফটোগ্রাফার বলেছেন নিউজটি ও ছবিটি ফেইক। তিনিই এই ছবিটি তুলেছিলেন ২০১২ সালে। আর শিশুটি মরেও যায়নি। সে সুস্থ হয়। এরকম কোন কথা কখনই শিশুটি বলেনি।
২০১২ সালের তোলা ছবিটি ২০১৪ সালে ভাইরাল হয় উক্ত আবেগপূর্ণ কথাগুলোর কারণে। যারা এটা ভাইরাল করেছিলো তারা খুব কৌশলে এখানে মুসলমানদের ধর্ম বিশ্বাসকেও ভাইরাল করতে চেয়েছে। যুদ্ধে তারা ভিকটিম অমুসলিমদের হাতে এরকমও একটা অবস্থান ছিলো। অথচ মধ্যপাচ্যের সমস্যার পিছনে কেবলই ধর্ম নেই। সেখানে মুসলমান বলেই কাউকে নির্যাতিত করা হচ্ছে এমন কোন বাস্তবতা নেই। বহু জাতিগত, রাজনৈতিক, সাম্প্রদায়গত সংঘাতকে স্রেফ মুসলিম নির্যাতন বানানোর জন্যই সিরিয়ার ঐ শিশুটির ছবিটি ও কথাগুলো ভাইরাল হয়। কবির সুমন যেহেতু সেই ভুয়া ছবি ও নিউজকে নিয়ে গান করেছেন তার মানে তিনিও সেই গুজব রটনাকারীদের সেন্টিমেন্টই লালন করেন। তিনি ঘটনাকে সত্যি মনে করেই গান করেছেন ধরে নিলেও সেন্টিমেন্ট তো একই। তিনি তো সৌদি নারীদের নিয়ে গান বাঁধেন না। ইরানী নারীদের জন্য সুর করেন না। যদিও তিনি ‘মানবতার’ বাঁশিওয়ালা' বলেই তার ভক্তরা দাবী করেন…। আর বাংলাদেশের গায়ক আসিফ আকবরের কথা না-ই বা বললাম। আর সব বাংলাদেশী মডারেট মুসলমানদের মতই তার চরিত্র। যেভাবে সে গানের ভিডিওতে আল্লা বলার সঙ্গে সঙ্গে আঙ্গুল তুলছিলো- দেখে মনে হচ্ছিল ‘আল্লাহ এক’ এটা দৃঢ় করে প্রচার করতেই সে আবেগরুদ্ধ হয়ে পড়ছিলো…।
লিংক https://english.factcrescendo.com/2019/09/27/syrian-boy-says-i-am-gonna-tell-god-everything/
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................