আজকে স্পষ্ট করে বলার সময় এবং সুযোগ দুটোই এসেছে। আমার আজকের এই পোস্ট হয়তো অনেককে ব্যথিত করতে পারে। তবে নীতি এবং বিশ্বাসের সাথে আপোষ করা যাবে না। কোনও রকমের ভন্ডামিকেও প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। তাতে হিন্দু সংহতি সংগঠনের কলেবর যদি ছোট হয়ে যায় তাতেও কিছু যায় আসে না।
হিন্দু সমাজকে ভাঙার একটা চক্রান্ত চলছে দীর্ঘদিন ধরে। যারা ভাঙার চেষ্টা করছে তারা আজ কোনঠাসা, তাই তাদের প্রয়াসটাও মরিয়া। বিভিন্ন ধরণের ন্যারেটিভ মাঝে মাঝেই ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে সূক্ষ্মভাবে। সেগুলো হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টদেরই বিভ্রান্ত করে দিচ্ছে বারবার। এই রকম কিছু কিছু বিষয় ইগনোর করা গেলেও কয়েকটা বিষয়ে সংগঠনের অবস্থান স্পষ্টভাবে অফিসিয়ালি ঘোষণা করা দরকার।
প্রথমত, বর্ণব্যবস্থা সম্পর্কে হিন্দু সংহতির স্পষ্ট মত হল- আজকের দিনে এই বর্ণব্যবস্থা আউটডেটেড। আমরা বর্ণব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করি। মানামানি তো দূরের কথা, আজকের দিনে এই বর্ণব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করাটা শুধু সময় নষ্ট করাই নয়, শত্রুদের ফাঁদে পা দিয়ে নিজের দেশ ও জাতিকে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। পাঁচশো বছর আগে কিংবা পাঁচ হাজার বছর আগে কত সুন্দর এবং সুব্যবস্থিত ছিল আমাদের সমাজ- তার দোহাই দিয়ে আজকের দিনে বর্ণব্যবস্থাকে জাস্টিফাই করার কোনও চেষ্টাই আমরা সমর্থন করবো না। যারা আজকের দিনে বর্ণব্যবস্থাকে সাথে নিয়ে চলতে চান, তাদের হিন্দু সংহতির সঙ্গ ছাড়তে হবে। বর্ণব্যবস্থার সুফল এবং কুফল- দুটো নিয়ে আলোচনা করাই সময়ের অপব্যয় কারণ আজ এই ব্যবস্থাটাই সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক।
দ্বিতীয়ত বিষয় হল পুরুষবাদ-নারীবাদ। অতীতে ভারতবর্ষে নারীদের সম্মান ছিল কি ছিল না, কিংবা সনাতন ভারতীয় দর্শনে নারীকে কোন চোখে দেখা হয়েছে, কিংবা হিন্দু দর্শনে নারী-পুরুষ সম্পর্ক এবং স্টেটাস ঠিক কি- এই সব আলোচনাও আজ অপ্রাসঙ্গিক। আমাদের সংস্কৃতি যুগোপযোগী বিবর্তনকে শুধু টলারেট করে না, এটাকে অপরিহার্য বলে মনে করে (না করলে আমাদের সেই সংস্কৃতিকে অস্বীকার করেই এগিয়ে যেতে হত)। আজ প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কথা বাদ দিলে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের পার্থক্য কোথায়! সমস্ত কাজে নারী আর পুরুষ আজকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে। পুরুষ বাইরের কাজ করবে আর নারী ঘর সামলাবে এই ব্যবস্থা আজকে আউটডেটেড। পুরো বিষয়টাই আজ পুরুষ-নারীর পারস্পরিক বোঝাপড়া এবং কেপাবিলিটির উপরে নির্ভরশীল। নারী এবং পুরুষ একে অপরের পরিপূরক- এই সত্যটা আজকেও যারা উপলব্ধি করতে পারে না, তাদের থেকে বড় মূর্খ(ভণ্ড কিংবা rogue শব্দগুলো বোধহয় বেশি উপযুক্ত হতো) আর কে হতে পারে? তাই দেশ ও সমাজকে যদি এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তাহলে আমাদের এই নারীবাদ-পুরুষবাদের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে, নারী-পুরুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। এখন হবে বলে ছেড়ে দিলে হবে না। সমাজে না হোক, আমাদের সংগঠনের সাথে যারা থাকবেন তাদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক। হিন্দু সংহতিতে নারীবিদ্বেষী এবং পুরুষবিদ্বেষী- উভয়েরই কোনও স্থান নেই। সমাজে নারী এবং পুরুষের সমান উপযোগিতা, তাই সমান স্টেটাস- এটা যারা মানেন এবং তদ্রূপ আচরণ করেন, তারাই আমাদের সঙ্গে থাকুন।
আমি জানি, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অনেক ধরণের যুক্তি-তত্ত্ব-তর্ক এখানে আসবে। কিন্তু আমি এটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না- এটা একটা সাংগঠনিক বার্তা। যারা একমত নন, তারা আসতে পারেন। নমস্কার। আর যদি এই সংগঠনের মধ্যে সবাই এর ভিন্নমত পোষণ করেন, তাহলে আমি নিজে এই সংগঠন ছেড়ে দেবো। আমি যেকোনো সময়ে শুরু থেকে শুরু করতে প্রস্তুত।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................