হযরত মুহাম্মদ কি চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন?

হযরত মুহাম্মদ কি চন্দ্রকে দ্বিখন্ডিত করেছিলেন?

আজকের যুগে বিজ্ঞানের নবম শ্রেণীর একজন ছাত্রও জানে যে এরকম কোন ঘটনা নবী মুহাম্মদের পক্ষে ঘটানো কোন ক্রমেই সম্ভব নয় কেননা এখানে যে দাবী করা হয়েছে সেটা উদ্ভট আর অবাস্তব। যদি আপনি ধার্মীক হন, অলৌকিক ঘটনায় বিশ্বাসী হোন তবু আপনার পক্ষে নবীর চন্দ্র দ্বি-খন্ডিত করার ঘটনাকে বিশ্বাস করার কোন উপায় নেই! মুসার লাঠিকে শাপ হওয়া কিংবা সাগরকে দুইভাগ করে রাস্তা করাও “অলৌকিক” হিসেবে মেনে নেওয়া যাবে কিন্তু চন্দ্রকে দুইভাগ করে দুই পাহাড়ে ফেলা খোদ আল্লার পক্ষেও সম্ভব নয়! কেন নয়, সেটাই এখন বলছি।

মানুষ যদি আকাশের চাঁদকে একটা ঝলসানো রুটির মত মনে করে থাকে তাহলে তাকে মাঝ বরাবর ছিড়ে দুই পাহাড়ের মধ্যে এনে ফেলা সম্ভব বৈকি! সম্ভবত যে বা যারা কথিত হাদিসটি মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করেছিলেন তাদের চন্দ্র সম্পর্কে জ্ঞান এরকমই ছিল। তারা মনে করেছিল চাঁদ একটা মাখনের রুটি। তাদের ধারণা নেই চাঁদ পৃথিবীর মতই একটি গোল বলের মত বস্তু, পৃথিবীর মতই এর ভূমি আছে, পাহাড়পর্বত, খাদ, গিরিখাদ সমেত এক পাখুরে ভূমি। এর আকার ৩,৪৭৪.২০৬ কিলোমিটার (২,১৫৯ মাইল)। এবার বলুন সৌদি আরবের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বড় একটা চাঁদ কিভাবে মক্কার দুটো পাহাড়ে গিয়ে পতিত হয়!!

সহি হাদিসে আছে, হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত,  কাফেররা বলল, আপনি যদি সত্যবাদী হন তা হলে চাঁদকে দ্বিখন্ডিত করে আমাদেরকে দেখান, যার অর্ধেক আবু কোবাইস পর্বতে এবং অর্ধেক কাইকুআন পর্বতে পতিত হবে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, আমি যদি তা করে দেই তাহলে তোমরা ঈমান আনবে কি? তারা বলল, হাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, রাতটি ছিল পূর্ণিমার। রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, তারা (কাফেররা) যা চায় তা যেন আল্লাহ তাকে দান করেন। অতঃপর চাঁদ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, অর্ধেক আবু কোবাইল পর্বতে পতিত হয় এবং অর্ধেক কাইকুআন পর্বতে পতিত হয় (‘দালায়েলুন নবুওয়াতি’)।

পুরো পৃথিবী যেখানে চাঁদ ভেঙ্গে পড়লে ধ্বংস হয়ে যাবার কথা সেখানে মক্কাবাসী চেয়ে চেয়ে দেখল চাঁদ টুকরো হয়ে দুই পাহাড়ের নিচে গিয়ে পতিত হচ্ছে! আকাশে রোজ দেখা চাঁদকে যে আকারে আমরা দেখি সেভাবেই তাকে কল্পনা করলে এরকম কল্পনা শক্তি প্রয়োগ করাই সম্ভব। চাদেঁর যে আয়তন সেটা পৃথিবীর কয়েকটি বৃহৎ মহাদেশ বা রাষ্ট্রের মিলিত আয়তনের চেয়ে বড়। বলা বাহুল্য গোটা সৌদি আরবের যে আয়তন তাতে চাদেঁর অর্ধেকও যদি সেখানে ভেঙ্গে পড়ে সেটা দেখার জন্য কোন মানুষ আস্ত থাকবে না। আর সেখানে কিনা মক্কার মত ছোট একটা এলাকায়, যেখানে মানুষ তার দৃষ্টি সীমার মাত্র কয়েক মাইল পর্যন্ত চোখ দ্বারা দেখতে সক্ষম, সেই তারাই নাকি বিশাল আকারে চাঁদকে মক্কার দুটো পাহাড়ে গিয়ে দুই ভাগ হয়ে পড়ে থাকতে দেখল! 

কি হাস্যকর শিশুসুলভ কল্পনা। যারা অলৌকিক ঘটনা বিশ্বাস করেন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের পক্ষেও তাই এটা বিশ্বাস করার কোন রূপে উপায় নেই। অলৌকিকেরও একটা ভিত্তি থাকতে হবে। যেমন ধার্মীক ব্যক্তি বিশ্বাস করতে পারেন আল্লাহ পৃথিবীর ঘূর্ণণকে ইচ্ছা করলেই বন্ধ করে রাখতে পারেন, আমাদের বিজ্ঞান ও যুক্তি জানে এটা সম্ভব নয়, তবু অলৌকিক বিশ্বাসে বিশ্বাসী মানুষের এসব বিশ্বাস করতে যুক্তি লাগে না। তবু ঘূর্ণন একটা বস্তু থেমে রয়েছে এর একটা ভিত্তি রয়েছে, এমন কি আকাশে একটা হাতি উড়ছে, গরু গাছে চড়েছে- এরকম কথাতে তবু একটা ভিত্তি রয়েছে কিন্তু আকাশের একটা টুকরা ভেঙ্গে পড়ছে যেমন কোনভাবেই সম্ভব নয় কেননা শূন্যের কোন টুকরা হয় না তেমনি আমাদের চেয়ে বিশাল বস্তু, যার সামনে আমরা পিঁপড়ার চেয়েও তুচ্ছ সেটাকে অনতিদূরে পতিত হতে দেখাও সম্ভব না! “অলৌকিক” হলেও সম্ভব নয়!

এবার আসুন পরিসমাপ্ত করার আগে কিছু বেসিক জ্ঞান জানি। নবী মুহাম্মদ যখন দুনিয়াতে কিছু ছাগলের রাখলকে সাহাবী বানিয়ে মক্কা চষে বেড়াচ্ছেন তখন প্রসিদ্ধ গ্রীক সভ্যতা বর্তমান। এমনকি ভারতবর্ষে তখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বিশেষত জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা উল্লেখ করার মত পর্যায়ে ছিল। হাজার বছর আগে থেকে যখন দূরবীন আবিস্কার হয়নি তখনও জ্যোতির্বিজ্ঞানিরা রাতের আকাশে গ্রহ-নক্ষত্রকে পর্যবেক্ষণ করতে বছরের পর বছর নির্মিষ চেয়ে থাকতেন। ততদিনে আকাশের একটা মানচিত্রও মানুষ তৈরি করে ফেলেছিল। এই নিবিড় পর্যবেক্ষণকালে আজ পর্যন্ত সেকালের কোন বৈজ্ঞানিক নথি পাওয়া যায়নি যেখানে আকাশ হতে চাঁদ হঠাৎ তার স্থান থেকে বিচুৎ হয়ে গিয়েছিল। চাঁদকে দ্বি-খন্ডিত হতে দেখেছে এরকম কোন নথি মহাকাশ গবেষণাগারে পাওয়া যায়নি। পৃথিবীতে জোয়ার-ভাটার মত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার জন্য চাঁদের অবস্থান দায়ী। এটা মক্কার রাখালদের জানার কথা নয়। চাঁদ ভেঙ্গে দুটুকরা হয়ে গেলে পৃথিবীর জলসীমার কি অবস্থা হবে সে সম্পর্কেও তাদের কোন ধরণা নেই। সবচেয়ে বড় কথা পৃথিবীতে ডায়নোসারের মত প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে পৃথিবীর বায়ুমন্ডল ভেদে করে একটা বড় ধরণের গৃহাণুর পতনের কারণে। সেখানে বৃহৎ আকারে একটা উপগ্রহ দুই টুকরা হয়ে মক্কার দুটো পাহাড়ে পড়ে গেলো আর সেটা মক্কার রাখলরা চেয়ে চেয়ে দেখলেন! বাহ্, আজকের এই বিজ্ঞানের যুগেও যদি কিছু মানুষ এইরকম রূপকথাকে যুক্তিহীনভাবে বিশ্বাস করে যান তাহলে ১৪০০ বছর আগের উট আর দুম্বা চড়ানো রাখালদের আর দোষ কি?

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted