কি বলব বলার ভাষা নেই! কলেজে ছাত্রদের ইতিহাসের শিক্ষক সেদিনের তার পাঠক্রম "মত প্রকাশের স্বাধীনতা" পড়ানোর সময় নবী মুহাম্মদের একটি কার্টুন দেখিয়েছিলেন উদাহরণ হিসেবে। এর জের হিসেবে ফ্রান্সে অভিবাসী শরণার্থী হয়ে আসা চেচনিয়ার ১৮ বছরের মুসলিম তরুণ তার এই শিক্ষককে আজকে খুন করেছে!
ফ্রান্সে যীশুর ব্যঙ্গ কার্টুনের ছড়াছড়ি। এসব আঁকার জন্য কাউকে হত্যা করা হয় না। সারা পৃথিবীতেই এখন কেউ ধর্ম সমালোচনার জন্য কাউকে মারতে আসে না। ধর্মীয় শাসন ধর্মীয় বইয়ের আইনে শাসন করার জন্য পৃথিবীর সাড়ে চার হাজার ধর্মের কোনটি অনুসারীদেরকে সশস্ত্র জঙ্গি আন্দোলন করতে দেখা যায় না। তাহলে শুধু মুসলিমরা কেন পৃথিবীতে এসবের দাবীতে অশান্ত করে তুলছে?
যখন এসব নিয়ে লিখি তখন কপালে জুটে আরএসএস বিজেপির এজেন্ট! বলে খালি ইসলাম মুসলমান নিয়ে লিখি কেন? হিন্দু খ্রিস্টান ইহুদিদের চোখে দেখি না? ফ্রান্সের আজকের খুনের ঘটনার পর কিন্তু তাদের এখন খুঁজে পাবেন না।
বেগম রোকেয়াকে কেন ‘চাড্ডি’ গালি শুনতে হয় নাই ভাবি। এদিক দিয়ে কাজী নজরুল ইসলামকে দুর্ভাগা বলতে হবে। তাকে তার সময়কালে ‘চাড্ডি’ শুনতে হয়েছে। তখন তো আর ‘চাড্ডি’ বলত না, ডাইরেক্ট ‘হিন্দুয়ানী’ বলত।
বেগম রোকেয়া তার সারাজীবন মুসলিম সমাজের দোষ ত্রুটিগুলো নিয়ে কঠর সমালোচনা করে গেছেন। মৃত্যুর আগের দিন জীবনের শেষ লেখাটায় মুসলমান সমাজে বিয়ে পাগল বৃদ্ধদের ব্যঙ্গ করে লিখেছিলেন, “হুকুর হুকুর কাশে বুড়া/হুকুর হুকুর কাশে।/নিকার নামে হাসে বুড়া/ফুকুর ফুকুর হাসে’।
বেগম রোকেয়াকে এমন ছড়া লেখায় কেউ বলেনি, আপনি কি খালি মুসলমান বুড়োদেরই চোখে দেখেন, কেন হিন্দু বুইড়াগুলি বিয়ের জন্য লাফায় না…?
‘রসনা পুজা’ নামের একটা রচনায় রোকেয়া মুসলমনাদের অপরিচ্ছন্নতার চরম সমালোচনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, মুসলমানের রান্নাঘরে বাহারী রান্নার ঘ্রাণে ব্রাহ্মণের পৈতা ছিড়ে পাত পেতে বসে যেতে ইচ্ছা করবে, কিন্তু সেই রান্নাঘরের পিছনে নোংরা জঞ্জাল দেখে রীতিমত বমি করতে ইচ্ছে করবে…। তিনি সেই প্রবন্ধে একটা লাইন লিখেন এমন, ‘কবে মুসলমান মানুষ হইবে। রসনা পূজা ছাড়িয়া ঈশ্বর পূজা করিতে শিখিবে।”
মুসলমানকে ‘মানুষ’ হতে বলেছিলেন রোকেয়া। হিন্দুদের তো তিনি মানুষ হতে বলেননি। তার মানে হিন্দুরা মানুষ আর মুসলমানরা অমানুষ? আপনে মহিলা কেমন প্রগতিশীল খালি মুসলমানদের দোষ ধরেন, কেন হিন্দুদের চোখে পড়ে না?… রোকেয়াকে কেউ এভাবে হিন্দুয়ানী বলেছিলো কিনা, বা "মুসলিম বিদ্বেষী" বলেছিলো কিনা এই মুহূর্তে আমি নিশ্চিত নই। তবে কপাল খারাপ ছিলো নজরুলের। বিদ্রোহী কবিতা প্রকাশিত হবার পর মুসলিম লেখক চিন্তকদের রোষে পড়েছিলেন তিনি। তার বিদ্রোহী কবিতায় এই লাইনগুলো পড়ে সবাই নিশ্চিত হয়ে যায় সে (নজরুল) হিন্দুমহাসভার এজেন্ট, আজকের ভাষায় পাক্কা ‘চাড্ডি’।বিদ্রোহীতে এই লাইনগুলো আছে, ‘ভ্যূলোক দ্যুলোক ভেদিয়া/খোদার আসন ‘আরশ’ ছেদিয়া/উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর।’
মুন্শী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দিন আহমদ নামের একজন মাসিক পত্রিকায় লিখেন, ‘মোসলেম ভারতে বিদ্রোহী কবিতাই কাজীর কারামৎ জাহির হয়েছিল। তারপর ধুমকেতু প্রত্যেক সংখ্যায় পবিত্র ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধে গরল উদ্গীরণ করিতেছে। এ উদ্দাম যুবক যে ইসলামী শিক্ষা আদৌ পায় নাই তাহা ইহার লেখার পত্রে পত্রে ছত্রে ছত্রে প্রকাশ পাইতেছে। হিন্দুয়ানি মাদ্দায় ইহার মস্তিষ্ক পরিপূর্ণ। …নরাধম হিন্দু ধর্মের মানে জানে কি? …এই রূপ ধর্মদ্রোহী কুবিশ্বাসীকে মুসলমান বলিয়া গ্রহণ করা যাইতে পারে না। (লোকটা মুসলমান না শয়তান?)’।
আজ এরকম "শয়তানের" অনেক বেশি প্রয়োজন। মুন্শী মোহাম্মদ রেয়াজুদ্দিনের মত লোকরা আজো মুসলিম কমিউনিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ বলেই এই তরুণরা খুনি হয়ে উঠছে ধর্মের নামে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................