"মুসলমানের সেক্যুলারিজম কাঁঠালের আমসত্ত্ব" -কথাটা কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীকে উৎসর্গ করলাম!
আজ তিনি দৈনিক ইত্তেফাকে ফ্রান্সের শিক্ষক হত্যা নিয়ে একটি কলাম লিখেছেন। সেখানে এক জায়গায় তিনি লিখেছেন, "আঠারো বছরের এক তরুণের হঠকারিতাকে আর কীভাবে নিন্দা করব? সে যদি চেচনিয়ান বংশোদ্ভূত হয়ে থাকে, তাহলে সেখানে তার পিতৃপুরুষদের নির্মমভাবে হত্যার কথা সে জানে। সুতরাং তার চোখের সামনেই তার প্রিয় নবিকে নিয়ে ক্যারিকেচার দেখানো তার হয়তো সহ্য হয়নি। এ ধরনের সহিংসতা ততদিনই চলতে থাকবে, যতদিন পশ্চিমা শক্তিগুলোর উসকানিমূলক কাজ ও ইসলামবিদ্বেষী প্রচার বন্ধ না হবে।"
হত্যাকে জাস্টিফাই! এরকম কার্টুন আঁকা হলে মরতে হবে! ইসলাম বিদ্বেষী হলেই তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই? নিজেকে সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী দাবী করে আসা এই কলামিস্ট এরপর যা লিখেছেন তা পড়লে আওয়ামী ভাই ব্রাদাররা তাদের এই বুদ্ধিজীবীকে ফরহাদ মজহার, আমার দেশ পত্রিকার মাহমুদুর রহমান থেকে আলাদা করতে পারবেন? ভিকটিম ব্লেম দিয়ে তিনি এরপর আরো লিখেছেন-
"ক্লাসে এই তরুণ কেন শিক্ষক হত্যা করতে গেল? প্রকাশিত খবরেই বলা হয়েছে—৪৭ বছর বয়স্ক শিক্ষক ক্লাসে পড়াতে গিয়ে ১২-১৪ বছরের ছাত্রদের হজরত মোহাম্মদের (দ.) ব্যঙ্গাত্মক ছবি দেখাচ্ছিলেন। এই ছবি ফ্রান্সের স্যাট্যারিকাল নিউজ পেপার চার্লি হেবডোতে প্রকাশিত হয়েছিল। ইতিপূর্বে চার্লি হেবডো পত্রিকা ইসলামের নবির ব্যঙ্গাত্মক ছবি ছাপায় তাদের এক সম্পাদককে হত্যা করা হয়েছিল এবং প্যারিসে দাঙ্গা হয়েছিল। চার্লি হেবডো অফিসও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এ কথা জানা থাকা সত্ত্বেও ঐ ফরাসি শিক্ষক কেন ক্লাসে—তাও আবার ১২-১৪ বছর বয়সের ছাত্রদের সামনে ইসলামের নবির ক্যারিকেচার কোন বুদ্ধিতে দেখাতে গেলেন তা আমার বুদ্ধির অগম্য। এই ছবি দেখানো ঐ চেচনিয়ান তরুণকে অবশ্যই ক্ষুব্ধ ও উত্তেজিত করেছে। তাতে সে ক্লাসে প্রতিবাদ জানাতে পারত; কিন্তু তার উত্তপ্ত তরুণ মস্তিষ্কে হত্যা যে একটি অপরাধ হয়তো সেই উপলব্ধি তখন কাজ করেনি। এ কথা বলা তার অপরাধের পক্ষে সাফাই নয়। বাস্তব অবস্থার কথা বলা মাত্র।"
অর্থাৎ ঐ শিক্ষক নিজের দোষেই মরেছে! সে তো শার্লি আবদো পত্রিকার কার্টুনিস্টদের পরিণতির কথা জানত তবু কেন ক্লাশরুমে মত প্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে মুহাম্মদের কার্টুন দেখালেন। যীশু মুসা কৃষ্ণ সবার কার্টুন শার্লি এবদোসহ সবাই আঁকলেও শুরু মুহাম্মদের কার্টুন আঁকলে ফ্রান্সে দাঙ্গা হয়ে যায়! তারপরও জিজ্ঞেস করা হয় সারা বিশ্বে মুসলমানদের প্রতি সবাই বৈরী কেন? গাফফার চৌধুরীর মত কথিত প্রগতিশীল বলে পরিচিতদের মানসিকতা যদি এরকম হয় তাহলে নিচের দিকে কি অবস্থা?
এরপর আর রাখঢাক না রেখে তালেবান আইএস আল কায়দাসহ ইসলামিক জঙ্গিবাদের সমস্ত শক্তিকে কমিউনিস্ট শক্তির সঙ্গে তুলনা করে লিখেছেন, "কম্যুনিজমের প্রবর্তক কার্ল মার্কসকে যেমন তারা নানা অপবাদ দেয়, তেমনি অপবাদ দেয় ইসলামের প্রবর্তক হজরত মোহাম্মদ (স.)-কে। কারণ, ধর্ম হিসেবে একমাত্র ইসলাম এবং তত্ত্ব হিসেবে কম্যুনিজম পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শাসন ও ধনবাদী স্বার্থের বিরুদ্ধে কথা বলে। কম্যুনিজম এখন বিপর্যস্ত। কিন্তু ইসলাম এখন রক্ষণশীলদের হাতে বন্দি থাকা সত্ত্বেও তার সাম্রাজ্যবাদ বিরোধিতার নীতি রয়েছে। কম্যুনিজম যেমন শ্রেণিসংগ্রামের কথা বলে, তেমনি ইসলাম বলে জিহাদের কথা। এ দুটিকেই বর্তমান খ্রিষ্টান শক্তি ভীষণ ভয় করে। কম্যুনিজম ও কম্যুনিস্ট রাষ্ট্রনায়কদের বিরুদ্ধে কুত্সা রটনার জন্য পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সব দেশে একশ্রেণির নামকরা বুদ্ধিজীবীদের ভাড়া করেছিল।"
কেন মুসলমানরা জঙ্গি হয় এবার চিন্তা করুন। গাফফার চৌধুরী রীতিমত এই ঘটনার জন্য পশ্চিমাদের দায়ী করে ভিকটিম ব্লেমিং করে নিজ দেশের মুসলিম তরুণদের এই ঘটনায় ফরাসি শিক্ষকের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার বদলে বৈরী করে তুলবেন। এই বুদ্ধিজীবীই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সেক্যুলার বলে দাবী করেন। বঙ্গবন্ধুকে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রধান সেক্যুলার নেতা বলেন। অথচ তুরস্কের খিলাফত ভেঙ্গে যাওয়ার বেদনা মনে মনে পোষণ করেন! ইসলামের জিহাদকে সমর্থন করেন। বলেন খ্রিস্টান বিশ্ব নাকি ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত! যে ভাষায় বাবুনগরী কথা বলে সে ভাষায়, ইসলাম ও মুসলমান প্রসঙ্গ এসে গেলে আমাদের "পোগতিশীল" বাঙালি মুসলমানদের আর আলাদা করা যায় না। গাফফার চৌধুরীর কথায় মোটেই অবাক হইনি। আপনাদেরকে জাস্ট জানালাম আর কি...।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................