দলিতদের উপর বেড়ে চলা অত্যাচারের প্রতিবাদে- উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদে সনাতন ধর্ম ত্যাগ করে, বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করছে ২৩৬ জন বাল্মিকী সম্প্রদায়ের দলিত। ১৯৫৫ সালে ড: বি আর আম্বেদকর স্থাপিত “বুদ্ধিস্ট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া”-র তরফ থেকে তাদের ধর্মান্তরিত হওয়ার সার্টিফিকেট দেওয়া হয়।
গত ১৪ অক্টোবর বুধবার, উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের করহেরা গ্রামে ভারতীয় সংবিধানের জনক ডঃ বি আর আম্বেদকরের বংশধর “বুদ্ধিস্ট সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া”-র সভাপতি রাজরত্ন আম্বেদকরের নেতৃত্বে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের উপস্থিতিতে, ধর্মান্তরিত হয়েছে বলরামপুরের গণধর্ষিতা নিহত দলিত মেয়েটির পরিবার সহ ২৩৬ জন বাল্মিকী সম্প্রদায়ের দলিত।
কয়েকদিন আগে বলরামপুরের সেই দলিত মেয়েটিকে নির্মমভাবে গণধর্ষণ করে হত্যা করেছিল, প্রতিবেশী কয়েকটি মুসলিম যুবক। যেহেতু দলিত মেয়েটি মুসলিম যুবক কর্তৃক ধর্ষিতা হয়ে নিহত হয়েছে, এজন্য কংগ্রেস সহ কোন বামপন্থী বা সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, মেয়েটির পরিবারের পাশে দাঁড়ায়নি। উল্টো উত্তর প্রদেশের শাসক দল বিজেপির স্থানীয় নেতৃবৃন্দ, সমাজপতি ও ধর্মগুরুদের নিয়ে ধর্ষিতা-নিহত মেয়েটির পরিবারটিকে একঘরে করার চেষ্টা চালায়। উল্লেখ্য,বহুল আলোচিত নির্ভায়াকাণ্ড সহ, মুসলমান কর্তৃক ধর্ষিতা প্রতিটি হিন্দু মেয়েদের পরিবারগুলোকে সামাজিকভাবে হেনস্থা করা হয়েছে। অসভ্য বর্বর হিন্দুজাতি, মুসলমান কর্তৃক কোন হিন্দু মেয়ে ধর্ষিতা হওয়াকে অপবিত্র মনে করে; কুসংস্কারাচ্ছন্ন এই হারামি জাতি বিশ্বাস করে, মুসলমান কর্তৃক ধর্ষিত কোন মেয়ের পরিবার যদি সমাজে বসবাস করে, তাহলে সমাজে ঈশ্বরের অভিশাপ নেমে আসতে পারে। পক্ষান্তরে মুসলমান সমাজের যদি কোন মেয়ে, হিন্দু কর্তৃক ধর্ষিতা হতো - তাহলে মুসলমানরা তো দুনিয়াব্যাপী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিতোই- পাশাপাশি বিধর্মী কর্তৃক নির্যাতিতা সেই মেয়েটিকে বিবাহ করা ধর্মীয় কর্তব্য-জ্ঞান করে, বহু মুসলমান বিবাহের প্রস্তাব নিয়ে লাইন ধরতো।
উভয় বঙ্গে ব্রাহ্মণদের সংখ্যা খুবই কম, তদুপরি তারা অর্থ-সম্পদহীন। তবুও সম্ভবত উচ্চ শিক্ষায় এগিয়ে থাকার কারণে,বঙ্গদেশে ব্রাহ্মণদের ঠাকুর বলা হয়। উত্তরপ্রদেশের ব্রাহ্মণরা একদম পাত্তা পায় না। উত্তর ভারতের সামাজিক কর্তৃত্ব ক্ষত্রিয়দের হাতে। এজন্য বিহার - উত্তর প্রদেশ প্রভৃতি অঞ্চলে ক্ষত্রিয়দের ঠাকুর বলা হয়। এই ক্ষত্রিয় ঠাকুরদের অত্যাচারে দলিতরা ধর্মান্তরিত হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের ক্ষত্রিয় রাজপরিবার থেকে উঠে আসা প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং,হিন্দুত্ববাদীদের মোকাবেলায় হিন্দু জাতিকে স্থায়ী ভাবে বিভক্ত ও দুর্বল করে ফেলতে, বর্ণভিত্তিক সংরক্ষণের প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেছিলেন।
উত্তর প্রদেশের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতা যোগী আদিত্যনাথ, ক্ষত্রিয় ঠাকুর সম্প্রদায়ের। দলিতদের রাজনৈতিক দল বহুজন সমাজ পার্টি সহ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের অভিযোগ - যোগী আদিত্যনাথ ক্ষমতায় আসার পর ঠাকুরদের রমরমা বেড়েছে এবং বিভিন্ন পদে ব্রাহ্মণদের অবহেলা করা হয়েছে। শুধু তাই-ই নয়, ‘এনকাউন্টার’-এর নামে 'ঠুকে দেওয়ার’ নীতি নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে যোগী আদিত্যনাথের পুলিশ। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এনকাউন্টার-এর শিকার হয়েছে ব্রাহ্মণেরা।
উত্তর প্রদেশের ব্রাহ্মণ ভোট ব্যাঙ্ক একসময় ছিল কংগ্রেসের দিকে, তারপর চলে যায় দলিত নেত্রী মায়াবতীর দিকে। 'দলিত-মুসলিম-ব্রাহ্মণ' ঐক্যমঞ্চ গঠন করে ক্ষমতায় এসেছিলেন মায়াবতী। কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ৭২ শতাংশ ব্রাহ্মণ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ২০১৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির ব্রাহ্মণ ভোট বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশ-এ।
সম্প্রতি উত্তর ভারতে চন্দ্রশেখর আজাদের- 'ব্রাহ্মণদের খতম' ও 'দলিত-মুসলিম ঐক্য'-এর নতুন আওয়াজ তোলা ভীম আর্মির বাড়বাড়ন্তের ফলে, বিএসপি-র দলিত ভোটব্যাঙ্কে যেমন ধস নেমেছে, একই সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের রাজনৈতিক সমীকরণও বদলে যাচ্ছে। এই সুযোগে পাকিস্তানের এজেন্টরা হিন্দুত্ববাদীদের ঐক্যে ফাটল ধরাতে নানাবিধ ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথা হচ্ছে, হিন্দু সমাজ থেকে যদি এভাবে ধর্মান্তরিত হয়ে লোক চলে যায়, তাহলে ভারতের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানি এজেন্টের হাতে চলে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। তাহলে পাকিস্তানের এজেন্টরা, হিন্দুজাতিকে ভারতের মাটি থেকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। হিন্দুদের ধর্মশাস্ত্র ও ধর্মগুরুদের, সমাজে লোক ধরে থাকার কোন যোগ্যতা নেই, বরং তারা নিজেদের মধ্যে স্বার্থের কোন্দল করে, হিন্দুসমাজ থেকে লোক তাড়াতে সিদ্ধহস্ত। স্বাধীন ভারতের দীর্ঘ ৬০/৬৫ বছরের লাঞ্ছনা শেষে, হিন্দু জাতি যে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, সেই স্বপ্ন ফিকে হয়ে যেতে সময় লাগবে না।
সনাতন সদানন্দ দাশ
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................