মনু কে? আসুন মনু সম্পর্কে জানি।


পুরানে ৭ জন মনুর কথা উল্লেখ আছে। শেষ মনু হচ্ছেন বিবস্বান মনু। তার ভাই বিষ্ণু (দেব)। এই বিবস্বান মনুর কথা গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন। এক মনু থেকে অন্য মনুর সময়কালকে বলে মন্বন্তর।

আমরা দক্ষ রাজার এক কন্যা থেকে নাগ বংশ , অন্য চার কন্যা থেকে গন্ধর্ব এবং অপ্সরা, বিনতা থেকে ‘অরুন’ এবং ‘গারুদ’, তিন কন্যা থেকে দৈত্য, দানব এবং অসুর এই বংশাবলীর কথা জানি, বাকি তিন কন্যা থেকে কোনো বংশাবলীর কথা জানা যায় না। বাকি রইলো এক কন্যা, নাম “অদিতি”।

অদিতির দুই পুত্র। বিবস্বান এবং বিষ্ণু ( দেব)। বিবস্বান ৭ জন মনুর একজন মনু। এই বিবস্বান মনু ‘বারহী’ র ( যার নাম সনাতনী বংশে সর্ব প্রথম আছে) ১৫ প্রজন্মের পুরুষ। তার সময় ৭০০০ থেকে ১০০০০ খ্রীষ্ট পুর্বাব্দ, অর্থ্যাত ৯০০০ থেকে ১২০০০ বছর।

*** ( জানি অনেকে এখন এই নিয়ে আমার মুন্ডপাত করতে বসবেন।কিন্তু আমার হাতে সেই বংশ তালিকায় দেখতে পাচ্ছি)****

বর্তমান পাকিস্তানে বোলান নদীর তীরে ‘মেহেরগড়’ নামে একটি জায়গায় প্রত্নতাত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। পন্ডিতেরাই বলছেন মেহেড়্গড়ের সেই নিদর্শন কম হলেও ১০০০০ বছরের পুরানো।।

*** ( যারা রাহুল সংকৃত্যায়ন নামে এক বামপন্থী লেখকের কথায় নাচেন, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, রাহুল সাংকৃত্যায়ন কি এই কথা জানতেন। তাহলে তিনি ‘ভোলগা থেকে গঙ্গা’ নামে এক বইয়ে আর্য দের বংশ মাত্র ৩৫০০ বছর করতেন না, বই টা আমার কাছে আছে।)******

তৈতরীয় ব্রহ্মন নামে একটি উপনিষদ আছে। ওই উপনিষদের বৈবসত্ব মনুর সময় কাল ৯০০০ থেকে ১২০০০ বছর আগের বলে উল্লেক করা আছে।
এই বৈবসত্ব মনুর সময় মহা প্লাবন হয়। সমস্ত পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্লাবনের কথা বলা আছে। আমাদের পুরানে বলে সেই প্লাবনে বিষ্ণু ‘তার প্রথম অবতার ‘মৎস্য অবতার’ এ বৈবসত্ব মনুকে সৃষ্টিকে বাচাতে সাহায্য করেন , তারা বেদ কে বাচান।

এই বৈবসত্ব মনু র সময়ে একটি শাস্ত্র প্রনয়ন করা হয় । তার আদেশে ভৃগুমুনি ‘মনু সমহিতা’ নামে একটি ‘মানব সমাজের নিয়ম কানুন’ লিপিবদ্ধ করেন।



তার আগে স্যয়ম্ভুব মনুর (প্রথম মনু) সময়ে ‘মানব ধর্ম শাস্ত্র' ‘ নামে একটি শাস্ত্র প্রনয়ন করা হয়। তার সময় আরো অনেক আগে, যার খবর আর নেই। আছে শুধু আমাদের শাস্ত্র।

জ্ঞান তপস্বীরা তাদের ভৌগলিক জ্ঞান দিয়ে এই পৃথিবীর জল স্থল সম্বন্ধে বলেছেন “সপ্ত সিন্ধু”, সপ্ত দ্বীপের কথা এবং সেই সপ্তদীপে সাত জাতির মানুষের কথা। সাতটি মহাসাগর, সাতটি মহাদেশ এবং সাত জাতি তো আমাদের বর্তমান বিজ্ঞানীরাই বলেন। এই সাতটি দ্বীপের একটি দ্বীপ হচ্ছে ‘জম্বু দ্বীপ’, যার মধ্যে পড়ে আমাদের ভারত। যারা পুজো পাঠ করেন তারা জানেন যে পুরোহিত বলেন------ “জম্বু দ্বীপে ভারত খন্ডে” এই কথা টা আছে। আরো আছে সৃষ্টির আদি থেকে সাল গননার কথাও। আছে তিথি নক্ষত্রের কথা।

তা সনাতন শাস্ত্র বলে, এই সাতটি দ্বীপে বিভিন্ন সময়ে সাতটি জাতি সতন্ত্র ভাবে উদ্ভুত (Evolved) হয়েছিলো। প্রত্যেকটি জাতির একজন করে ‘মনু” ছিলেন। তাদের নাম ও উল্লেখ আছে মনু সমহিতায়। তারা হলেন--- স্ব্যয়ম্ভু, স্বারচি, উত্তমি, তামসা, রৈবত, চক্ষুষ, বৈবাষত্ব ।

ভারত জম্বুদ্বীপের অংশ এবং জম্বু দ্বীপের ‘মনু’ র নাম বৈবাষত্ব। তিনি দশ জন প্রশাসক নিযুক্ত করেছিলেন। তাদের নাম—মারীচী, অত্রি, অংগিরা, পুলস্ত্য, পুলহ, ক্রতু , প্রচেতা, বশিষ্ট, ভৃগু এবং নারদ। এরা সবাই ছিলেন সাধক ঋষি।

এই দশ জনের মধ্যে ‘বৈবাষত্ব’ মুখ্যত ভৃগু কে বিশেষ দ্বায়িত্ব দিয়েছিলেন, মনু সমহিতা প্রচার এবং প্রয়োগের জন্য। ভৃগু মুনির দ্বায়িত্বে ছিলো উত্তরে তিব্বত (ভৃগুর মাথা), সমস্ত উত্তর ভারত (ভৃগুর বুক), দক্ষিন ভারত (ভৃগুর পেট) শ্রী লঙ্কা এবং জলের তলায় ডুবে যাওয়া লিমুরিয়া নামক অঞ্চল (ভৃগুর উরু এবং পা্‌) বর্তমান আফগানিস্থান, ইরান ইরাক (ভৃগুর ডান হাত), বার্মা-ব্রহ্ম দেশ, লাওস, থাইল্যান্ড (শ্যাম দেশ), কম্বোডিয়া –কম্বোজ এবং ভিয়েতনাম (চম্পা দেশ) ভৃগুর বাম হাত। ( এই কথা আমি শাস্ত্রে পড়েছি, আমার কথা নয়)

( এই সব দেশে এখনো রামায়ন মহাভারতের নানা নিদর্শন আছে, আমি নিজে দেখে এসেছি, ছবি পোষ্ট করেছি। লাওসে 'রামায়ন' নামে একটি হটেলে ছিলাম, ওই একই নামে একটি মন্দিরের ছবি আমার কাছে আছে। লাওস কিন্তু একটি ক্যমুনিষ্ট দেশ। তারা তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য অস্বীকার করে না, যেমন করেনা ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু আমরা পশ্চিম বঙ্গে করি) ।।

এই সব অঞ্চলে এক সময় সনাতনী সভ্যতা বর্তমান ছিলো।

****************** বৈদিক বংশাবলী শেষ হলে পোষ্ট করবো “মনু সমহিতা” নিয়ে আমার লেখা। তখন আরো বিস্তারিত জানা যাবে)*****

“মনু”
ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted