Courtesy Akbar Hussain
আল-বেরুনীর চোখে দেয়ালীর উৎসব
১০২৬ সালের কথা যখন গজনীর সুলতান মাহমুদ সোমনাথের মন্দির লুণ্ঠন করেন। লুণ্ঠন শেষে এবার ফেরার পালা। রাতের অন্ধকার নেমে আসাতে সুলতান মাহমুদ তার সৈনিকদের তখনকার সৌরাষ্ট্রের এক মাঠে তাবু ফেলে নিশা যাপনের আদেশ দিলেন। রাত গভীর হয়েছে, মেঘমুক্ত ভারতের আকাশ তারায় তারায় খচিত। ক্লান্ত সৈনিকেরা তন্দ্রায় মগ্ন আর সুলতান মাহমুদ তার তাবুতে বসে লুণ্ঠিত সোনাদানার আনন্দে বিভোর। তাবুর বাইরে কয়েকজন প্রহরারত সতর্ক সৈনিক টহলদানে ব্যাস্ত। সেই অভিযানে একজন পণ্ডিতও সুলতানের সাথে ছিলেন যার নাম আল-বেরুনী। ঐতিহাসিকরা তাঁর লেখা থেকে জানতে পারেন যে তিনি বার বার যা মোট সতের বার, সুলতান মাহমুদের ভারত অভিযান ও নিরাপদে ফিরে আসায় অবাক হয়েছিলেন। কেমন এই ভারত যেখানে শত্রু বার বার আঘাত করে অথচ কেউ তাকে প্রতিরোধ করে না? এই বিষয়টি স্বচক্ষে দেখার জন্য সুলতান মাহমুদের সঙ্গী হয়েছিলেন।
সোমনাথ থেকে সেই রাতে ফেরার পথে তিনিও এক তাবুতে বিশ্রামরত ছিলেন। নিশুতি রাতের অন্ধকারে আল-বেরুনী তাবু থেকে বেরিয়ে তারকাখচিত আকাশের নীচে এসে দাঁড়ালেন। লুণ্ঠন শেষ হয়েছে এখন গজনীতে ফিরে যাবার পালা কোথাও কোন উদ্বেগ নেই সব শান্ত আর প্রশান্ত। অন্ধকারে তিনি আবছা আলোয় দূর দিগন্তের পানে তাকিয়ে ছিলেন আর তখনি দেখলেন অনেক দূরে এক দীর্ঘ আলোক রেখা। তিনি ভাবলেন নিশ্চয় ভারতীয়রা আক্রমণ করার জন্য ধেয়ে আসছে। প্রহরারত সৈনিকেরা তা লক্ষ্য করে তাবুতে বিশ্রামরত সুলতানকে এই সংবাদ দিলে তিনি অবিলম্বে ঘোড়সওয়ার পাঠালেন এর সত্যতা নির্ণয়ের জন্য। এদিকে তাবুতে তাবুতে সাজ সাজ রব পড়ে গেল। সৈনিকরা ফিরে এসে সংবাদ দিল এটা কোন আক্রমণকারী সেনাদল নয়, আজ ভারতীয়দের দেয়ালির উৎসব আর তাই এই দীর্ঘ আলোর শোভাযাত্রা।
সুলতান তাবুতে ফিরে গেলেন আর সৈনিকেরা পুনরায় নিদ্রায় গেলে আল-বেরুনী একা খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে রইলেন। অবাক হয়ে ভাবলেন, এ কেমন জাতি যখন দেশ শত্রু কবলিত আর লুণ্ঠিত তখনো এরা আলোর উৎসবে রত? এরা আলোকে এতো ভালোবাসে?
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................