ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তা ধরণ ধারণ সভ্য সমাজের জন্য অমানবিক, অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট।
গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ (১৩৯০-১৪১০ খ্রি:) ভারতবর্ষে সর্বপ্রথম তার শাসনকার্যে স্থানীয় হিন্দুদের নিয়োগ দান করেছিলেন। কিন্তু শুরুতেই প্রবল বিরোধীতার শিকার হতে হলো সুলতানকে। সুফি দরবেশ মাওলানা মুজফর শামস বলখি সুলতানকে চিঠি লিখে জানালেন, সুলতান এই নিয়োগ দ্বারা সরাসরি কুরআন-সুন্নাহ ও বিভিন্ন শাস্ত্রীয় আইনকে অমান্য করেছেন। কাফেরদের ছোটখাটো কাজে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু শাসনকার্যে তাদের নিয়োগ ঘোরতোর ইসলাম বিরোধী কাজ। ইসলাম কোনো কাফেরকে রাষ্ট্রীয় কাজে যোগ্য বা সমান মনে করে না।…
ইসলামে যাদের সবচেয়ে উদার সহিষ্ণু বলে মনে করা হয় সেই সুফিবাদীদের অন্যতম শামস বলখি হিন্দুদের নিয়োগে চটে গিয়েছিলেন কারণ এটি ইসলামী রাষ্ট্রের খেলাফ। ইসলাম পালন ও ইসলামী রাষ্ট্র দুটো ভিন্ন জিনিস। ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তা কেমন আগে সেটা জানুন। ইসলাম মতে শাসন ক্ষমতা শুধুমাত্র মুসলমানদের হাতে থাকবে। রাষ্ট্র হবে মুসলমানদের। মুসলমানদের এই রাষ্ট্রে কোন মুশরিকের স্থান হবে না। মুশরিক হচ্ছে যারা পৌত্তলিক। এদের জিজিয়া কর দিয়েও ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করার সুযোগ নেই। তবে বেত্রিক্রমও আছে। মদিনায় একটি পৌত্তলিক গোত্রকে প্রফেট মুহাম্মদ জিজিয়া কর নিয়ে বসবাস করতে অনুমতি দিয়েছিলেন। এরকম বেতিক্রম বাদে শুধুমাত্র আহলে কিতাব (যে নবীদের ইসলাম স্বীকার করেছে) যেমন ইহুদী খ্রিস্টানরা জিজিয়া কর দিয়ে মুসলমানদের দেশে বসবাস করতে পারবে। ইসলামী রাষ্ট্র চলবে কুরআন ও হাদিসের আইনে। প্রথম খলিফা আবু বকর থেকে শুরু করে সকলেই কুরআন থেকে রেফারেন্স নিয়ে আইন তৈরি করতেন। ইসলামী রাষ্ট্রে মুসলমান হওয়া কোন শর্ত নয়, ইমাম শাফেঈ বলেন, শাসক মুসলমান হতে হবে এবং শাসনকার্য ইসলামী আইনে পরিচালিত হতে হবে।
এই রাজনৈতিক ইসলামকেই ফ্রান্স চিরতরে বন্ধ করতে চাইছে। তারা চাইছে ইসলাম থাকবে অন্যান্য ধর্মের মত ব্যক্তির ধর্মাচারনে। যেমন নামাজ রোজা করার মধ্যে সীমিত। ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তাকে ফলো করলে আপনাকে বিশ্বাস করতে হবে ফ্রান্সের শাসন থাকবে মুসলমানদের হাতে। সেখানে খ্রিস্টান ইহুদীরা জিজিয়া কর দিয়ে বাস করতে পারবে। কিন্তু সমস্ত আইন হবে কুরআন সুন্নাহ অনুযায়ী। শাসনকার্যে কোন খ্রিস্টান ইহুদীকে নিয়োগ দেয়া যাবে না। বলুন তো এরকম ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রচিন্তা যতদিন পর্যন্ত পৃথিবীতে বজায় থাকবে ততদিন পর্যন্ত কোন মুসলমান কি গণতান্ত্রিক সেক্যুলার রাষ্ট্র সমাজে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে? কত পার্সেন্ট মুসলমান এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা মেনে চলে সেই বিতর্কে না গিয়ে কতজন এই রাজনৈতিক ইসলাম সম্পর্কে সচেতন ও কায়েমের স্বপ্ন দেখে সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
এবার চিন্তা করুন, সমগ্র বিশ্ব আজকে রাজনৈতিক ইসলামের সূত্র অনুসন্ধান করছে। এই অনুসন্ধান করে তারা ইসলাম ধর্মকেই খুঁজে পেয়েছে। তাওরাত কিংবা আমেরিকার পেন্টাগনের লেখা কোন বই থেকে রাজনৈতিক ইসলামকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে কারণে সারা বিশ্বে মাদ্রাসা মসজিদের উপর সবার নজর পড়েছে। বামপন্থিদের এতদিনকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদকে জঙ্গিবাদের জন্য দায়ী করার বয়ান যে ফ্রান্স অস্ট্রিয়া বেলজিয়াম আর কানে তুলবে না সেটা পরিস্কার। এমনকি খোদ মুসলিম দেশগুলোও যে এসবের পিছনে ইহুদীদের ষড়যন্ত্র মনে মনে বিশ্বাস করে না তার প্রমাণ মাদ্রাসা মসজিদের উপর নজরদারী। এখন কি অবস্থা হবে ভেবেছেন? যদি ফ্রান্সের সরকার প্রজাতন্ত্রের মূলবোধ মান্য করতে মসলমানদের ১৫ দিন সময় বেধে দিতে পারে, মাদ্রাসা মসজিদে বিদেশ থেকে টাকা আসা বন্ধ করতে পারে, মাদ্রাসা শিক্ষা বাতিল করতে পারে তাহলে ভারতে দেওবন্ধ মাদ্রাসা কি করে চালু থাকবে? যে রাজনৈতিক ইসলামকে নিয়ন্ত্রণ করতে ইউরোপ বদ্ধপরিকর সেখানে ভারতে কেন উপমহাদেশের মাদ্রাসা শিক্ষার মূলকেন্দ্র থাকবে? রাজনৈতিক ইসলাম দোকানে কিনতে পাওয় যায় না। রাজনৈতিক ইসলাম ইসলাম ধর্মেরই অংশ। ইসলামের রাষ্ট্রচিন্তা ধরণ ধারণ সভ্য সমাজের জন্য অমানবিক, অগণতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট। এগুলো বন্ধ করতেই ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, বেলজিয়ামের আইন হচ্ছে। আর ভারতের মসজিদে মসজিদে তাবলীগ জামাতের ঘাঁটি। মোদি অমিত শাহ না হয় হিন্দুত্ববাদী গোটা ইউরোপ যখন রাজনৈতিক ইসলাম নির্মূল করবে তখন তাদের কি বলবেন? জাল কিন্তু ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে। ইসলাম বিদ্বেষ আর মুসলিমফোবিয়া বললে সামনে লোকে হাসবে!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................