শান্তিপুত্রদের ভাবানুভুতি আহত হওয়ার বিষয়টা আমার বেশ মজার লাগে। বিশেষত উপমহাদেশের ক্ষেত্রে।
এনারা নিজেরা প্রতিনিয়ত হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ সবাইকে কটুক্তি করে চলেছেন, তখন সেগুলো সহী কাজ। কিন্তু সেই একই কাজ যদি তাদের ক্ষেত্রে হয় তখন এনারা "প্রতিবাদে ফেটে" পড়েন।
অবশ্য এটা আলাদা কথা যে বাংলাদেশের মতো দেশের ক্ষেত্রে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই অবমাননার পিছনে কোন শান্তি পুত্রই আছে। কিন্তু ততোক্ষনে ধার্মিকরা সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরদোর পুড়িয়ে, তাদের মেয়েদের ধর্ষন করে, পুরুষদের খুন করে নিজেদের জহ্নতে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় কড়ি যোগাড় করে ফেলেন।
তবে এই ফেটে ফুটে যাওয়াটা বেশ সিলেক্টিভ। যেমন চীনে মসজিদকে পাবলিক টয়লেট বানানো হলেও তখন এনারা চুপ। কিন্তু ফ্রান্সে যদি কেউ কার্টুনও আঁকে তখন এনারা প্রতিবাদে ফেটে পড়বেন।
আসলে উপমহাদেশের ৯৯.৯ শতাংশ মুসলিমই ধর্মান্তরিত। বলাই বাহুল্য এরা কেউই অনুপ্রানিত হয়ে ধর্মান্তরিত হয়নি। অধিকাংশই ভয়ে এবং ধান্দায় হয়েছে। ফলে সেই ভীরুতা এবং ধান্দাবাজি এদের জিনে মিশে গেছে। সেই কারনেই এরা শক্তের ভক্ত, নরমের যম। তাই চীনে যাই হয়ে যাক সে নিয়ে এনারা ব্যথিত হবেননা। কিন্তু ফ্রান্স যদি নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য রক্ষা করতে চায় তখন এরাই ফেটে ফুটে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে পড়বেন। কাল যদি আবার ফ্রান্স উল্টো চাপ দেয় তখন আবার এরা ফ্রান্সে কিছু হলে দেখেও দেখতে পাবেননা।
বাংলাদেশের মূল আয় পোষাকের রপ্তানি থেকে। পৃথিবীর বড় বড় ব্র্যান্ডের পোষাক বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হয়ে রপ্তানি হয়। এই বিনিয়োগের একটা বেশ মোটা অংশ ফ্রান্স করে। এখন যদি কাল ফ্রান্স বলে তারা বাংলাদেশে আর বিনিয়োগ করবেনা, দেখবেন তখনই এইসব হুজুররা আর ফ্রান্স নিয়ে টু শব্দটিও করছেনা।
সহিষ্ণুতার যে সংজ্ঞা ভারতীর দর্শনে ছিল, সেই সংজ্ঞাকে পালটে সহিষ্ণুতার অর্থকে তোষামোদে পরিণত করার দায় পূর্ব ইউরোপ বাদে বাকী ইউরোপের। এরাই এক সময় এশিয়াতে, বিশেষত ভারতে খৃষ্টান ধর্ম প্রচারের স্বার্থে এই ধর্মীয় মৌলবাদকে সহানুভূতি দেখিয়ে তোল্লাই দিয়েছে এবং এখনও দিয়ে চলেছে। ফলত বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইডেন, ডেনমার্কের মতো দেশগুলোর ভূমিপুত্ররাই এখন বিপন্ন হতে শুরু করেছেন। ফ্রান্সের সরকার এখন মৌলবাদের বিরোধিতা করছে কারন নাহলে সেদেশের রাজনীতিতেও ফার রাইটদের উত্থান ঘটবে। যা শাসকের জন্য বিপদ সঙ্কেত। তাই রাজনীতির স্বার্থেই সেদেশের সরকার নিজেই এখন ফার রাইট স্ট্যান্ড নিতে চাইছে। কারন তারা বুঝেছে অতিরিক্ত সহিষ্ণুতা দেখাতে গিয়ে পরিস্থিতি তাদের হাতের বাইরে চলে গেছে।
ফ্রান্সের সরকারের এই অবস্থান, সৌদির ফ্রান্সকে সমর্থন পুরোটাই রাজনীতি। তবে ভালো বিষয় হচ্ছে যে রাজনৈতিক দলগুলি এই অবস্থান নিতে বাধ্য হচ্ছে মানুষের অবস্থানের কারনে। মানুষ বিপদ বুঝছে। ঠিক যেমন ভারতেও এখন ফেজ টুপি পরে গদ্গদ ভঙ্গীতে ইফতারে হাজিরা দেওয়া নেতানেত্রীরাও নিজেদের হিন্দুত্বের প্রমান দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
একসময় ছিল যখন আমেরিকা ভারতে সন্ত্রাসবাদী হানার পেছনের ধর্মীয় কারনকে অস্বীকার করে বলত, সবই আইন শৃঙ্খলার সমস্যা। তারপরে ৯/১১ ঘটল এবং আমেরিকার অবস্থান পরিবর্তন হোল। অদূর ভবিষ্যতে ইউরোপও বাধ্য হবে একই ভাবে অবস্থান পরিবর্তন করতে। তাই আজ যা ফ্রান্সে হচ্ছে, আগামীতে তা ভারতের মঙ্গলই করবে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................