সঞ্জীব চৌধুরীর জীবনের শেষে কয়েকটি বছর আমার কাছে একটি অমিমাংসিত অধ্যায়। তার গাওয়া ও লেখা অসাধারণ গানগুলো আজো প্রতিদিনের শোনা গানগুলোর মাঝে অন্যতম। যেমন সুমন চট্টপাধ্যায়ের গান (কবীর সুমনের নয়) গানগুলো আজো আমাকে মুগ্ধ করে। কিন্তু কবীর সুমনে বদলে যাওয়া নিছকই নাম পরিবর্তন নয়। এ হচ্ছে দর্শনগতভাবে বদলে যাওয়া। আমি জানি না সঞ্জীব চৌধুরী বেঁচে থাকলে তার পরবর্তী গানগুলো কেমন হত? কিংবা আদৌ গান করতেন?
আমার অমিমাংসিত যে প্রশ্নটি তাঁকে ঘিড়ে- মৃত্যুর কয়েক বছর আগে তিনি হিযবুত তাহরীর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যাতায়াত করতেন। এই ইসলামিক সংগঠনের কার্যক্রমের তিনি প্রশংসা করতেন। খবরের কাগজে তখন লেখা হয়েছিলো একজন প্রগতিশীল শিল্পী ও সাংবাদিক হিসেবে সঞ্জীব চৌধুরীর এই ধরণের প্রশংসা খুব আশ্চর্যের কারণ সংগঠনটি ইসলামিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে।
সঞ্জীব চৌধুরী ছাত্র জীবনে ছাত্র ইউনিয়ন করতেন। তিনি হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসলেও ধর্মকর্ম পালন করতেন না। তবে ঈশ্বরে সম্ভবত এক ধরণের বিশ্বাস ছিলো। যদি তার গানকে ধরি তাহলে গানে যেমন বলেছেন, 'এমন মেয়ে কেমন করে বানালে ঈশ্বর… ইত্যাদি। তবে এটা তার ঈশ্বর বিশ্বাসের কোন জোড়ালো প্রমাণ নয় অবশ্যই। কারণ কবিতায় গানে বহু নাস্তিক কবিই ভাব চিত্রকল্প তৈরি করতে এমনটা করে থাকেন। তবে সঞ্জীব চৌধুরী ফরহাদ মজহারের লেখা একটি গান গেয়েছিলেন। গানটির শিরোনাম ‘এই নষ্ট শহরে’। ফরহাদ মজহার নিজেই একটি নষ্ট মানুষ। বামপন্থি থেকে তিনি ইসলামিক বামপন্থি হয়েছেন। আমি জানি না ফরহাদ মজহারের সঙ্গে সঞ্জীব চৌধুরীর আদর্শগত মিল কতখানি ছিলো। যা-ই হোক, এসব কোন কিছুই আসলে প্রমাণ হয় না কিছুই। সে জন্যই অমিমাংসিত থেকে গেলো সত্যিই সঞ্জীব চৌধুরী হিযবুত তাহরীরের প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়েছিলেন?
সঞ্জীব চৌধুরী বেঁচে থাকবেন তার অনন্য সাধারণ গানগুলির জন্য। তাঁর মৃত্যু দিবসে আসুন তার গান শুনি -
"মেয়ে তুমি এভাবে তাকালে কেন ।।
এমন মেয়ে কি করে বানালে ঈশ্বর
বুঝিনা এমন মেয়ে কি করে বানালে ঈশ্বর
শহরে এসেছে এক নতুন পাগল ।।
ধর তাকে ধরে ফেল এখনই সময়
বলি ধর তাকে ধরে ফেল এখনই সময়
পাগল রাগ করে চলে যাবে খুঁজেও পাবেনা
পাগল কষ্ট চেপে চলে যাবে ফিরেও আসবে না
মেয়ে আমাকে ফেরাও
আমাকে অন্ধ করে দিয়েছিল চাঁদ…"
[এই গানটি সঞ্জীব চৌধুরী জয়া আহসানকে নিয়ে লিখেছিলেন বলে কথিত আছে ]
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................