ডয়চে ভেলে আজকে তাদের নিউজে প্রশ্ন করেছে, 'সকলের সব উৎসবে সামিল কলকাতার মানুষ৷ সম্প্রীতির এমন উদাহরণ বাংলাদেশে কতোটা আছে?'
ব্যস, তারপরই শুরু হয়ে গেলো কমেন্ট জিহাদ! কমেন্টকারীদের কথা আর আস্ফালন থেকে অবশ্য বাংলাদেশের সম্প্রীতির চিত্র পরিস্কার হয়েছে! ডয়চে ভেলের সাংবাদিককে জুতার বাড়ি দিয়ে সাংবাদিকতা শেখানোর সংকল্প জানিয়ে সবার এক কথা, বাংলাদেশ হচ্ছে সারাবিশ্বের মধ্যে একমাত্র অসাম্প্রদায়িক দেশ! এখানে হিন্দুরা তাদের পুজা করতে পারে। আর ভারতে গরুর মাংস খাওয়ার জন্য মুসলমানদের পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। মুসলমানরা অমুসলিমদের অনুষ্ঠান করতে দেয় কারণ এটা ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের অনুষ্ঠানে মুসলমানদের যোগ দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। তাদের আমরা নিরাপত্তা দেই মানে এটা না তাদের উৎসব আমাদের হয়ে গেছে। ...
শত শত এরকম সাধারণ মুসলমানদের কমেন্ট পড়লে বাংলাদেশের এখনকার অবস্থা বুঝা যায়। তবে এরা বাদেও বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর লোকজনের কথাবার্তা শুনেই আসলে প্রকৃত অর্থে বুঝতে পারি ইসলামী শক্তি বাংলাদেশে সন্নিকটে। বাংলাদেশের জন্য অবশ্য একবার এটা দরকার। আগের বার পাকিস্তান করার খেসারত দিয়েছিল। তাতে শিক্ষা হয়নি কারণ সেবার যশোর রোডে বেশিদিন থাকতে হয়নি। আবার যে এই রাস্তা ধরে আসতে হবে না সেই গ্যারান্টি কি সত্যি আছে?
‘উগ্র ধার্মীক আর উগ্র নাস্তিক দুটোই সমান খারাপ’ বলা লোকজনরাই দেশে ইসলাম কায়েম হলে যশোর রোড দিয়ে সবার আগে ভারত পালাবে। দেশে যখন সংখ্যালঘু নির্যাতনের শিকার হয় তারা তখন ‘ইন্ডিয়াতেও মুসলমান নির্যাতন হয়’ ‘এগুলো বিজেপির এজেন্টদের কাজ বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র বানাতে পারলে তাদের লাভ’ ইত্যাদি তত্ত্ব কপচিয়ে তারাই ভারতে সুবিধাজনক আশ্রয় নিবে। হিন্দুত্ববাদীদের জন্য মুসলমানরা ভারতে আজান দিতে পারে না, গরুর মাংস খেতে পারে না তবু ভারত হচ্ছে তাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা! এ পাড় থেকে দৌড়ানি খেলেই সোজা ভারত!
৭১-এ আনন্দ পাবলিকেশনের অফিসে বসে বসে যারা ফ্রি চা খেত আর বিড়ি ফুঁকত তারাও সবাই ভারত বিরোধী, 'ভারতের স্পাইয়ে পাকিস্তান ভরে' গেছে তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলো। তাদের মতে পশ্চিম বঙ্গের বাঙালিরা হচ্ছে ভারতে পরাধীন। সেই পরাধীন পশ্চিমবঙ্গের নাগরিকত্ব নিতে চেয়েছিলেন আহমদ ছফা, মাওলানা ভাসানীও!
৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের একটা ছবিতে যে টোকাই শিশুটিকে মিছিলের অগ্রভাগে বজ্রমুষ্টিতে দেখা যায় তারা কিন্তু পাকিস্তান আমলে যেমন ছিলো বাংলাদেশ আমলেও তাই থেকে গিয়েছিলো। তারাই পরাধীন আর শোষিত। ইসলাম শাস্তির ধর্ম কিনা এটা তাদের জীবনে কোন প্রভাব ফেলে না। এমনকি ভারত তাদের শত্রু কিনা তারা সেটাও জানে না। ভারতেরটা খায়ও না পরেও না। আনন্দ পুরস্কারের লোভও তাদের নেই। দুই পাড়েই তারা পরাধীন।
বাংলাদেশকে নাকি উগ্র ধর্মান্ধদের দেশ প্রমাণ করতে ষড়যন্ত্র চলছে। সাম্প্রতিক হেফাজত ইসলাম ও চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলনের হুংকার আস্ফলোন বেড়ে যাওয়াটা নাকি একটা ষড়যন্ত্র! বাংলাদেশকে মৌলবাদী রাষ্ট্র প্রমাণ করার! মানে উনারা এদেশে মৌলবাদের অস্তিত্ব বিশ্বাস করেন না! ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশকে মৌলবাদী প্রমাণ করতে মোদি অমিত শাহ এমনকি আমেরিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত দায়ী। ফ্রান্সের ইসলাম বিরোধীতাও এসবের পিছনে কলকাঠি নাড়ছে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এইসব শিক্ষক বুদ্ধিজীবীরা সবার আগে আনন্দ পাবলিকেশনের অফিসে কফির পেয়ালা হাতে খোশ গল্পে মশগুল থাকবে। দীর্ঘ মেয়াদী তালেবানী শাসন চললে ভারতে নাগরিত্ব নেয়ার চেষ্টা এরাই সবার আগে করবে।
আরে ভাই সব সত্য বলতে নেই। তাতে নিরপেক্ষতা হারাতে হয়! লোকজন এসব লেখা পছন্দ করে না। দেশপ্রেমের অর্থ হচ্ছে বালু দিয়ে গু ঢেকে রাখতে হবে! আবার যশোর রোড দিয়ে যে ভারতে পালাতে হবে সেকথা ২০১৩ সালেও লিখেছি। আজো বলি, এটা ঘটবে এবং ইসলামিস্টদের ভয়ে সবাই পালাবে। যারা ইসলামেও আছি জিরাফেও আছি লাইফ স্টাইলে আছেন সবার আগে তারাই পালাবেন। আমার ফ্রেন্ড লিস্টে মিডিয়ার সেলেব্রিটিদের অনেকেই আসেন। ছয় মাসে বেশি কেউ টেকেন না। কোন তারকাকেই আমি জীবনে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই না। উনারাই পাঠান। লাক্স তারকা, ফেয়ার এন্ড লাভলী তারকা, জনি প্রিন্ট শাড়ি তারকা…। তারা হয়ত আমার একটি লেখা পড়েই রিকু পাঠান। যে কারণে আমার লেখালেখি সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ ধারনা পান না। যদি পেতেন তাহলে আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতেন না। পরে আমার এই লেবেলের লেখালেখি দেখে আনফ্রেন্ড করে চলে যান। তাদের সকলের সঙ্গে কোন এক সকালবেলা কোলকাতায় গরম গরম কফি খাবার অগ্রিম নিমন্ত্রণ রইল! যারা বাংলাদেশে মৌলবাদের বিরোধিতা করার কারণে আমাকে আরএসএস বিজেপির এজেন্ট বলেছে তারাও যশোর রোডের এপাড়ে এসে আমার সঙ্গে গরুর মাংস দিয়ে একদিন ভাত খেয়ে যাবেন। মানে তখন যখন মাদ্রাসার শাসন শুরু হবে...
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................