✍দেবল দেব বাসু
১১৯৪ সালে মহম্মদ ঘোরী কুতুব উদ্দিন আইবককে সঙ্গে নিয়ে রাজা জয়চাঁদের বিরুদ্ধে বেনারস অভিযানে যাত্রা করলেন, পথে তাঁরা কোলা নামে একটি স্থান দখল করেন এবং লুঠপাট চালান। তারপর জয়চাঁদের সাথে কুতুবের যুদ্ধ হয় এবং জয়চাঁদ পরাজিত হলে কুতুব বেনারস দখল করেন।
হাসান নিজাম তাঁর তাজ-উল-মাসির গ্রন্থে লিখেছেন, “তাঁর তরবারির ধার সমস্ত হিন্দুকে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করল, তাদের কাটামুণ্ড দিয়ে আকাশ সমান উঁচু তিনখানা বুরুজ নির্মাণ করা হল এবং দেহগুলো বন্য পশুর খাদ্যে পরিণত হল।”
এই প্রসঙ্গে মিনহাজ উদ্দিন তাঁর তাবাকত-ই-নাসিরি গ্রন্থে লিখেছেন, “তাদের মধ্যে জ্ঞানী ও বুদ্ধিমান লোকেরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল এবং যারা সনাতন ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানাল তাদের সবাইকে হত্যা করা হল।”
বেনারস থেকে কুতুবুদ্দিন ১ হাজার ঘোড়সওয়ার বিশিষ্ট এক বাহিনী নিয়ে কাশীর দিকে রওনা হলেন এবং পথে অসনি দুর্গ অধিকার করে লুঠপাট চালালেন।
এ প্রসঙ্গে মিনহাজ লিখেছেন, “সেখানে এত লুঠের মাল পাওয়া গেল যে তা দেখতে দেখতে দর্শনকারীদের দুচোখ ক্লান্ত হয়ে পড়ল।”
কাশী দখল করে কুতুব মুসলমানদের আদেশ দিলেন সমস্ত হিন্দু মন্দির ধ্বংস করতে, এ প্রসঙ্গে মিনহাজ লিখেছেন, “তারা প্রায় এক হাজার মন্দির ধ্বংস করল এবং সেই সব মন্দিরের ভিতের উপর মসজিদ নির্মান করল।"
এরপর কুতুব গেলেন আজমীরে।
সেখানকার ধ্বংসলীলা বর্ণনা করে মিনহাজ লিখেছেন, “সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হল, বিদ্রোহের পথ বন্ধ হল, বিধর্মী কাফেরদের প্রাধান্য রুদ্ধ হল, মূর্তিপূজার সমস্ত প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ মন্দির নির্মমভাবে ধ্বংস করা হল।”
এরপর কুতুব ১১৯৬ সালে গোয়ালিয়র দুর্গ আক্রমণ করেন, সেই প্রসঙ্গে মিনহাজ লিখেছেন, “কোরানে বর্ণিত পবিত্র জিহাদের বাণী অনুসরণ করে তারা তাদের রক্ত পিপাসু ইসলামের তরবারী খাপ থেকে বের করে ধর্মের শত্রু অর্থাৎ হিন্দুদের সামনে তুলে ধরল।”
এই একই ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে হাসান নিজামী তাঁর তাজ-উল-মাসির গ্রন্থে লিখেছেন, “ইসলামের সেনারা সম্পূর্ণভাবে বিজয়ী হল এবং ১ লক্ষ কাফের হিন্দুকে তৎক্ষনাৎ নরকের আগুনে পাঠিয়ে দেওয়া হল। সে মূর্তি পূজার সমস্ত কেন্দ্র ও প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করল এবং সেখানে ইসলামের নিদর্শন স্বরূপ মসজিদ ও মাদ্রাসা নির্মান করল।”
১১৯৭ সালে কুতুব ও ঘোরী গুজরাট অভিযানে বের হলেন এবং পথে নাহরওয়ালা দুর্গ আক্রমণ করলেন। মাউন্ট আবুর এক গিরিপথে রাজা করণ সিং ও মুসলমানদের মধ্যে যুদ্ধ হল।
এই যু্দ্ধ সম্পর্কে মিনহাজ লিখেছেন, “প্রায় ৫০ হাজার বিধর্মী কাফেরকে তরবারির সাহা্য্যে নরকের আগুনে নিক্ষেপ করা হল এবং তাদের শবদেহের স্তুপ পাহাড়ের সমান উঁচু হয়ে গেল। ২০ হাজারেরও বেশি ক্রীতদাস, কুড়িটি হাতি সহ এত লুটের মাল বিজয়ীদের হাতে এল যা কেউ কল্পনাও করতে পারে নি।”
ঘোরী ভারত অভিযানের শেষে আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়ার আগে কুতুবকে তাঁর বিজিত অঞ্চলের শাসনকর্তা নিয়োগ করে গেলেন। ১২০৬ সালে ঘোরীর মৃত্যু হলে কুতুব নিজেকে দিল্লীর সুলতান ঘোষণা করেন।
একটু পুরোনো কিছু কথা মনে করিয়ে দিলাম আর কি!
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................