বিষাদ সিন্ধু
ইরাকের শাসনকর্তা হাজ্জাজের সিংহাসন আরোহন ভারতে ইসলামিক শক্তির আক্রমণের পথ সুবিন্যস্ত করে দেয়, প্রকৃতপক্ষে ভারতের বিশেষত সিন্ধুর উপর আক্রমই এখানে প্রধান আলোচ্য বিষয়... হাজ্জাজ সিন্ধু অভিযান কেন করেছিলেন?? এ প্রসঙ্গে একটি কাহিনী প্রচলিত আছে ||.শোনা যায় "সিংহলের শাসনকর্তা দুটি জাহাজে খলিফা ও হাজ্জাজের জন্য কিছু উপঢৌকন প্রেরণ করেন, দেবল বন্দরের নিকটবর্তী সমুদ্র তীরে এই জাহাজ দুটি জলদস্যু দ্বারা লুন্ঠিত হয়... হাজ্জাজ এই লুন্ঠনের জন্য সিন্ধু দেশের হিন্দু রাজা দাহির কে দায়ী করেন.... যেহেতু দেবল রাজা দাহিরের শাসনাধীন ছিল.. হাজ্জাজ ক্ষতিপূরণ বাবদ একটি বিশাল অঙ্কের ধনরত্ন দাবি করেন.... দাহির কিন্তু এই ক্ষতিপূরণ দিতে সরাসরি অস্বীকার করেন.. ||
অবশেষে অনুমতি দিলেন খলিফা, হাজ্জাজ একটি 4000সৈন্যের অভিযান প্রেরণ করলেন সিন্ধু দেশে, কিন্তু ডাকাত ও স্থানীয় রাজাদের গেরিলা আক্রমণে নিশ্চিন্হ হয়ে যায় ওই সৈন্যবহর.... পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া আল্ হাজ্জাজ অবশেষে দ্বায়িত্ব দিলেন রণদুর্মদ সেনাপতি বিন কাশিম কে..... কাশিম সঙ্গে নিলেন 6000সিরিয়ান ও ইরাকি যোদ্ধা, সম সংখ্যাক উষ্ঠ্র বাহিনী ও 1200 পারসিক তীরন্দাজ.. বিনাকাশিম মাকরান পৌঁছালে তার সঙ্গে যোগ দেন মুহাহামদ হারুন.. অবশ্য দাহিরের বিপক্ষে বিনকাশিম শিবিরে যোগ দিয়েছিলো কিছু স্থানীয় জাট, ও মেড় দের একাংশ...
এবার আসি বিন কাশিমের সঙ্গে আগত আল্ মাদানীর যুদ্ধ বর্ণনায় -"কাশিম ও হারুনের মিলিত বাহিনী প্রথম পর্যায় 4000নগর রক্ষক কে হত্যা করলো, ধর্মান্তরে অনিচ্ছুক 17 বছরের অধিক সকল পুরুষ কে হত্যা করা হোলো. তিন দিন ধরে চলে দেবল নগর লুন্ঠন, লুন্ঠিত সামগ্রীর এক-পঞ্চমাংশ ও 75 জন রমণী হাজ্জাজের কাছে প্রেরণ করা হয়.. "
বিনকাশিম এবার সিদ্ধান্ত নিলেন দাহিরের রাজধানী ব্রাহ্মণাবাদ আক্রমণের, ব্রাহ্মণাবাদ একটি দুর্ভেদ্য দুর্গ, কথিত আছে কিছু অভিজাত কাশিম কে সাহায্য করে দুর্গের ফটক গুলো চিহ্নিত করতে.. যাইহোক কাশিম দুর্গ এর ফটক ভাঙতে ব্যর্থ হন,, অন্য দিকে দাহির ও প্রস্তুত একটি হস্তীবাহিনী ও প্রায় 8000সেনার পদাতিক বাহিনী নিয়ে,, -"আল্ মাদীনী বর্ণনা করেছেন "মুসলিম তীরন্দাজ রা তীরের অগ্র ভাগে ন্যাপথা জড়ানো কাপড়ে আগুন লাগিয়ে নগরের অভ্যন্তরে নিক্ষেপ করে, ফলে শীঘ্র রাজধানী জতুগৃহে পরিণত হয়,, কাঠের গেট গুলো ভেঙে পরে.. দাহির প্রচন্ড বিক্রমে হস্তী বাহিনী নিয়ে সংহার করতে থাকে কাশিম বাহিনী কে.. কিন্তু হস্তী পৃষ্ঠে অবস্থান কারী হাওয়াদায় আগুন লেগে গেলে দাহির, আগুন নেভানোর জন্য রণক্ষেত্র থেকে সরে পড়েন..পুনরায় তিনি ফিরে আসেন, মুসলিম সেনারা ভয়ে পালাতে থাকে.. কিন্ত সহসা একটি তীর দাহির কে বিদ্ধ করে, তিনি হাতি থেকে পরে যান... এর পর এক ইরাকি সৈন্য ছুটে এসে দাহিরের শিরোচ্ছেদ করে..
রাজার মৃত্যু তে ছত্র ভঙ্গ হয়ে যায়, সিন্ধু বাহিনী. যুদ্ধের পরিণতি স্বরূপ নির্বিচারে হত্যা লীলা শুরু হয়, ধুলুন্ঠিত হয় দেবালয়,, অট্টালিকা "..
দাহির মহিষী রানী বাই ছিলেন অসাধারণ বীরাঙ্গনা. চাচনামা উল্লেখ করেছে -"রানী অবশিষ্ঠ 10000সৈন্য নিয়ে বীর বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পরে মুসলিম সেনা বাহিনীর উপর, কিন্তু শত্রুর তীরন্দাজ দের সামনে দাঁড়াতে পারেনি অবশিষ্ট সেনা, বাধ্য হয়ে রানী সমস্ত পুর ললনা দের সমবেত করে, একটি গৃহে প্রবেশ করলেন, এবং অনুষ্ঠিত হোলো "মুসলিম আক্রমণের কারণে প্রথম জোহরব্রত "...
বিনকাশিম সিন্ধু দখল করলেন, আত্ম সমর্থন কারী দের কি করা হবে, তা জানার জন্য পত্র লিখলেন হাজ্জাজ কে,, উত্তরে এলো "হয় ইসলাম, নয় মৃত্যু.. কিন্তু রাজার আত্মীয় দের সবাইকে যেন হত্যা করা হয়, তুমি যদি ওদের বাঁচিয়ে রাখো তাহলে ওরা আবার শক্তি সংগ্রহ করতে পারে "হাজ্জাজের নির্দেশ মত কাজ হোলো.. ফেরেস্তা বর্ণনা করেছেন "ব্রাহ্মণবাদের সমস্ত মন্দির গুলি ধ্বংস করা হয়, কিছু বৃহৎ মন্দির গুলি মসজিদে রূপান্তরিত হয়, সেখানে প্রত্যহ সকালসন্ধ্যা সালাত এর ব্যবস্থা করা হয়.. "..
কাশিম প্রেরণ করেন উপঢৌকন হিসাবে হাজ্জাজ কে তার একটা বিবরণ দেওয়া যাক -"প্রথমে রাজা দাহিরের ছিন্ন শির একটি রেশম বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত করে পাঠানো হয়, সাত দিন পর 230 মণ সোনা, 40টি বৃহৎ কলস ভর্তি রত্ন সামগ্রী, একটি জাহাজ ভর্তি দামি পোশাক ও হস্তী দন্ত নির্মিত সামগ্রী ".
মীর মাসুম ফুতুহ ই বুলদান গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন "খলিফার জন্য দাহিরের অতি সুন্দরী দুই কন্যা সুরোজ দেবী ও পারমল দেবী কে ভেট হিসাবে প্রেরণ করা হয় এবং বিধর্মী ধ্বংসের স্মারক হিসাবে কিছু দেবদেবী দের মূর্তির ভগ্নাবশেষ প্রেরণ করা হয় ""...পতন হলো সিন্ধুর... পত্তন হোলো আংশিক ভাবে ইসলামিক শক্তির..
ভারতের হিন্দু সামরিক শক্তির ব্যর্থতা উল্লসিত করলো মধ্য প্রাচ্য কে... এর পর শুধুই আক্রমণ ও পরাজয়......
উৎস [dr titas islam in india p-10....history of medieval india by dr iswari prosad. .....p60-63.....writing & speeches of ambedkar vol 8 p55]..
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................