অখন্ড বাংলা ও জনবিন্যাস

✍গৌড়েশ্বর বল্লাল সেন
1891 সালে অবিভক্ত বঙ্গে কুচবিহার বাদে মোট জনসংখ্যা ছিল 3,90,92,401 জন যার মধ্যে শান্তি সংখ্যা 1,98,94,692 জন।1872সালে এটা ছিল 3,42,77,342জন,শান্তি ছিল 1,66,81,856 জন ।
1872 সালে শান্তি ছিল মূল জনসংখ্যার 48.67%, 1891সালে 50.89% । 20 বছরে 2.22% বৃদ্ধি শান্তি জনসংখ্যা সামগ্রিক ভাবে ।

এই 20 বছরে গ্রোথ রেট ছিল সামগ্রিক ভাবে 14.05% ,শান্তিদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল 19.26%, হিন্দু ও অন্য দের 9.11% । অর্থাৎ দ্বিগুণ এর বেশি বা 2.11 গুণ হারে অন্যদের থেকে শান্তিরা বেড়েছিল । আর কিছু বলার নেই । এই বৃদ্ধি যে অস্বাভাবিক এটা আগেই বহু পোস্টে বিভিন্ন ভাবে বুঝিয়েছি ।

Hindus a dying race-how dying বই তে বোঝান হয়েছে যে হিন্দুর সংখ্যা কমার কারণ রাঢ় ও 24 পরগনা,নদিয়া,যশোর তে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ও অন্যদিকে অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর পুর্ববঙ্গে মূলত ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগ ও রাজশাহি রংপুরের দিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি যেখানে শান্তি বেশি ছিল । ক্ষয়িষ্ণু হিন্দু বইতে হিন্দুদের হ্রাস এর কারণ হিসাবে সামাজিক কুপ্র্থা কে দায়ি করে ম্যালেরিয়ার থেকেও বেশি ।

ভবিষ্যত এ এ নিয়ে লিখব তবে বর্ধমান ও প্রেসিডেন্সি বিভাগে রেলপথ বসাবার জন্য ম্যালেরিয়া তে জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছিল সন্দেহ নেই । কিন্তু একি সময় জঙ্গল থাকা দুর্গম উত্তর বঙ্গে রংপুর বাদে ও ঢাকা বিভাগে বাকরগঞ্জ ছাড়া পুর্ব বঙ্গের কোথাও জনসঙখ্যা কমেনি এমনকি জলপাইগুড়ি তেও না বেড়েছে বা একি আছে ।

বর্ধমানে প্রায় 36% হিন্দু (35.73%)কমেচে 20 বছরে,শাম্তি কমেচে মাত্র 6.15% । প্রায় ছ গুণের কাছাকাছি ভাবে হিন্দুরা কমেচে । পাশের বাকুড়া তে দ্বিগুণ এর বেশি হিন্দু ও অন্য রা বেড়েছে শান্তি মাত্র 8.6% ,বীরভূমে শান্তি বাড়ে 8.7%, হিন্দু 16.37% । কোন যুক্তি তে মাটি আকড়ে পড়ে থেকে আর্থ সামাজিক ভাবে পিছানো শান্তিরা ম্যালেরিয়া থেকে রেহাই পেল হিন্দুদের চেয়ে বেশি বুঝলাম না ।

24 পরগনা তে শান্তি বেড়েছে প্রায় 24%,হিন্দু ও অন্যরা কমেছে 31%,20বছরে,হুগলি তে 11%এর কাছাকাছি শান্তি কমে ও 26.5% হিন্দু ও অন্যরা বাড়ে । নদিয়া তে 3.73% শান্তি ও অন্যরা 15.92% কমে এই 20 বছরে । মুর্শিদাবাদে 10.5% শান্তি বেড়েছে,হিন্দু ও অন্যরা কমেছে 20.35% । বাকর গঞ্জ যা আজকের বরিশাল বিভাগ এখানে শান্তি বেড়েছে 16%,হিন্দুরা কমেছে 38%। কুমিল্লা তে শান্তি বেড়েছে 34%,হিন্দু ও অন্যরা কমে 10%। এর পাশাপাশি নোয়াখালি তে প্রায় আড়াই গুন হিন্দু বেড়েছে এই বিশ বছরে । 

এটা খুব আজবই লাগল যে ত্রিপুরা রাজের অধীনে থাকা সমৃদ্ধ কুমিল্লা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত দুর্গম নোয়াখালি তে হিন্দুরা চলে গেছে দেখে । সম্ভবত নমুনা সংগ্রহে ভুল হয়েছিল 1872সালে এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে কারণ 1872সালে নোয়াখালি তে 86%,কুমিল্লা তে 59%শান্তি ছিল জনগণনা অনুসারে । 1881 তে সেটা হল নোয়াখালী তে 75%,কুমিল্লা তে 66%। 1891তে নোয়াখালি তে প্রায় এক রইল,কুমিল্লা তে 68% হল ।

সম্ভবত নোয়াখালি তে নমুনা সংগ্রহে ভুল ছিল সেটা ধামাচাপা দিতে পরের সেন্সাসে কুমিল্লা তে শান্তি অনেকটাই বাড়িয়ে দেয় যাতে হিন্দুরা এই অঞ্চলে উল্লেখ যোগ্য শক্তি না হতে পারে । কারণ ত্রিপুরা রাজ্যের অধীনে থাকা চাকলা রোশনাবাদ বা কুমিল্লা ছেড়ে হিন্দুরা অন্য দিকে চলে যাবে এটা অস্বাভাবিক ।

এই দুটি জেলার খানিক ব্যাখ্যা দিতে পারলেও বাকি অঞ্চল গুলির হিন্দু হ্রাস এর যৌক্তিক ব্যাখ্যা পেলাম না ।শুধু রোগেই যদি হিন্দুরা মরত তবে  আধুনিক যুগে ডেংগু র মত রোগে কেন বিপুল পরিমাণ শান্তি মরছে হিন্দুদের মতই কিছু ক্ষেত্রে বেশি  তবে সে যুগে এক পরিবেশে থেকে এত হিন্দু মরা অস্বাভাবিক একি রোগে ।

যারা এই নিয়ে লেখালিখি করতেন তারা সম্ভবত আব্রাহামিক দের প্যাগান বিদ্বেষ ও হিন্দুদের দমন করার জন্য সেন্সাসের কারচুপির কথা ভাবেননি । যেটা  নিয়ে  প্রথম 31সালের সেন্সাসের পর প্রবন্ধ লেখা হয় লেখেন বিশিষ্ট পরিসংখ্যান বিদ ও শ্রী  প্রশান্ত চন্দ্র মহালনবীশ এর সহযোগী শ্রী যতীন্দ্র মোহন দত্ত ।সেন্সাসের কারচুপির প্রবন্ধে এর কিছুটা বর্ণনা আছে ।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted