“নাগ বংশ”- এক সনাতনী বৈদিক বংশ "সমুদ্র মন্থন"

 
“নাগ বংশ”- এক সনাতনী বৈদিক বংশ 
"সমুদ্র মন্থন" 

ডাঃ মৃনাল কান্তি দেবনাথ 

আমরা দেখেছি, রাজা দক্ষের প্রথম কন্যা কদ্রু এবং কাশ্যপ এর পুত্র ‘তক্ষক’। এর নামেই ‘নাগ বংশ’। এই বংশের সব রাজাকেই ‘নাগ রাজ’ বলা হতো। তার কারন এই বংশ দেবাদিদেব মহাদেবের ভক্ত ছিলো। মহাদেবের সঙ্গে তার নন্দী অর্থ্যাত বৃষ (ষাড়) এবং মাথার উপরে সাপের ফনা সব সময় ই দেখা যায়। তক্ষকের বংশের সবাই মাথার মুকুটে সাপের ফনার প্রতিকৃতি রাখতো। সেই ভাবে এই রাজ বংশ সাপের বংশ বলে প্রচলিত হয়ে এসেছে। 

এই নাগ বংশ প্রথমে উত্তর পশ্চিম ভারতে তাদের রাজত্ব স্থাপন করে। বর্তমান মধ্য এশিয়াতে ও এই নাগ বংশের বিস্তার ছিলো। উজবেকিস্তানে এক প্রাচীন শিব মন্দির ছিলো। এখন আর নেই। তৈমুর লং সেই শিব মন্দির রুপান্তর করে ‘বিবি খানুম মসজিদ’ বানিয়েছে। 

সবাই জানে শ্রী রাম চন্দ্র ও শিব ভক্ত ছিলেন। তার ভাই ভরতের বড়ো ছেলের নাম ও ছিলো ‘তক্ষক’ এবং মধ্য এশিয়া তার রাজত্বের অন্তর্গত ছিলো। তার নামেই আজ তাসখন্দ (তক্ষক= তকসখ= তাসখন্দ)। প্রাচীন কালে এই অঞ্চলের নাম ছিলো বাহ্লীক প্রদেশ। 

আমরা মহাভারতেই পাই, রাজা পরীক্ষিতের ( অভিমন্যুর ছেলে) সঙ্গে এই রাজা তক্ষকের যুদ্ধ হয় এবং পরীক্ষিত পরাজিত এবং নিহত হন। পরীক্ষিতের ছেলে রা্জা জন্মেজ্জ্বয় তখন এই নাগ রাজার সঙ্গে এক দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত হন। ঋষি ‘অস্তিক’ এর হস্তক্ষেপে জন্মেজ্জ্বয় এবং নাগাদের (তক্ষকদের) এই সংগ্রাম বন্ধ হয়। 

এই দীর্ঘ যুদ্ধ চলাকালীন, নাগ বংশের অনেকে ভারতের নানা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের নামে মহারাষ্ট্রের ‘নাগপুর’, ঝাড়খন্ড (আসল নাম ছোট নাগপুর)। ছোট নাগপুরের জঙ্গলাকীর্ন অঞ্চলে (ঝাড়= জঙ্গল, খন্ড= অঞ্চল) ‘পুন্ডরীক নাগ’ এক রাজবংশের পত্তন করেন। তার অকাল মৃত্যুতে রাজা ফনি মুকুট রাই প্রথম বিখ্যাত নাগ রাজ হিসাবে খ্যাতি লাভ করেন। সেই ঘটনা খ্রীষ্টের জন্মের প্রায় ৬৪ বছর আগে।  এই রাজ বংশ এখনো বিদ্যমান রাচীর ৬০ কি মি দূরে তাদের প্রাসাদ (রাতু প্রাসাদ- গিয়ে দেখে আসুন)  আছে, যদিও রাজত্ব নেই। শেষ রাজা জগন্নাথ সিং মহাদেও বিহার বিধান সভার সদস্য ছিলেন।  

হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদাড়োতে পুরাতাত্বিক খননের ফলে যে নিদর্শ পাওয়া গেছে সেখানে শিব মুর্তি এবং বৃষ ( ষাড়) পাওয়া গেছে। মেহেরগড়ে , যে সভ্যতার নিদর্শন পাওয়া গেছে তা হরপ্পা এবং মহেঞ্জোদাড়র থেকেও আরো প্রাচীন। বোলান নদীর তীরে মেহেড়গড়ের এই সভ্যতা ১০০০০ বছরের বেশী পুরানো। 
****** 
“সমুদ্র মন্থন”

প্রধা, কপিলা,ভিশ্বা, এবং মুনি দক্ষ রাজার এই চার কন্যা থেকে  কাশ্যপ মুনির যে বংশ চালু হয় তাদের বলে গন্ধর্ব এবং অপ্সরা। এরা দুই দল একত্র হাত মেলায়। তাদের  সঙ্গে   হাত মেলায় অদিতি পুত্র বিষ্ণ। বিষ্ণুকে 'দেব' নামে ও ডাকা হয়= বিষ্ণু দেব। অন্যদিকে  দিতি, দানু এবং দানায়ু থেকে যে দৈত্য, দানব এবং অসুর বংশের সৃষ্টি হয় তারা এক জোট হয়। নাগ বংশ থাকে নির্দল। 

শুরু হয় “সমুদ্র মন্থন”। সেই সমুদ্র মন্থন থেকে  বিষ্ণু দেব, গন্ধর্ব এবং অপ্সরাদের দল ( দেবতা) এর সঙ্গে দৈত্য দানব এবং অসুরদের তীব্র সংগ্রাম চলে বহুদিন যা আমরা পুরানে পড়ি।   

বাকি রইলো ‘বিবস্বান এবং বিষ্ণু’ বংশ, যার সৃষ্টি দক্ষ কন্যা অদিতি এবং মুনি কাশ্যপ থেকে। 

এই সব ঘটেছে ১০০০০ বছরের ও আগে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted