সাবাস মাশরাফি! কারণ তিনি মামুনুল হকের ওয়াজের অনুমতি দেননি। এতে কি প্রমাণিত হলো? মাশরাফি মৌলবাদ বিরোধী? যদি মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম মুফতিদের ধর্ম ব্যবসার বিরোধীতা করাকে বিরাট প্রগতিশীলতা মনে করা হয় তাহলে ভারতের তাবলীগ জামাতের প্রধান সাদ কান্ধলভীকে বিরাট প্রগতিশীল বলতে হয়! উনি নামাজ পড়িয়ে টাকা নেয়াকে বলেছেন বেশ্যাবৃত্তি। জাকাত মাদ্রাসা মক্তবে দেয়াকে হারাম বলেছেন। টাকা নিয়ে ওয়াজ করাকে ব্যবসা বলেছেন। এতে কি প্রমাণিত হয় সাদ কান্ধলভী মৌলবাদ বিরোধী?
মৌলবাদী বলতে এদেশে আমরা জামাত ইসলামকে চিনেছি। এরা ছাড়া লম্বা লম্বা দাড়িওয়ালা স্বাধীনতার পক্ষের আলেমওলামারা সব প্রগতিশীল! এরা শিখাচিরন্তনকে মূর্তি মনে করে না, এরা বলে এগুলো ভাস্কর্য। শহীদ মিনারে ফুল দেয়াকে এরা পুজা মনে করে না কারণ শহীদ মিনারকে খোদা মনে করে তার কাছে কিছু চাওয়া হয় না। এটা হচ্ছে শ্রদ্ধা জানানোর প্রতীকী। ইসলাম এগুলোকে খারাপ চোখে দেখে না।
মৌলবাদ বিরোধী হালাল বডি স্প্রে ব্যবহারকারী আর প্রগতিশীল আলেমওলামাদের চেয়ে কি মামুনুল হকরা বেশি বিপদজনক? আমি তো মনে করি এদেশে রাষ্ট্র সমাজে ইসলামকে সব কিছুর দাড়িপাল্লা করে তোলার জন্য এরাই দায়ী। ‘হালাল বডি স্প্রে’ এড করা যে চরমমাত্রায় ধর্মীয় বিভাজনকে ফুটিয়ে তোলা হয় এটা তাদের বুঝতে আরেকবার জন্ম নিতে হবে। বিয়ার কোম্পানির লোগো জার্সিতে পরতে অপারগতা জানিয়েছিলো হাশিম আমলা, মঈন আলী। কেন? কারণ ইসলামে মদ হারাম। মাশরাফি দাঁড়িয়ে পানি খায় না বসে খায়। পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম মাঠে বসে পানি খায় কারণ এটা করা সুন্নত। এরকম রক্ষণশীলরাও আহমদ শফি-বাবুনাগরী মামুনুল হকের সঙ্গে দ্বিমত হতে পারে। উপরে সাদ কান্ধলভীর উদাহরণ দিলাম। বাংলাদেশের ভাস্কর্যগুলোর পক্ষে একদল ইসলামপন্থি সামনে রাজপথ গরম করতে পারে কারণ তারা বলছে মূর্তি ও ভাস্কর্য এক নয়। ইসলাম মূর্তি বিরোধী ভাস্কর্য বিরোধী নয়! মাশরাফি যেহেতু আওয়ামী লীগ করেন কাজেই তিনি মূর্তি ও ভাস্কর্যকে এক করে দেখেন না। মাশরাফি তার এলাকায় মামুনুল হকের ওয়াজ মাহফিলের অনুমতি দেননি। মাশরাফি এরকম কত ওয়াজ মাহফিলে চিফ গেস্ট হয়ে যান। নিজের মেয়েকে মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষা দিয়েছেন। ওয়াজ মাহফিল বা ওয়াজে যেসব বয়ান করা হয় সেসব নিয়ে তার কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। আবার থাকতেও পারে। এতেও বিরাট কোন তফাত হয় না।
এই সমাজে মামুনুল হকদের চেয়ে কয়েক হাজার গুণ বিপদজনক যারা সৌদি আরব, ইরান, দুবাই, তুরস্কের উদাহরণ দিয়ে বলছেন এসব দেশের রাস্তার ধারে ধারে ‘ভাস্কর্য’ চোখে পড়ে। তারা আসলে ইসলাম দিয়েই ইসলামকে খন্ডন করতে চাইছেন। এ যেন গঙ্গার জল দিয়ে গঙ্গার পুজা করার মত। ‘ইসলামে সংখ্যালঘু নির্যাতন নেই’ এই কথা বলে ইসলামকে রাষ্ট্র ও সমাজে হস্তক্ষেপই করা হলো। ইসলামে সংখ্যালঘু নির্যাতন পাওয়া গেলে তাহলে নিশ্চয় আপনার আপত্তি থাকবে না? কত রকম ইসলাম পৃথিবীতে আছে। সুফিরা বাজনা বাজিয়ে গান গায় আল্লা রসূলের। তারা বলে ইসলামে বাজনা নিষিদ্ধ নয়। তাদের রেফারেন্সে যারা সংগীতের পক্ষে ইসলামকে টেনে আনে তারা শিল্পকে ইসলামের ফিলটারের মধ্য দিয়ে যেতে বাধ্য করে। শিল্পীর ধর্ম তার শিল্পে। বাজনা হারাম নাকি হালাল সেটা সে ইসলাম দিয়ে করবে না। মূর্তি ইসলামে হারাম হতেই পারে কিন্তু মূর্তির অধিকার পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে শিল্পির অধিকার দিয়ে। মূর্তি পৃথিবীতে থাকবে কারণ এটা শিল্পীর ধর্ম। শিল্পকর্ম থাকবে শিল্পের সংজ্ঞায়, ধর্মের প্রেসক্রিপশনে নয়। ওয়াজ মাহফিলের বিরোধীতা করার সময় আজকাল অনেকে বলেন, মাধ্যপাচ্যের কোথাও এভাবে মাইক বাজিয়ে রাতভর ওয়াজ করার রেওয়াজ নেই। কিংবা এসব মাহফিলের কোন প্রমাণ হাদিস কুরআনে পাওয়া যায় না। কিংবা ওয়াজ করে, নামাজ পড়িয়ে অর্থ গ্রহণ করার কথা ইসলামে নেই- তারা কি বলতে চান ইসলামে যা আছে সেটাতে কোন সমস্যা নেই? মামুনুল হকদের চেয়েও এরা এই কারণে বিপদজনক। তারা ইসলামকে ফিলটার করে সব কিছুকে জায়েজ করতে চায়।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................