জাতপাত বলে কিছুই হয়না! কিন্তু জাতপাত ভিত্তিক সংরক্ষণটা থাকা চাই!!!

Stay Conneted

জাতপাত বলে কিছুই হয়না! কিন্তু জাতপাত ভিত্তিক  সংরক্ষণটা থাকা চাই!!!

...ইলেভেন টুয়েলভে আমার এক বন্ধু ছিল। তার নাম ছিল অঙ্কুর মান্ডি (নামটা পরিবর্তিত, কিন্তু পদবীটা নয়)। আমাদের সাথেই সে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ সমস্ত টিউশন পড়ত, পাথফাইন্ডারে আমাদের সাথেই মক টেস্ট দিত। অঙ্কুরের বাবা মা দুজনেই ছিলেন কেমিস্ট্রির অধ্যাপক। উত্তরপাড়ার মত জায়গায় তাঁদের তিনতলা বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি। 

...অঙ্কুর জয়েন্টে ১১০০০ র‍্যাঙ্ক করল। কিন্তু সে যাদবপুরে ইঞ্জিনিয়ারিং পেয়ে গেল, কারণ তার ST র‍্যাঙ্ক ছিল ৪২। 

...আমার আরেক বন্ধু ছিল, তার নাম অরুণাভ চক্রবর্তী (এক্ষেত্রেও পদবী অপরিবর্তিত)। অরুণাভর বাবা বাজারে আনাজ বেচতেন। অরুণাভ পাথফাইন্ডারের মত কোথাও কোচিং নিতে পারেনি, বরং ওকেই দুটো বাচ্চাকে পড়াতে হত। ওর বাবা ওকে বলে দিয়েছিলেন, টুয়েলভের পর নিজে যেন কিছু রোজগারের চেষ্টা করে, তাঁর পক্ষে আর পড়ানো সম্ভব নয়।

...অরুণাভ ৭৮% পেয়েছিল উচ্চমাধ্যমিকে, জয়েন্টে র‍্যাঙ্ক ৬২০০। ওই র‍্যাঙ্কে সে সরকারিতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পারল না, মফস্বলের কলেজে ভর্তি হল জুলজি অনার্স নিয়ে। তার সাথে ধরল গুচ্ছের টিউশনি। ফলে রেজাল্ট খুব আহামরি হল না। টিউশনি সামলে সরকারি চাকরিতেও বিশেষ সুবিধা হল না। বছরের পর বছর পড়ারও পরিস্থিতি নেই। 

...অরুণাভ এখন উঠতি এক প্রোমোটারের কাছে খাতা লেখে। মাস গেলে সাকুল্যে পায় ৭০০০ টাকা। দিন শেষে যখন ও বাড়ি ফেরে, ওর যন্ত্রণাক্লিষ্ট মা ছাড়া পাড়ায় কেউ জেগে থাকে না।

...ওদিকে অঙ্কুর যাদবপুর থেকে বেরনোর আগেই ক্যাম্পাসিং এ চাকরি পেল আইটি কোম্পানিতে। কিন্তু মাসছয়েক করে ওর পোষাল না। সরকারি চাকরির প্রিপারেশন নিতে শুরু করল। ভর্তি হল নামী এক কোচিং সেন্টারে। যে পরীক্ষায় অরুণাভর জন্য কাট-অফ মার্কস ছিল ৭৫, তাতে অঙ্কুর পেয়ে গেল মাত্র ৫১ পেয়ে। অরুণাভ ৬৩ পেয়েছিল, কিন্তু জেনারেল ক্যাটেগরি বলে পাশ করতে পারল না।

...ওদিকে অঙ্কুর সরকারি চাকরিটা পেয়ে গেল। প্রোমোশনও হতে শুরু করল ঝটপট, সেখানেও তার আলাদা কোটা, অফিসের পক্ষ থেকে স্পেশাল ট্রেনিং। 

...অঙ্কুর এখন মাসে লাখখানেকের ওপর মাইনে পায়। পৈতৃক বাড়ি ছাপিয়ে সে করে ফেলেছে আরো কিছু ফ্ল্যাট, বছরে একবার বিদেশভ্রমণ তো হয়েই যায়। অফিসের সহকর্মী সুপর্ণা এখন তার স্ত্রী, সুপর্ণা গাঙ্গুলি।

...ওর ছেলের নাম অন্তরীক্ষ। অন্তরীক্ষ মান্ডি কলকাতার এক নামজাদা অভিজাত স্কুলে পড়ে। পাশ করে বেরিয়েই সে সরকারি চাকরি বা এন্ট্রান্স দেবে।

...কোটা আছে যে! 

...একটা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের একটা প্রজন্ম আলোকপ্রাপ্ত হওয়ার পরেও কি তার উত্তরপ্রজন্মদের কোটা লাগে ??? নাকি একই চাকরি, একই মাইনেতে ঢুকেও প্রোমোশনে কোটার আছে কোন যুক্তি ??? অনেকেই বলবেন শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে চলে আসা অন্যায় অত্যাচারের ফল। কিন্তু এক প্রজন্মের কর্মফল অন্য প্রজন্মদের ভোগ করতে হবে কেন ??? কেন লক্ষ্য হবে না নিঃশর্ত সমতা ???

...ভারতের মত একশোত্রিশ কোটির দেশে শিক্ষা, নারীসুরক্ষা, স্বাস্থ্য এইসমস্ত ব্যাপারে যতই অভাব থাক, নানাক্ষেত্রে বৈষম্যের ব্যাপারে কিন্তু এ’দেশ মোটেই পিছিয়ে নেই।

...আজও মেয়ে হলেই একশ্রেণীর মানুষের মুখ ভার, হরিয়ানা ভ্রুণহত্যায় শীর্ষে।  জাতপাতের ভিত্তিতে সংরক্ষণে প্রথম বিশ্বের দেশে আমাদের নিরন্তর ব্রেইন ড্রেন - এখন এক সাধারণ ব্যাপার। 

...অতিনব্য যুবসমাজ এই বৈষম্যকে কেমনভাবে নিচ্ছে ???

...তারা কি দেখেও না দেখার ভান করে কাটিয়ে দিচ্ছে দিন ??? নাকি, ভেতরে ভেতরে তাদের মধ্যে জন্ম নিচ্ছে মিথ্যা আস্ফালন! আর সেই আস্ফালন কি বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে এক ক্লেদাক্ত সত্যের ??? 

...কোথায় গিয়ে শেষ হবে এই caste ভিত্তিক সংরক্ষণ ??? ভোটব্যাঙ্কের গন্ডী টপকে, আমাদের সংবিধানের মৌলিক অধিকার Right to Equality কে সত্যতা দিয়ে ??? আদৌ কি কোনোদিনও শেষ হবে ??? ভারত কি আদৌ deserved দের চায় ??? নাকি reserved দের ???

...©Debarati Mukhopadhyay

Post a Comment

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................