#সংগঠনেই_শক্তি
একদিন এক রাজা উনার মন্ত্রীকে বললেন, "আমার রাজ্যের যোগ্য প্রজাজনদের সম্মানিত করার বাসনা আমার, আপনি আমাকে বলুন যে উনার নির্বাচন আমি কিভাবে করব ?"
মন্ত্রী একটু ভেবে উত্তর দিলেন, "মহারাজ, আপনার রাজ্যে যোগ্যজন তো অনেক আছেন, কিন্তু উনাদের মধ্যে একতার সর্বথা অভাব। উনারা নিজের শক্তি একে অপরের প্রগতিতে বাধা হতে ব্যয় করে দেন।"
মন্ত্রীর কথায় রাজা অবাক হলেন। উনি মন্ত্রীকে সকল যোগ্য পুরুষদের পরীক্ষা নিয়ে নিজের কথার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার আদেশ দিলেন। মন্ত্রী পরের দিন রাজ্যের ২০ সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের একটি মাঠে আসার ফরমান জারী করলেন। মন্ত্রী একটি ৮ ফুট গভীর এবং ৮ ফুট চওড়া গর্ত খুঁড়লেন, আর সবাইকে ঐ গর্তে নামিয়ে দিলেন। মন্ত্রী রাজার উপস্থিতিতে সকল ২০ যোগ্য ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে ঘোষণা করলেন, "আপনাদের মধ্যে যে এই গর্ত থেকে সবার আগে বেরিয়ে আসতে পারবেন, মহারাজ উনাকে উনার রাজ্যের এক চতুর্থাংশ পুরস্কার রূপে দেবেন।"
মন্ত্রীর ঘোষণা শোনে সবাই গর্ত থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ প্রয়াস করতে লাগলেন। যে-ই সবার আগে বেরিয়ে আসতে যাচ্ছিলেন, বাকি সকলে উনাকে নীচে টেনে নামিয়ে দিতে লাগল। এইপ্রকার সবাই কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত লেগে থাকলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই পরিশ্রান্ত হয়ে বেহুশ হয়ে গেলেন। কেউই সফল হতে পারলেন না। রাজা তা দেখে বড়ই আশ্চর্য হলেন। মন্ত্রী বললেন, "মহারাজ, যদি এদের সবার মধ্যে একতা থাকত, পরস্পর হিংসা আর দ্বেষ না থাকত, তাহলে এরা একে অপরকে সাহায্য করে যেকোন একজনকে বিজেতা বানাতে পারত। কিন্তু পারস্পরিক সমন্বয়ের অভাবে এরা সবাই প্রতিযোগিতাতে পরাজিত হয়ে গেল।"
ভারতবর্ষের বিগত ৫০০০ বছরে যে দুর্গতি হয়েছে, এর কারণও এই একতার অভাব, পরস্পর হিংসা আর দ্বেষ। অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য এটাই যে আজ আমাদের রাজ্য ত্রিপুরাতেও একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বর্তমান ভূমিকাতেও সেই একই কারণ পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মহাভারতের কালে পাণ্ডব আর কৌরবদের মধ্যে একতার অভাবে মহাযুদ্ধ হল। যার পরিণাম দেশ শক্তিহীন হয়েছিল। কালান্তরে বিদেশি আক্রমণকারীদের সমক্ষে স্বদেশী রাজা যোগ্য এবং অধিক শক্তিশালী হয়েও পরস্পর হিংসা আর দ্বেষের কারণে পরাজিত হতে থাকলেন।
ঋগ্বেদের অন্তিম শ্লোক সংগঠন শ্লোক বলে পরিচিত। এই শ্লোকের দ্বিতীয় মন্ত্রটি এইপ্রকার...
"ঔঁ সংগচ্ছধ্বং সংবদধ্বং সংবো মনাংসি জানতাম।
দেবা ভাগঃ যথাপূর্বে সংজানানা উপাসতে॥
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানং মনঃ সহচিত্তমেষাম্।
সমানং মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।
সমানী ব আকূতিঃ সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তু বো মনো যথা বঃ সুসহাসতি ॥"
এই মন্ত্রের অর্থ,–তোমরা একত্র মিলিত হও, এককণ্ঠে ঘোষণা কর, একত্র মন বিনিময় কর; যেরূপ অতীতের দেবতাগণ সচেতনভাবে একত্র তাহাদের ভাগ গ্রহণ করিতেন, মন্ত্র সমান হউক, সমিতি সমান হউক, মন সমান হউক, বিচার একরূপ হউক। তোমাদের সহিত একই মন্ত্রে আমি মন্ত্রণা করি, তোমাদের সহিত একই হবি দ্বারা আমি হোম করি তোমাদের প্রচেষ্টা সমান হউক, হৃদয়গুলি এক হউক, মন এক হউক, যাহাতে তোমাদের ঐক্য স্থাপিত হয় ॥
যদি ভারতবাসী বেদের এই #সংগঠন_মন্ত্র এর পালন করতেন, তাহলে দেশ কখনো বিদেশী আক্রমণকারীদের গুলাম হতো না, উপরন্তু ভারত সদা সর্বদা বিশ্বগুরু হয়েই থাকত। আমার ছোট্ট রাজ্য ত্রিপুরাও সেই দুর্গতির গহীন অন্ধকারে যেন পুনরায় আচ্ছন্ন না হয়, সকলে সেই প্রয়াস এবং প্রার্থনাই করুন আর বেদের "সংগঠন মন্ত্র" কে পাথেয় করে চলুন..…..🙏🙏🙏🙏🙏
🚩🚩🚩জয় শ্রীরাম🚩🚩🚩
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................