উদ্ভট গল্প

উদ্ভট গল্প
………………………………………..
রাত দশটা বাজে বাবা মাছ কিনে এনে মাকে বললেন, দেখে যাও মাছ কিনে এনেছি!

মা বিরক্ত হয়ে বললেন, এতরাতে কে মাছ কুটবে আমি এসব করতে এখন পারব না!

বাবা গর্বিতভাবে বললেন, তোমাকে কাটতে হবে না। স মিলে গিয়ে খবর দিয়ে আসছি, ওরা কড়াত নিয়ে আসছে মাছ কাটতে…

আমরা হা হয়ে চেয়ে থাকলাম বাবার দিকে। বাবা রেগে বললেন, গাধার মত চেয়ে না থেকে বাইরে গিয়ে দেখে আয়।

দৌড়ে গেইটের বাইরে গিয়ে দেখি একটা ট্রাক দাঁড়ানো। সেই ট্রাকের উপর বিরাট একটা মাছ! তুলনা করলে ডায়নোসার বললে সবাই বুঝতে পারবে। এতবড় মাছ কোন বটিতে কাটা হবে? রান্নাই বা কত বড় হাড়িতে হবে?

পাড়ায় লোক জমে গেলো। রাতদুপুরে ছেলেবুড়ো মাছ দেখতে আসল। কোত্থেকে একটা ঘুগনিওয়ালা এসে জুটল। লোকজন মাছ দেখতে এসে আড্ডা দিচ্ছে। ঘুগনিও বেশ চলছে। তারপর এলো একটা চা ওয়ালা। পান সিগারেট নিয়ে এলো একজন। হ্যাজাগ লাইট জ্বালানো হলো। তসবি চুপি আর নূরানী কায়দা নিয়ে বসল একলোক। কোত্থেকে একটা চরকগাছ এসে বসল। পাড়ায় একটা খুশির ব্যাপার ঘটেছে যেন। বড়রা ভীড় করে আছে। ছোটরা এই সুযোগে রাতের বেলায় বের হবার সুযোগ পেয়েছে। চরকগাছে দুই চক্কর করে ঘুরাও হচ্ছে।

ট্রাক থেকে মাছ নামাতে ক্রেণ প্রয়োজন হলো। ক্রেন নিতে ফায়ারসার্ভিককে ডাকা হলো। তারা এসে বলল, যদি কোন মাছ আটকা পড়ে যেত তাহলে না হয় আমরা সাহায্য করতাম। ট্রাক থেকে মাছ নামানোর দায়িত্ব আমাদের না। 

শেষে  সিদ্ধান্ত হলো ট্রাক থেকেই মাছ কাটা হবে। মাছ কাটার খবরে সিটি করপোরেশন থেকে লোক এসে বাধা দিলো। তারা বলল, মাছ কাটায় যে পরিমাণ রক্ত ও বজ্য বের হবে এই বিশাল মাছ থেকে সেটা পুরো এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। শুধুমাত্র মৎস মন্ত্রণালয় যে সিদ্ধান্ত নিবে আমরা সেটা মেনে নিবো। মৎস মন্ত্রণালয় থেকে লোকজন এসে বলল, এই মাছ খাওয়া হালাল না হারাম এটা আগে জানতে হবে। আগে তাই ধর্মমন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন। আমরা চাই না কোন রকম ধর্মানুভূতিতে আঘাত লেগে দেশে বিশৃঙ্খলা বেধে যাক!

ধর্মমন্ত্রণালয় থেকে টুপি মাথায় দুজন এসে বললেন, এই বিষয়ে মতামত দিবে ইসলামী ফাউন্ডেশন। তারা সভা ডেকে আলেমদের মতামত নিবেন তারপর সিদ্ধান্ত।

আলেমরা একজন বললেন, নূহ নবীর সময় এরকম পাহাড় সাইজ মাছ পাওয়া যেত। তখনকার মানুষ এরকম মাছ এখনকার পুঁটি মাছের মত এক কামড়ে শেষ করত। নূহের প্লাবনের পর মানুষসহ সৃষ্টির সব কিছু ছোট হয়ে গেছে।

অন্য আলেমরা বলল, এই মাছ ইয়াজুমিয়াজুদের দেশ থেকে কোনভাবে বের হয়ে আসছে। হাদিসে আছে ইয়াজুমিয়াজুরা যেদিন বেরিয়ে আসবে তারা দুনিয়ার সব কিছু খেয়ে শেষ করে দিবে। তারা আকারে হবে দৈত্যের মত! এই মাছ তাদেরই। কাজেই এটা খাওয়া ঠিক হবে কিনা সেটা চট করে বলা ঠিক হবে না।

এদিকে বাবা কিছুতে রাতের মধ্যে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত না খেয়ে ছাড়বেন না। যে করেই হোক এই মাছ রান্না করতে হবে।

পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করায় সরকার ১৪৪ ধারা জারি করল। ফেইসবুক টুইটার সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিলো যাতে গুজব ছড়াতে না পারে।

দাঙ্গা পুলিশ মাছটাকে পাহাড়া দিতে লাগল। বাবা সামনে গিয়ে বলল, এই মাছ আমার! আপনারা কেন এটাকে পাহারা দিচ্ছেন?

পুলিশ বলল, সরকারী কাজে বাধা দিলে আপনাকে আমরা গ্রেফতার করতে পারি!

বাবার জেদ দেখে মা চুপিচুপি ট্রাক থেকে মাছের একটু অংশ খুবলে আনল। তারপর মাছের ঝোল রান্না করে বাবাকে ভাত খেতে দিলো। বাবা খেতে বসে হুঁ হুঁ করে কেঁদে ফেললেন। ট্রাকে মাছটা সারাদিন না খাওয়া ওকে কেউ খেতে দিলো না! এ কথা শুনে আমরা সবাই মাথানত করলাম। মা আঁচলে মুখ ঢাকল। আসলে বাবার জন্য মা মিথ্যা বলেছিলো। মা আসলে ফ্রিজ থেকে মাছ নামিয়ে রান্না করেছিলো। বাবা দু:খ করে বললেন, ওটা মাছ নয়রে, ওটা আমার সন্তানের মত। তাকে তোরা খেতে চাস, ছি:!

আমরা ট্রাকের সামনে ভাত আর মাছের ঝোল নিয়ে গেলাম। বাইরে বেরিয়ে দেখি ফকফকে জ্যোন্সা! ট্রাক ফ্রাক কিচ্ছু নেই! কোথায় মাছ কোথায় লোকজন কেউ নেই। শুধু দুটো সেপাই পাহাড়া দিচ্ছে। সেপাই দুটোকে জিজ্ঞেস করলাম, তারা কারা? সেপাই দুটো হো হো করে হাসল। দুজন দুজনের দিকে গোপন ষড়যন্ত্রের ভান করে চেয়ে বলল, এবার বাছাধন বুঝবে রাজার মাছ চুরি করার মজা!

আমরা বললাম আমরা তো মাছ চুরি করিনি! সেপাই দুটো বিচ্ছিরি করে হেসে বলল, সেটা রাজা শশাঙ্কের সামনে গিয়ে বলো!

আমরা বললাম, রাজা শশাঙ্ক মানে? এটা কোন সময়?

সেপাই দুটো হাই তুলে মুখের সামনে চুটকি মারতে মারতে বলল, ৬০০ খ্রিস্টাব্দ। ভাত আর মাছের ঝোল আনতে এত দেরী লাগে? বলেই তারা খেতে বসল। এদিকে স মিলের লোকগুলো আমাদের দেখে বিরক্ত হয়ে বলল, মাছ কাটা বাবদ আমাদের পারিশ্রমিক দিন আমরা চলে যাই!

আমরা হাসতে হাসতে বললাম, যাবে কিভাবে? কম করে হলেও ১৫০০ বছর পিছনে চলে এসেছো! রাজা শশাঙ্কের বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে আছো!

লোকদুটো হতাশ হয়ে বলল, তাহলে উপায়?

তাদের আশ্বস্ত করে বললাম, চলো রাজা শশাঙ্কের সৈন্যদলে যোগ দেই। দেখি ইতিহাসটা বদলে দেয়া যায় কিনা!

কিন্তু বাবার মাছের ঝোল মাথায় উঠায় কাশতে লাগায় চটক ভাঙ্গল। দেখি বাবা তার বন্ধু শশাঙ্কের কথা মনে করে কাঁদছে। শশাঙ্ক খুব মাছ পছন্দ করত…

তখন শশাঙ্ক কাকু ফোন দিলো কোলকাতা থেকে। উনি আর মাছ খান না। এখন নিরামিষি হয়ে গেছেন।

বাবাও বলল, আমিও আর মাছ খাবো না।

[যারা উদ্ভট গল্প পড়তে ভালোবাসেন তাদের জন্য লেখা। যারা না জেনে পড়েছেন তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী :D ]

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted