বাঙালি মুসলমানের হিরো বখতিয়ার কি শুধু নালন্দা ধ্বংস করেছিল ?

বাঙালি মুসলমানের হিরো বখতিয়ার কি শুধু নালন্দা ধ্বংস করেছিল ?
--------------------------------------------------------------------------------
ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলামের প্রসার মূলত বহিরাগতদের আক্রমনের ফলে, মানুন বা না মানুন। ১৪০০ বছর আগে ইসলামের প্রবক্তার এই উপমহাদেশের কোনো যোগসূত্র আর পাওয়া যায়না।
ইসলামী আগ্রাসনের থাবা ভারতীয় উপমহাদেশে বার বার আছড়ে পরেছে, মানুষ মরেছে, নারী সম্ভ্রম হারিয়েছে, ধর্মান্তকরণ চলছে অবাধে আর সাথে লুঠতরাজ তো ছিলই। যেটা দুঃখের,সেটা হলো, এই উপমহাদেশের বহু ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, সম্পদ নিপাট লোপাট হয়ে গেছে এই আগ্রাসনে। এইগুলো থাকলে হয়ত ভারতীয় উপমহাদেশ আজকের পৃথিবীতে আরো বেশি উজ্জ্বল এক ভুখন্ড হত ! আজ আপনাদের সামনে এরকমই এক নৃশংস আগ্রাসনের কথা ইতিহাসের গুমপাতা থেকে তুলে ধরবো। ইসলামী কুলাঙ্গার আগ্রাসক, তামাম বাঙালি মুসলমানের নায়ক ১৮ জন সৈন্য নিয়ে বাংলা বিজয়ী বখতিয়ার খিলজীকে নিশ্চই জানেন আপনারা ? আর তার নালন্দা ধ্বংসের নির্মম কাহিনী ভোলেন নি নিশ্চই ? নালন্দা কান্ডের ব্যাপ্তি মাঝে মাঝে আমাদের দৃষ্টি ঢেকে দেয় ওদন্তপুরি,বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় ও আরো কিছু ঐতিহ্যশালী জায়গার উপর থেকে।

আনুমানিক ৭৫০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৭৪ খ্রিষ্টাব্দ প্রায় ৪০০ বছরের অধিক সময় পাল রাজারা বাংলা শাসন করেন। গোপাল হলেন পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা শাসক। তিনি ছিলেন আরেক ইতিহাস খ্যাত মগদের ওদন্তপুরি মহাবিহারের প্রতিষ্ঠাতা।ওদন্তপুরি বিহারেই সম্ভ্রান্ত বংশিয় বঙ্গিয় যুবক আদিনাথ চন্দ্রগর্ভ বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসাবে দীক্ষা নিয়ে অতীশ দীপঙ্কর নাম ধারণ করে অসামান্য পান্ডিত্যের ছাপ রাখেন বাংলা ইতিহাসে। বিহার রাজ্যে তাঁর পিতার গড়া ওদন্তপুরী বিহারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ দেন বিদ্যানুরাগী ধর্মপাল। তাঁর ঐকান্তিক সহযোগিতায় এই ওদন্তপুরী পরে মর্যাদা পায় ভারতবর্ষের শিক্ষা ইতিহাসের ২য় প্রাচীণ বিশ্ববিদ্যালয় রূপে। তিব্বতীয় এক সূত্র থেকে জানা যায় এখানে ১২,০০০ ছাত্র লেখাপড়া করত। এছাড়া শিক্ষা বিস্তারে ধর্মপালের আরো একটি অসামান্য কীর্তি বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় যা তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বিহার রাজ্যের ভাগলপুরে। ভিন্ন ধর্মের, ভিন্ন জাতির, ভিন্ন দেশের, ভিন্ন ভাষার যে কোন উপযুক্ত বিদ্যাউৎসাহীর জন্য শিক্ষার দ্বার উন্মুক্ত ছিল সব সময়।

ঠিক নালন্দার মত ওদন্তপুরি ও বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয় দুটো আক্রমণ করে ভিক্ষুদের মেরেকেটে ও লুঠতরাজ করে বইগুলোতে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর শিক্ষা প্রসারের প্রক্রিয়ার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দিয়েছিল দূর্ধর্ষ লুটেরা ও ইসলামী কুলাঙ্গার বখতিয়ার খিলজী। কাশ্মিরে এক সময় প্রচুর বৌদ্ধর বাস ছিল। শাক্য শ্রীভদ্র নামে এক প্রসিদ্ধ কাশ্মিরী বৌদ্ধভিক্ষুক সেই সময়ে তীর্থ করতে মগধে আসেন। তিনি ওদন্তপুর এবং বিক্রমশীলা বিহারে ধ্বংসস্তূপ দেখে ক্ষুব্ধ হন এবং মগধে তুর্কীজাতির সংখ্যাধিক্যে ভয় পেয়ে বিহার ত্যাগ করে উত্তরবঙ্গের জগদ্দল বিহারে আশ্রয় গ্রহণ করেন(History of Bengal, Dacca University, Vol, II, p.3)।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted