লেখালেখি নিয়ে ব্যক্তিগত কিছু কথা বলি। আমি যে ধরণের লেখা লিখি সেগুলোর একটা কমিটমেন্ট আছে। সেই কমিটমেন্ট মানুষের কাছে। তাদেরকে সত্য ইতহাস জা্নানো, সত্য ধর্ম জানানো।
কিন্তু সাহিত্যের কোন কমিটমেন্ট নেই। সাহিত্যের দায় কেবল শিল্পের কাছে। পদ্মানদীর মাঝি ক্লাসিক উপন্যাস হয়ে উঠেছে সেটা জেলেপাড়ার নির্মম ইতিহাস তুলে ধরার জন্য নয়। সেটা শিল্প হয়ে উঠেছিলো বলেই তার এত কদর। গরীব দরিদ্র মানুষ নিয়ে লিখলেই যদি সেটা শিল্প হত তাহলে শেক্সপিয়র তো কোন লেখকই নন! রাজা রানী রাজ প্রসাদ ছাড়া শেক্সপিয়র তো কিছু লিখেননি। কাজেই সাহিত্য একান্তই স্বার্থপর। সাহিত্যিকের ঝোঁকও থাকে কি করে তার লেখাটা শিল্পমান রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। ফলে তার পাঠকরা ধর্মান্ধ থেকে যাক কিংবা সমাজ সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠুক তাতে গল্পকার, উপন্যাসিক, কবির কিছু যায় আসে না। কবিতা যেমন রাজনৈতিক শ্লোগান নয়। উপন্যাসও লাঞ্ছিত নিপীড়িতদের কন্ঠস্বর নয়। জয়নুল আবেদিনের দুর্বীক্ষের ছবিগুলো অসাধারণ শিল্প হয়ে উঠেছিলো বলেই ওগুলো মহান শিল্পকর্ম। না খেতে পাওয়া মানুষের ছবি না এঁকে যদি ফুলদানির ছবি আঁকতেন সেটাও মহান হত যদি শিল্প হয়ে উঠত। উদাহরণ পল গঁগার বিখ্যাত ফুলদানি ছবিটি।
কিন্তু সাহিত্যের কোন কমিটমেন্ট নেই। সাহিত্যের দায় কেবল শিল্পের কাছে। পদ্মানদীর মাঝি ক্লাসিক উপন্যাস হয়ে উঠেছে সেটা জেলেপাড়ার নির্মম ইতিহাস তুলে ধরার জন্য নয়। সেটা শিল্প হয়ে উঠেছিলো বলেই তার এত কদর। গরীব দরিদ্র মানুষ নিয়ে লিখলেই যদি সেটা শিল্প হত তাহলে শেক্সপিয়র তো কোন লেখকই নন! রাজা রানী রাজ প্রসাদ ছাড়া শেক্সপিয়র তো কিছু লিখেননি। কাজেই সাহিত্য একান্তই স্বার্থপর। সাহিত্যিকের ঝোঁকও থাকে কি করে তার লেখাটা শিল্পমান রক্ষায় সচেষ্ট থাকে। ফলে তার পাঠকরা ধর্মান্ধ থেকে যাক কিংবা সমাজ সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠুক তাতে গল্পকার, উপন্যাসিক, কবির কিছু যায় আসে না। কবিতা যেমন রাজনৈতিক শ্লোগান নয়। উপন্যাসও লাঞ্ছিত নিপীড়িতদের কন্ঠস্বর নয়। জয়নুল আবেদিনের দুর্বীক্ষের ছবিগুলো অসাধারণ শিল্প হয়ে উঠেছিলো বলেই ওগুলো মহান শিল্পকর্ম। না খেতে পাওয়া মানুষের ছবি না এঁকে যদি ফুলদানির ছবি আঁকতেন সেটাও মহান হত যদি শিল্প হয়ে উঠত। উদাহরণ পল গঁগার বিখ্যাত ফুলদানি ছবিটি।
বাংলাদেশে চাইলে আমি জনপ্রিয় ধারার কথাসাহিত্যিক হতে পারতাম। সাপ্তাহিক দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত আমার লেখা বের হত। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আমার নামে পত্রিকা অফিস থেকে চিঠি আসত। সেসব চিঠিতে থাকত মুগ্ধতা। সেরকম একটা শুরুর পরও আমি সচেতনভাবে আজকে আমাকে লোকে যেভাবে চেনে সেরকম লেখায় চলে এসেছি। আসার আগে তিনটি উপন্যাসের পান্ডুলিপি পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছি। কেননা আমি ভেবে দেখলাম আমার সাহিত্যের কোন দর্শন নেই! কাহিনী আছে গল্প আছে চরিত্রের সুনিপুন বর্ণনা আছে কিন্তু নিছক এইসব কথামালা পড়ে লোকের কি লাভ হবে? সবচেয়ে বড় কথা আমি নিজে তো তৃপ্ত নই। এরকম সময়েই ঘটনা চক্রে আমি ব্লগে চলে আসি। গত দশ বছরে (ব্লগ ফেইসবুক মিলে) আমার লেখার পরিমাণ যে বিশাল সেটা নিন্দা প্রশংসা যে কোন দিক দিয়েই আমার শত্রু মিত্র সকলেই স্বীকার করেন। এত লিখেও আমি ক্লান্ত হইনি। কত যে অনুরোধের লেখা লিখতে হয়েছে! যেহেতু আমার এই লেখালেখি কমিটমেন্ট মানুষের কাছে তাই মানুষ কিছু লেখার তাগিদ দিয়েছে না লিখে পারিনি। চাঁদ দ্বিখন্ড করার আসল কাহিনী, জমজমের পানি নিয়ে যত মিথ্যাচারের জবাব, ভাই জাকির নায়েক এটা বলেছে এটা কি ঠিক, বেদে কি উনার কথা লেখা আছে, বাইেবলে কি তার আগমনের কথা বলা আছে... এরকম শত শত লেখা লিখতে হয়েছে। ব্লগার কিলিংয়ের সময় যখন নিজের অস্তিত্ব নিয়ে শংকা সেসময়ও একদিনের জন্যও লেখা থামেনি। মজাটা হচ্ছে ততদিনে আমার সাহিত্যের একটা পথ আমি পেয়ে গেছি। যে লক্ষহীনতা ছিলো তার বদলে আমি আমার গল্পের দর্শন পেয়ে গেছি। কিন্তু সাহিত্য করার সময় বরাদ্দ খুবই কম।
এমনও বহু বহু দিন ঘটেছে যে, আমি গল্পের মুডে বসে আছি কিন্তু আমার দেশ উদ্ধারের লেখার অনুরোধ এসে গেছে! আমি কমিটমেন্টে সাড়া দিয়েছি সবার আগে। এতে আমার বিন্দু পরিমাণ আফসোস নেই। কারণ সাহিত্য আমার কাছে অমরত্বের সাধনা না। আমি জানি কোন কিছুই পৃথিবীতে টিকে থাকবে না। এত বড় প্রতিভা যে রবীন্দ্রনাথ সেই উনিই হারিয়ে যেতেন যদি না গান লিখতেন! কামু লিখেছিলেন, দশ হাজার বছর পর শেক্সপিয়র মিল্টন সকলের নাম হারিয় যাবে। কাজেই আমার বিখ্যাত হওয়ার মোহ নেই। নিজের মুখ লুকিয়ে যেহেতু আজীবন লিখতে হবে সেখানে বিখ্যাত হওয়ার সুখ উপভোগ কোথায়?
অথচ নেই নেই করেও তবু আমার গল্পের সংখ্যা নেহাত কম নয়! এগুলো লিখেছি একদমই মনের শান্তির জন্য। যাকে বলে সাহিত্যিক অধ্যবসায় সেরকম কিছু থেকে নয়। ঘষামাজা গভীর চিন্তা করে, দিনের পর দিন ভেবেচিন্তে লেখা নয়। কারণটা ঐ, আমি তো আমার দর্শন পেয়ে গেছি। এখন ‘বড় লেখক’ ‘মহত সাহিত্য’ বলতে যে মহাকালের কাছে কিছু নেই তার প্রমাণ শরত্চন্দ্র চট্টপাধ্যায়কে কেউ তারাশঙ্করের সঙ্গে তুলনা করতে চাইবেন না কিন্তু শরত্চন্দ্র ঠিকই মৃত্যুর পঞ্চাশ বছর পরও সমান পঠিত! সাহিত্যে তাই লেখকের আনন্দটাই আসল।
বাকীটা মহাকালের হাতে ছেড়ে দিন। আমি নির্ভার সাহিত্য করেছি কারণ আমার কাছে একজন আরজ আলী মাতুব্বর অনেক বেশি জরুরী মনে হয় একজন ফিকশন লেখকের থেকে। বাংলাদেশে ডজনখানেক আরজ আলী জন্ম নিলে এদেশে চেহারায় একটা ছাপ ফেলত। কিন্তু সবিনয়ে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিয়ে বলতে চাই, আথতারুজ্জাম ইলিয়াস থেকে হুমায়ূন আহমেদ- কেউ কি বাংলাদেশের ধর্মান্ধতা মৌলবাদীতার বিপক্ষে কার্যকর হতে পারে? কিন্তু আমি সাহিত্যকে এভাবে তুলনা করতে রাজি নই। এভাবে তুলে ধরলাম আমার লেথালেখির দিক পরিবর্তনের কথা বলতে গিয়ে।
কথাসাহিত্য আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমি আজও বিপুল আনন্দ পাই এই জগতে লিখতে বসে। কথা সাহিত্যের জন্য আলাদা পেইজ খুলেছি ‘সুষুপ্ত পাঠকের ছোটগল্প’ নামে। এখানেই আমার উপন্যাস কিস্তিতে কিস্তিতে প্রকাশ করব। সঙ্গে ‘দেশ উদ্ধার’ তো চলবেই। লেখালেখি নিয়ে আমার কোন আফসোস নেই কারণ আমার কোন প্রত্যাশা ছিলো না। লিখে আমি হিসেব মিলাই না। শুধু লিখে যাই। লিখতে না জানলে এই একঘেয়ে পৃথিবীতে আমি বাঁচতে পারতাম না। তাই লেখা ছেড়ে দেয়ার কথা বিভিন্ন সময় ভাবলেও আমি সেটা করতে পারিনি। যদি কমিটমেনেটর লেখা লিখতে ভবিষতে কন্ঠ চেপে ধরতে আসে কেউ, তবে আর কি, নিজের জন্য কেবল কথাসাহিত্য রইল, সেটাই লিখে যাবো।
#সুষুপ্ত_পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................