চারটি প্রধান ধর্মের তুলনামূলক আলোচনা করি।
ইসলাম সম্পর্কে সবচেয়ে বড় অভিযোগ ইসলাম মানব জাতিকে মুসলমান ও অমুসলমান এই দুটি ভাগে বিভক্ত করে অমুসলমানদের উপর মুসলমানদের শাসন কায়েম করার কথা বলে। একই সঙ্গে ইসলাম তার ভাষা সংস্কৃতি ও জাতিগত উপনিবেশ চালায় অন্য ভাষা সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার উপর।
অপরদিকে ইহুদী ও হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তর নেই। হিন্দু ধর্মে এক সময় সমুদ্র পাড়ি দিলেই হিন্দুর জাত চলে যাওয়া মনে করা হত। প্রিন্স দ্বারকানাথ যখন প্রথম বিলেত গেলেন তখন তার প্রাশ্চিত্য করার দাবী উঠেছিলো। এতেই হিন্দুত্বে যে কোন উপনিবেশ নেই সেটি পরিস্কার হলো। বাকী থাকল খিস্টান ধর্ম।
খিস্টান ধর্মটি ইসলামের মতই ধর্মান্তর মিশনে বিশ্বাস করে এবং পুরো মানবজাতিকে খ্রিস্টান করার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু খিস্টান ধর্ম ভাষা সংস্কৃতি জাতিগত উপনিবেশ চালায় তার কোন প্রমাণ ইতিহাসে নেই। যদি তাই হত তাহলে ইউরোপ খিস্টান ধর্ম গ্রহণ করার পর পুরো ইউরোপ হয়ে যেত এ্যারাবিয়ান! খিস্ট ধর্ম ইউরোপে গিয়েছে কেবলই ধর্ম বিশ্বাস হিসেবে। ইউরোপের কালচার ভাষা জাতিসত্ত্বায় আরবের খিস্ট ধর্ম কোন হস্তক্ষেপ করেনি। এখন কেউ ভারতের ধর্মান্তিত খিস্টানদের ইউপোপীয়ান সাজার প্রসঙ্গ আনতে পারেন। সেক্ষত্রে বলতে হয়, খিস্টান ধর্মটি আরবের ভূমি থেকে জন্ম নিয়েছে। আরবী খিস্টানদের সঙ্গে মুসলিম ও ইহুদীদের নামে, থাবারে, বিয়েতে, স্বভাবে, ভাষায় এত মিল যে বঙ্গের “হুইন্না মুসলমানরা” তাদের সকলকে মুসলমানই ভেবে বসবে! কিন্তু ইউরোপ এশিয়া আফ্রিকাতে গিয়ে খিস্টান ধর্ম তাদের জাতি সংস্কৃতি ভাষার উপর হাত দেয়নি। বাংলাদেশের যেসব আদিবাসী খিস্টান তাদের জাতিসত্ত্বাকে কি ঘুরিয়ে দিয়েছিলো খিস্টান মিশনারীরা? যদি দিত তাহলে তারা আজো বাঙালী আধিপত্যের রাষ্ট্রে নিজেরদের সংস্কৃতি রক্ষায় সংগ্রাম করতেন না।
ইসলামের এই আধিপত্যের দিকটি যে আমারই প্রথম চোখ পড়েছে তেমন মনে করতে পারেন আমার তরুণ পাঠকরা। আসলে তা নয়। পৃথিবীর বিখ্যাত সব লেখক, নবী মুহাম্মদের জীবনীকার সকলেই এই কথাগুলি লিখে গেছেন। প্রফেসর মুনির উইলিয়াম, স্যার উইলিয়াম ম্যুর, ম্যালকম ম্যাককোলের মত তিনশো বছর আগের লেখকরা ইসলামের উপনিবেশবাদী চেহারা নিয়ে বই লিখেছিলেন। ত্রিনিদাতের লেখক নোবেল বিজয়ী ভিএস নাইপলও ইসলামের উপনিবেশবাদ নিয়ে লিখেছিলেন। আশ্চর্যজনক হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলোকে বামপন্থি লেখকরাই সুস্পষ্টভাবে “ইসলাম বিদ্বেষ” বলে তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। ইসলাম একটি ধর্ম তার সমালোচনা তাও যৌক্তিক যা কেবলই কিতাবী তথ্য উপাত্তা নয়, ঐতিহাসিকভাবে দেশ ও জাতিগেুলোর উপর ইসলামের চাপিয়ে দেয়া জাতীয়তাবাদ দেখেও বামপন্থীরা সব অস্বীকার করে গেছেন!
এখনো সেটাই দেখি। জায়নবাদ, হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে কমরেডদের যে আস্ফলন ইসলামের বেলায় সেটাই নিশ্চুপ! যোগী আদিত্যনাথ হারাম আব্বাস সিদ্দিকী আরাম! বাংলাদেশের বামরাও ইসলামের সমালোচনাকে ইসলাম বিদ্বেষ মনে করে। খেয়াল করুন, ধর্মগুলোর প্রথা পার্বন নিয়ে আমি কিছু বলিনি। মানুষের ধর্ম পালন বিশ্বাস নিয়ে কিছু বলার নেই। ধর্মের রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদী উত্থানের জায়গাটাই ভয়ের। সেখানে ইসলাম ধর্মটাই জাতীয়তাবাদী একটি ধর্ম, ইসলাম সাম্রাজ্যবাদী রাজনৈতিক ধর্ম বলে যেখানে প্রমাণিত সেখানে কি করে “ইসলাম বিদ্বেষ” কথাটা বামপন্থীরা জনপ্রিয় করে ফেলল? এটা নিয়ে কথা বলতে গেলে ইসলাম ও কমিউনিজমকে পাশাপাশি রেখে আরেকটা লেখা লিখতে হয়। আপাতত আর নতুন কোন তর্কে যেতে চাই না বলে সে লেখায় বিরত খাকলাম...।
#সুষুপ্তপাঠক
#susuptopathok
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................