শায়েখ আবদুর রহমান ও বাংলা ভাই যারা কিনা জেএমবি’র প্রধান ছিলেন তাদের দুর্ভাগাই বলতে হবে। কেন না স্থানীয় চরমপন্থি কমিউনিস্ট, চোরাচালানকারবারীসহ বিভিন্ন অপরাধীদের জন্য ত্রাস হিসেবে উঠা বাংলা ভাই বাঘমারা গ্রামে এসবের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর পাশাপাশি সে গ্রামে শরীয়া প্রয়োগ করেছিলো। ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টালে দেখা যায় হাজী শরীয়তুল্লা ও তিতুমীও ঠিক একই রকম কাজ করেছিলেন।
বহিরাগত ইংরেজ নীলকরদের ও তাদের সহযোগী দেশীয় জমিদারদের উচ্ছেদ করে একটা ইসলামিক খেলাফত কায়েম করাই ছিলো তাদের লক্ষ্য। এখন যেমন করে তালেবানদের মত জঙ্গি সন্ত্রাসীদের বাম আম সকলে মিলে সমর্থন করে বলছে তারা সাম্রাজ্যবাদকে হটিয়ে আফগানদের নিজেদের শাসন কায়েম করেছে ইত্যাদি, তালেবানদের শরীয়া শাসন, সপ্তম শতাব্দীর বর্বর আইন প্রয়োগকে যেমন করে বিবেচ্য করা হচ্ছে না তেমন করেই ভারতীয় উপমহাদেশে তিতুমীর আর শরীয়তুল্লার ওহাবী ফরাজী কট্টর সুন্নী খিলাফতী বিশ্বাসকে বিবেচ্য করা হয়নি। ইরানের ইসলামিক খিলাফতের সময়ও বামপন্থিরা খোমনির মত মৌলবাদী ও তার ইসলামিক খিলাফতী ইরানকে বিবেচ্য না করতে আহ্বান করেছিলো। ফলে আন্তর্জাতিকভাবে ওসামা বিন লাদেন ও বাংলাদেশী দুই জঙ্গিকে আমাদের লিবারাল ও বামপন্থিরা একটু অবিচারই করেছেন বলে মনে হচ্ছে।
তিতুমীরের যদি ‘বাঁশের কেল্লা’ সফল হত তাহলে আমরা কি দেখতে পেতাম? চব্বিশ পরগণা, নদীয়া ও ফরিদপুর পর্যন্ত তিতুমীরের ‘খেলাফত রাষ্ট্র’। সেখানে তিতুমীর সবাইকে দাড়ি রাখতে বাধ্যতামূলক করছে, নারীদের ঘরে থাকতে বলছে, হিন্দুদের মত সব রকম আচার আচরণ প্রথাকে নিষিদ্ধ করছে, গান বাজনাকে নিষিদ্ধ করছে...। তিতুমীর ও শরীয়তুল্লাহ দুজনই গোটা অঞ্চলের মুসলমানদের এই বিধানগুলো অনুসরণ করতেই শুরুতে তাদের সামাজিক আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার মানে রাষ্ট্র গঠন করতে পারলে তার এগুলো বাস্তবায়ন করত। এখন যেমন তালেবানরা আফগানিস্থানে করেছে। কিন্তু সেই তিতুমীরকে মহাশ্বেতা দেবী কেন হিরোটিক করে উপন্যাস লিখলেন? শুধুমাত্র কৃষকদের নিয়ে নীলকর ও ইংরেজ সাম্রাজ্যবাদীদের বিরুদ্ধে তাদের লড়াইটা ছিলো বলেই তাদের ওহাবী কট্টর মুসলিম শাসনতন্ত্রের কথা চেপে যেতে হবে? আমাদের ভারতীয উপমহাদেশের ইতিহাস আসলে লিখেছিলো বামপন্থিরা। যারা সকলেই ছিলো বিদ্যাসাগর বিরোধী। রাশিয়া চীন ছিলো তাদের তীর্থস্থান। তারা হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছিলো এবং কমিউনিস্ট হবার কারণে স্বধর্ম সংস্কারের প্রতি ছিলো সহজাত বিরাগী। কিন্তু মুসলিমদের প্রতি ছিলো ততখানিই প্রীতিময়। কারণ ইংরেজরা তাদের হাত থেকেই ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছিলো। শুরুর দিকে মুসলিম হত রাজ্য ফিরিয়ে আনতে তখনকার মুসলিম ধর্মবেত্তারা বিচ্ছিন্নভাবে জিহাদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। বামপন্থিদের সেসব কারণেও (যেহেতু তারা মুসলিম মৌলবাদকে বিবেচ্য মনে করেন না) মুসলিম প্রীতি ছিলো। ফলে হাজী শরীয়তুল্লাহ তিতুমীরকে স্বাধীনতা আন্দোলনকারী বানিয়ে ফেলেছেন। আমার ধারণা মধ্যপাচ্যের বামপন্থি বুদ্ধিজীবীরা এক সময় লাদেনকে হিরো বানিয়ে বই লিখবে যে, সাম্রাজ্যবাদীদের রাতের ঘুম হারাম করে তুলেছিলো সে...!
সময় এসেছে ইতিহাস পর্যালোচনা করার। ইতিহাসের সব রকম মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক শাসক সাম্রাজ্য সবাইকেই তাদের আইডোওলিজ দিয়ে বিচার করার। শুধু সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়েছিলো বলেই কোন রক্তপিশাচ কিংবা মানুষের অধিকারহরণকারীকে সমর্থন করা যে অন্যায় সেটি ঐতিহাসিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................