আজ শচীনদেব বর্মণের জন্মদিন। শচীনদেব বর্মণের কুমিল্লার বাড়িটি এখন সরকারী মুরগি খামার! আর বাংলার রূপ দেখে বিমহিত কবি জীবনানন্দ দাশের বরিশালের বাড়িটি এখন একটি সরকারী কমিউনিটি সেন্টার! কুমিল্লায় জন্ম নেয়া মহান সংগীত ব্যক্তিত্ব শচীনদেব দেশভাগের পর কোলকাতা চলে গেলেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় নতুন করে গান ‘তাকদুর তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল, সব ভুলে যাই তাও ভুলি না বাংলা মায়ের কোল’। কিন্তু বাংলাদেশ তাঁকে ভুলে গেছেই নয়, তার পৈত্তিক বাড়িটি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে সরকারী জিন্মায় এখন একটি মুরগির খামার। আর রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ির একাংশ পৌরসভার পাম্প হাউস, একাংশ কমিউনিটি সেন্টার, আরেক অংশে আবদুর রাজ্জাক নামের এক ব্যক্তির বংশধররা ভোগদখল করে আছে। এমন না যে বাংলাদেশীরা বিস্মৃত মনোবিকারে লিপ্ত। এই কুমিল্লার সঙ্গে কবি নজরুলের সম্পর্ক ছিলো কেবল শ্বশুড়বাড়ি হিসেবে।
নজরুলের কবিমানস পুরোটাই কোলকাতা ও পুরলীয়াতে। বাংলাদেশের সঙ্গে তার স্মৃতি কেবল পাঁচবার কুমিল্লা ভ্রমণ। সেই স্মৃতি ঠিকই ধরে রাখা হয়েছে। সেটি অবশ্যই রাখা উচিত। কবি নজরুল বাংলা সাহিত্যের সম্পদ। কিন্তু শচীরদেব বর্মণ যে বাংলাদেশের কুমিল্লার সন্তান সেটাই তো বাংলাদেশের কেউ জানে না! জীবনানন্দ দাশ বরিশালে জন্মেছিলেন সেটি অনেকেই জানে ঠিকই, কিন্তু তার বাড়িটি নতুন প্রজন্ম দেখতে চাইলে কি দেখাবে বাংলাদেশ? বাংলাদেশে জন্ম নেয়া ঋত্বিক ঘটক, সুচিত্রা সেন, মৃণাল সেন কারোর বাড়িই রক্ষা করেনি। সেগুলোকে দ্রুত মুছে দেবার সব আয়োজন করা হয়েছে। এটি যে গোলাম আযমদের রাজনীতি এমন করেছে তা তো নয়, স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি এমন করেছ সেটাও নয়, এখানে “বাঙালী মুসলমান” জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা হয়েছিলো। জামাত মুসলিম লীগ কওমি ওহাবী সালাফীরা এগুলো করেনি। তারাও সুযোগ পেলে করত। কিন্তু বাংলাদেশের ৫০ বছর যারা বাংলা একাডেমি চালিয়েছে, শিল্পকলা একাডেমি চালিয়েছে তেমন কবি সাহিত্যিকরা সকলেই “বাঙালী মুসলমানের নিজস্ব ভাষা সাহিত্য নির্মাণের স্বপ্নে বিভোর” ছিলেন, আছেন। এই জাতীয়তাবাদই বাংলার কৃতি সন্তানদের মুছে ফেলতে সহজ করে দিয়েছে। ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি ভেঙ্গে রিকশার গ্যারেজ বানানোর সময় তো ফরহাদ মজহার রাখঢাক রেখে বলে ফেলেছিলেন, বাংলাদেশ কেন ঋত্বিক ঘটকের স্মৃতি ধরে রাখবে? যে কারণে একা নজরুল এখানে স্মৃতির মিনার হয়ে থাকলেও বাকীরা ‘হিন্দু’ পরিচয়ে অবহেলিত। রবীন্দ্রনাথ অনেক বড় নাম না হলে তার কুঠিবাড়িগুলো হতো গরুর খামার, মাদ্রাসা, না হয় ভুষিমালের দোকান...!
তবু শচীনদেব বর্মনের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
-সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................