বাঙালির নিজস্ব দেশজ আর্টফর্মগুলো হারিয়ে যাচ্ছে।।।
সেই অনুভব এবং সেই আশঙ্কা, সেই আক্ষেপ থেকেই তো ঈশ্বর গুপ্ত কবিগানের সংকলন করেছিলেন, কবিওয়ালা/কবিয়ালদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করেছিলেন। ঈশ্বর নিজেও কবিগানের দলে গান বাঁধতেন যৌবনে। আমার কথা হল, বাংলা সাহিত্যের আবহমান, জনপ্রিয় গঠনগুলো নিয়ে কাজ হল না কেন? আজ একজন প্রধান আধুনিক কবিকে গিয়ে যদি বলেন, একটা কীর্তন লিখে দিন, তিনি আকাশ থেকে পড়বেন, কারণ ওগুলো হল পিছিয়ে থাকা ব্যাপারস্যাপার। বাঙালি বরং জাপানি তেল মেখে হাইকু লিখবে, সেও ভাল! কিন্তু আমাদের শক্তিশালী দাপুটে কলমগুলো থেকে গম্ভীরা লেখা হল না কেন, ভাটিয়ালি, ভাওয়ালি ফরম্যাটে লেখা হল না কেন, পাঁচালি লেখা হল না কেন? ব্রাহ্ম, পিরালী, কমিউনিস্ট সংকোচ।
সুর থেকে বেশি দূরে সরিয়ে আনলে কবিতার মৃত্যু ঘটে। উত্তর ভারতে উর্দু আর হিন্দির কবিরা সবাই সুর করে তাদের কবিতা পড়ে। আমরাও একসময় তাই করতাম। চর্যাপদের প্রত্যেকটা কবিতাই কিন্তু গান, তাদের নিজস্ব তাল আছে, সেগুলো গাওয়া হত। আজ ভাবতেই পারি না। আজকের কবিরা কজন গৌড়ীয় রীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন? বাঙালির প্রাণের কাছে পৌঁছতে গেলে আজও গৌড়ীয় রীতিকেই অবলম্বন করতে হয়, জানেন না? আজও গীতগোবিন্দকে আশ্রয় করা দরকার।
আমার বক্তব্য হচ্ছে, অন্ধকারের উৎস অনেকটা গভীরে। যে অন্ধকারে আমরা ব্রাহ্ম উন্নাসিকতায় দেশজ শ্যামাসঙ্গীতকে খাটো করতে শিখেছি, ইয়ং বেঙ্গলি কালাপাহাড়ি ধাঁচে আগমনী গান লেখা বন্ধ করেছি, কমিউনিস্ট প্রগতিশীলতায় বা রাবীন্দ্রিক শ্লীলতায় ভাসানের সময়ে বা দোলের সময়ে যৌনতার বলিষ্ঠ গান বেআইনি করে রেখেছি, সেই অন্ধকারেই একদিন দেখছি, মমতা ব্যানার্জি নামে একজন কবি এসে গেছেন।
আমাদের রোগের উৎস অনেক গভীরে। রোগটা হল, বিদেশী প্রভাবে আলোকিত হয়ে, দেশজ শেকড়কে অগ্রাহ্য করা, এ রোগ পুরোনো। বাঙালিদের মধ্যে সেই শুরু, দেশজ শক্তির বদলে বিজাতীয় শক্তির পদলেহনের।। সেখানে কাজেই মধ্যবিত্তের অক্ষম কানাগলিতে আঁতেল ঘুরপাক। ফলে, জনবিচ্ছিন্ন। এরই মধ্যে, যে কবিরা অন্তত ছন্দটাকে ধরে রেখেছেন, তাদের ধন্যবাদ, কারণ, সেই প্রাচীনকাল থেকেই বাঙালি ছন্দকে খুব ভালোবাসে, অনুপ্রাস তো এই জাতির প্রচণ্ড ফেভারিট।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................