'অনুকল্প' সাময়িক বিধি,
সর্বদা আচরিত বিধি নয়
সংস্কৃতে 'অনুকল্প' শব্দটি একটি পুংলিঙ্গবাচক শব্দ [অনু+√কল্পি +অ(অচ্)- র্ম্ম]। শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল- মুখ্যকল্প হতে হীন কল্প বা গৌণকল্প, গৌণভাবে যা বিহিত। 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' নামক কোষগ্রন্থে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় অনুকল্পকে 'অধমবিধি' বলে অবিহিত করেছেন। অনুকল্পকে প্রতিনিধি বিধি বলা হয়েছে। শাস্ত্রে পূজা হোমসহ বিবিধ ক্ষেত্রেই অনুকল্পের বিধান রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মনুসংহিতায় মনু বলেছেন:
এষ বৈ প্রথমঃ কল্পঃ প্রদানে হব্যকব্যয়োঃ।
অনুকল্পস্ত্বয়ং জ্ঞেয়ঃ সদা সদ্ভিরনুষ্ঠিতঃ।।
(মনুসংহিতা:৩.১৪৭)
" হব্য ও কব্য অর্থাৎ দেবতা ও পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রদেয় অন্নাদির দানবিষয়ে পূর্বোক্ত শ্রাদ্ধকর্তার সাথে সম্বন্ধহীন বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণগণই প্রথম কল্প অর্থাৎ উৎকৃষ্ট পাত্র। তবে তাঁদের অভাবে সজ্জনগণ সর্বদা এই বক্ষ্যমাণ অনুকল্পের (প্রতিনিধিন্যায়ের) অনুষ্ঠান করবেন।"
এই শ্লোকের টীকায় অনুকল্প সম্পর্কে মেধাতিথি মুখ্যকর্মের অভাবে প্রতিনিধির মাধ্যমে যে সাময়িক কর্মের সমাধা করা হয় তাকে অনুকল্প বলে অভিহিত করেছেন, “মুখ্যাভাবে যোঽনুষ্ঠীয়তে প্রতিনিধিন্যায়েন সোঽনুকল্প উচ্যতে"।অনুকল্প সাময়িক বিধি, সর্বক্ষেত্রে এবং সর্বকালে অনুসরণীয় নয়। তাই ভগবান মনু বলেছেন, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ অনুকল্পোক্ত বা প্রতিনিধিরূপ বিধির অনুষ্ঠান করে, তবে সে দুর্মতি। সেই ব্যক্তির আধ্যাত্মিক কর্মের কোন পারলৌকিক ফল লাভ হয় না। অর্থাৎ অসামর্থ্য ব্যক্তির ক্ষেত্রেই কেবল অনুকল্প।
প্রভুঃ প্রথমকল্পস্য যোঽনুকল্পেন বর্ততে।
ন সাম্পরায়িকং তস্য দুর্মতের্বিদ্যতে ফলম্।।
(মনুসংহিতা:১১.৩০)
"মুখ্যকল্পোক্ত কর্ম করার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে লোক অনুকল্পোক্ত অর্থাৎ প্রতিনিধি বা তার অনুরূপ বিধির অনুষ্ঠান করে, তার পারলৌকিক কোনও ফল হয় না।"
এ শ্লোকের টীকায় টীকাকার কুল্লূকভট্টও বিষয়টি আরও সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। সামর্থ থাকার পরেও যেই ব্যক্তি আধ্যাত্মিক কর্মে প্রতিনিধিরূপ অনুকল্পের ব্যবহার করে তিনি দুর্বুদ্ধিগ্রস্ত। একমাত্র সাময়িক আপদ্কালের ক্ষেত্রেই বিষয়টি প্রযোজ্য, সর্বকালে নয়।
" যো মুখ্যানুষ্ঠানসমর্থঃ সন্ আপদ্বিহিতেন প্রতিনিধিনা অনুষ্ঠানং করোতি তস্য দুর্বুদ্ধেঃ পারলৌকিকম্ অভ্যুদয়রূপং প্রত্যবায়পরিহারফলঞ্চ ন ভবতি। আপৎকল্পেন যো ধর্মমিত্যনেনোক্তমপ্যেতৎ শাস্ত্রাদরার্থং পুনরুচ্যতে।"
যেমন প্রধানকর্ম এবং প্রধানকর্মের প্রতিনিধিকর্ম এক নয়, তেমনি শাস্ত্রনির্দিষ্ট বিধি এবং সেই বিধির অনুকল্প বিধি এক নয়। অনুকল্প বিধি সর্বদাই বিধির থেকে নূন্যতম হয়। তাই শাস্ত্রে আপদকালীন অনুকল্প বিধিকে অনুৎসাহিত করা হয়েছে এবং যিনি বিধি পালনে সার্মথ্যবান তাকে অনুকল্প বিধি পালনে নিষেধ করা হয়েছে।
কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক,
সংস্কৃত বিভাগ,
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................