টিপ হচ্ছে বাঙালীদের সংস্কৃতি। এটা ভারতীয় উপমহাদেশের স্থানীয়দের সংস্কৃতি। বহিরাগত আরবের জিহাদীরা যখন এখানে এলো তখন তাদের চোখে স্বাভাবিকভাবেই কাফের মুশরিকদের সংস্কৃতি হলো জাহেলিয়াতদের সংস্কৃতি। স্থানীয়দের ধর্মান্তর করে তাদের মধ্যে এই বার্তাই দেয়া হয়েছিলো নিজেদের হাজার হাজার বছরের যে সংস্কৃতি তা হচ্ছে হিন্দু মুশরিকদের যা মুসলমানদের জন্য বর্জনীয়। তাই শুরু থেকেই এই অঞ্চলের মুসলমানরা দুই ধারার, একটা সরাসরি বহিরাগত যারা স্থানীয়দের সংস্কৃতি বিদ্বেষী, দ্বিতীয়টি ধর্মান্তিরত ‘ট্যাঁশ ফিরিঙ্গি’ টাইপ। মানে যারা নিজের বাপকে বাপ না বলে পরের বাপকে বাপ ডাকে। বাঙালি মুসলমানদের কাছে টিপ, পায়ে নূপুর, পায়ে আলতা, শাড়ি সব হিন্দুয়ানী! যে কারণে অনেক জাতীয়তাবাদী মুসলিম ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা নাস্তিকের পর্যন্ত হিন্দুয়ানী ছুতমার্গ চোখে পড়ার মত!
অনেকে ‘আরবী সংস্কৃতি’ বলে মুসলমানদের সংস্কৃতি কালচার ভাবনাকে আখ্যায়িত করেন যা সম্পূর্ণ ভুল। ইসলাম উল্টো আরব সংস্কৃতিকে ‘জাহেলি সংস্কৃতি’ বলে শক্তি প্রয়োগ করে নিষিদ্ধ করেছিলো। আরবের সংস্কৃতিতে সবার উপরে কবিদের সন্মান ছিলো। কাবাঘরের দেয়ালে আরবরা তাদের প্রিয় কবিদের কবিতা লিখে রাখত। ভিনদেশীরা আড়ালে আরবদের কবি ও মদখোর বলে ডাকত। কাজেই গোঁফ চাঁচা দাড়িওয়ালা পর্দা করতে বলা ভয়ংকর দর্শন মুমিনের যে প্রতিচ্ছবি সেটি একান্তই ইসলামের, আরবের নয়। যদিও ইসলামের মধ্যে মুশরিকদের ধর্মীয় প্রথা আজো রয়ে গেছে। পৌত্তলিকদের ধর্মীয় প্রথাগুলি ইউরোপ থেকে ভারতবর্ষ প্রায় একই। গ্রীর্ক নাটকগুলি পড়লে দেখতে পাই সেখানে বিধবারা সাদা থান পরে মাথার চুল কেটে ফেলে স্বামীর জন্য শোক করছে। এই প্রথা ভারতীয় উপমহাদেশে হিন্দু ধর্মের মধ্যে দেখা যায়। যেমনটা সিদুর টিপও ছিলো আরবদের মধ্যে। আরবরা যে কোন শুভ বিষয় শুরু করার আগে উলু ধ্বনি দিতো। এখনো আরব কিছু গ্রামীণ উপজাতির মধ্যে প্রায় মুছে যাওয়া এই সংস্কৃতিগুলি অনুসরণ করতে দেখা যায় যদিও তারা মুসলমান।
যে পুলিশ সদস্যটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক কপালে টিপ পরার কারণে গালিগালাজ করেছে, হুমকি দিয়েছে সে তার ইসলামী দায়িত্বটুকু শুধু পালন করেছে। ইসলামের সঙ্গে বাঙালি সংস্কৃতির সংঘর্ষ অবধারিত। শুধু বাঙালি কেন, পৃথিবীর যে কোন সংস্কৃতি ও জাতিসত্ত্বার সঙ্গে ইসলামের বিরোধ একটি বাস্তব সত্য। কারণ ইসলাম সংস্কৃতি ও জাতিগত উপনিবেশ চালায়। ইসলাম ‘মুসলমান’ বলে একটি জাতিসত্ত্বার কথা বলে যার কোন নৃতাত্বিক বাস্তবতা না থাকায় অন্যের নৃতাত্বিক জাতিসত্ত্বা ও সংস্কৃতিকে শিরক, বিদাত, জাহেলি বলে ঘৃণাসহকারে বিরোধীতার কথা বলে। বাঙালি মুসলমান এই কারণেই শেকড়হীন। একজন চাইনিজ, রাশান কিংবা আফ্রিকান মুসলমান প্রত্যেকেই তার নিজ জাতির মধ্যে পরজীবী হয়ে বসবাস করে। নিজের নববর্ষকে শিরক মনে করে দূরে থাকে, নিজের সংস্কৃতিকে বিদাত, নিজের জাতির হাজার হাজার বছর আগের উত্তরসূরী মনে না করে ইসলামের ওমর ওসমান আলীকে নিজেদের পূর্বপুরুষ মনে করে। বাংলাদেশ দ্বিজাতিতত্ত্বের হাত ধরেই আজ একটি স্বাধীন দেশ যেখানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কাজেই বাংলাদেশে টিপ শাড়ি পরা নিয়ে যা ঘটতে দেখা যাচ্ছে সেটা নতুন নয়। মুসলমান ঘরের মেয়েরা শ্বশুড়বাড়ি গিয়ে টিপ পরে না। বাপের ঘরেও কটু কথা শুনতে হয়। যে নারী একজন গোঁফহীন দাড়িওয়ালা সুন্নতি পুলিশ সদস্যের রোষাণলে পড়েছেন তিনিও হিন্দু সম্প্রদায়ের।
সেদিন ঐ রাস্তায় কোন জিহাদী পুলিশটি ছিলো সেটি বের করতে পুলিশে চব্বিশ ঘন্টা নয় এক মিনিট লাগার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত নাকি সেই পুলিশ সদস্যকে নির্দিষ্ট করা যায়নি! আসলে জিহাদী ভাইটিকে আড়াল করতে চাইছে। এই যে পুলিশের মধ্যে গোঁফহীন দাড়িওয়ালা সদস্যদের দেখি এদের দেখে যদি এরপর সকলের ‘ইসলামোফোবিয়া’ জেগে উঠে তার জন্য কি আমেরিকা দায়ী থাকবে নাকি নরেন্দ্র মোদী? নোয়াম চমেস্কি জবাব চাই!
#সুষুপ্তপাঠক
3 April 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................