কাফিরিস্তানের গল্প

কাফিরিস্তানের গল্প
---------------------------

অমরা সবাই জানি প্রি-ইস্লামিক আফগানিস্তানের হিন্দু-বৌদ্ধ ঐতিহ্যর কথা। সেখানকার বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তির কথা কিংবা শেষ হিন্দু পাদশাহির কথা। কিন্তু আফগানিস্তানের এই সংস্কৃতির অবসান একদিনে হয় নি। এই পর্ব চলেছে প্রায় ১১০০ বছর ধরে এবং সম্পূর্ন হয়েছে শেষ আজ থেকে মাত্র ১২৫ বছর আগে ১৮৯৬ সালে শেষ নন-মুস্লিম প্রভিন্স কাফিরাস্তানের পরাজিত হয়ে নুরিস্তানে পরিনত হওয়ার মধ্য দিয়ে। 

কাফিরিস্থানের আসল ঐতিহাসিক পরিচয় কপিসা জনপদ। যা প্রাচীন কাশ্মীর এবং মধ্য এশিয়ার মধ্যবর্তী দেশ। বৌদ্ধ শাষণে এই অঞ্চলের প্রভূত উন্নতি হয় একসময়।  মুসলিম যুগে দীর্ঘ দিন পেরিস্থান নামে পরিচিত ছিলো হিন্দুকুশের দক্ষিণ ঢালের এই দূর্গম স্থানটি।  

এই অঞ্চলের ট্রাইবদের আরাধ্য দেবতা ছিলেন ইমরা/মরা( যমের অপভ্রংশ)  এবং ইনদর ( ইন্দ্রর অপভ্রংশ)।  এছাড়াও কাঠের মূর্তি বানিয়ে এন্সেস্টারদের শ্রদ্ধা জানানোরও ট্র‍্যাডিশন ছিলো।  এক কথায় বলতে গেলে প্রাচীন হিন্দু ধর্মের এক আঞ্চলিক শাখা যা আপন স্বকীয়তায়া লালিত। 

কিন্তু ইসলামি অগ্রাসনে ক্রমশ বিপদ ঘনিয়ে আসে এই অঞ্চলের, প্রথমে বদকসান অঞ্চল ( উত্তর আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান) এবং পরে উত্তর কাশ্মীরের বাল্টিকস্থান সম্পূর্ণ রূপে ইসলামাইজেশন হয়ে যায় ষোড়শ শতকের মধ্যে। কিন্তু তারপরেও দীর্ঘদিন এই অঞ্চল নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখেছিলো।  এমনকি গজনীর সুলতান মামুদের বাহিনীও বিশেষ কোনো ক্ষতি করতে পারে নি। 

কিন্তু ক্রমশ কাল ঘনিয়ে আসে এই অঞ্চলের স্বকীয় সংস্কৃতির ১৮৯৩ সালে। ব্রিটিশ - আফগান চুক্তিতে যে চিত্রাল প্রভিন্সে অংশ ছিলো এই কাফিরিস্থান...তার অধিকাংশ ডুরান্ডলাইনের পশ্চিমে পড়ে যায়। পূর্বে পড়ে থাকে শুধু কলস ভ্যালি (বর্তমানে পাকিস্তানে) 

১৮৯৩ এ আফগান আমির "আব্দুর রহমান খান" সিদ্ধান্তে আসেন ইসলামীকরনই একমাত্র বিভিন্ন উপজাতিতে বিভিক্ত আফগানিস্তানকে ঐক্যবদ্ধ করতে পারে। প্রথম আক্রমণ ঘনিয়ে আসে শিয়া হাজারা ট্রাইবসের উপর। সেই সময়কার জনঘনত্বের ৬৭% হাজারারা পরাজিত হয় আর অর্ধেক শিকার হয় জেনোসাইডের।  এর পর ১৮৯৫ এ আব্দুর রহমান খানের নজরে পরে ৬০ হাজার জনসংখ্যার কাফিরিস্থানের উপর। প্রায় বাকি দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন ওই অঞ্চলের মানুষ ৪০ দিন ধরে টানা লড়াই করে। কিন্তু চারদিক থেকে আক্তান্ত হয়ে বাধ্য হয় পরাজয় স্বীকার করতে। ১৮৯৬ সালের মধ্যে প্রায় সম্পূর্ণ জনগোষ্ঠীর ইসলামিকরন সম্পূর্ণ হয়। কয়েকশো মানুষ মাত্র পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নেয় কলস ভ্যালিতে। 

এই ভাবে অস্তমিত হয় আফগান - হিন্দুকুশের শেষ নন-মুসলিম শাষনের। এই অঞ্চলের নতুন নামকরণ করা হয় "নুরিস্থান".... ইসলামের আলোয় উদ্ভাসিত অঞ্চল।

যুদ্ধ জয়ের টোকেন হিসাবে আব্দুর রহমান খান নিয়ে আসেন বেশ কিছু কাঠের মূর্তি যা ১৯৯৬ র তালিবান শাষনের আগে অব্ধি সংরক্ষিত ছিলো কাবুল মিউসিয়ামে। তালিবানদের হাতে ধ্বংস প্রাপ্ত হয় প্রাচীন কাফিরিস্থানের আরধ্য মূর্তিগুলির। শেষ হয় এক স্বকীয়  সংস্কৃতিক চিহ্ন।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted