অভিনেতা অজয় দেবগনের ‘তানাজি’ সিনেমা জাতীয় চলচিত্র পুরস্কারে তিনটি পুরস্কার লাভ করায় ফের সিনেমাটি নিয়ে আলোচনা চলছে। মুঘল ও মারাঠা যুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে সিনেমা তৈরি হবে আর সেটা নিয়ে আলোচনা তর্ক বিতর্ক হবে না তা কি হয়? ভারতে মুঘল বাদশাহদের নিয়ে সিনেমা হয়েছে, টিপু সুলতান, সিরাজদৌল্লা সবাইকে নিয়ে সিনেমা হয়েছে। এই উপমহাদেশে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে আমরা সবাই মুঘলসহ অন্যান্য মুসলমান বীরদের কথাই জানি- যেন তারাই ভারতবর্ষ! বুকে হাত দিয়ে বুলন তো, কতজন ছত্রপতি শিবাজির সুবেদার ‘তানাজি’র নাম শুনেছেন? কতজন মারাঠাদের নিয়ে সিনেমা বানিয়েছে? যখনই কেউ বানাতে শুরু করেছে ওমনি হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে- মুসলমানদের খারাপভাবে দেখানো হচ্ছে!
তানাজি সিনেমাতে অভিনয় করেছিলেন সাইফ আলী খান। মুঘল পক্ষের উদয় ভান রাঠোর চরিত্রে সাঈফ আলী খান পর্দায় নিষ্ঠুরতা ফুটিয়ে তুলেন। কিন্তুই সে-ই তিনিই এই সিনেমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলেন। তিনি দাবী করেন ইংরেজ আসার আগে ‘ভারত’ বলতে কোন কিছুর অস্তিত্ব ছিলো না। তিনি ইতিহাস সম্পর্কে অনেক ভালো জানেন বলেই ছেলের নাম ‘তৈমুর’ রেখেছেন বলে দাবী করেন।
তৈমুর ভারতে এসে স্থানীয়দের (তাদের ‘হিন্দু’ বললে লিবারালদের মানতে কষ্ট হবে কি?) হত্যা করে মাথার খুলি দিয়ে পিড়ামিড তৈরি করেছিলেন। ভারতীয় মুসলমান কোন শিশুর নাম তৈমুর রাখার পর যদি সেই শিশুর পিতা দাবী করেন তিনি ইতিহাস সচেতনা থেকেই পুত্রের নাম রেখেছেন তখন সেই মানুষটি যে প্রবলভাবে মুসলিম জাতীয়তাবাদ নিজের মধ্যে লালন করে চলে তা না বুঝার কিছু নেই। সমস্যাটা শুরু হয়েছে তখন থেকে যখন থেকে ভারতের মুসলিম সাম্রাজ্য থিতু হয়ে বসার আগে যেসব স্থানীয় জাতিগোষ্ঠির রাজাদের বিরুদ্ধে মুসলমানরা যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছিলো সেসব কাহিনী নিয়ে সিনেমা টিভি সিরিয়াল তৈরি হতে লাগল। ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মারাঠা কি রাজপুতদের লড়াই দেখানোটাই নাকি ‘হিন্দুত্ববাদ’ প্রচার! ভারতে মুসলিম সাম্রাজ্য নিয়ে নিজেদের রাজার জাত, গৌরব অহংকার কোনটাই নিন্দনীয় নয়। নিজেদের ভারতের একদা শাসক শ্রেণীর বংশধর হিসেবে গর্বে গর্বিত ইতিহাসবিদের অভাব নেই। কিন্তু যখনই ছত্রপতি শিবাজীকে কেউ তুলে ধরতে চায় তখনই সেটা হিংসা বিভেদ সাম্প্রদায়িকতা...!
প্রশ্ন উঠতে পারে এরকম সিনেমা তৈরি হতে পারে কিনা? এখানে প্রশ্নটা এ জন্য যে এরকম ইতিহাস নতুন করে দেশপ্রেমের মোড়কে পরিবেশিত হলে তাতে মুসলমানদেরকে ভারতে ভিলেন হিসেবে দেখানো হয়। কথা যে মিথ্যে তা নয়। কারণ যারা মুঘলদের শাসনকে নিজেদের শাসন মানছেন তাদের তো নিজেদের ভিলেনই মনে হবে। ভারতে আফগান তুর্কি আরবী সাম্রাজ্যবাদকে ‘মুসলিম শাসন’ নাম দিয়ে নিজেদের শীর্য বীর্যের ইতিহাস হিসেবে বংশ পরম্পরায় তৃপ্তির ঢেকুর তুললে তো আজ নিজেকে ভিলেন মনে হবেই! হয় ভারতে আফগান তুর্কি আরবী শাসন হিসেবে দেখতে হবে কথিত এইসব ‘মুসলিম শাসনকে’, নতুবা মানতে হবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন রাজা বাদশাহর যুগ গেছে, তারা কে হিন্দু কে মুসলমান ডাজ নট মেটার- তাদের সঙ্গে আধুনিক ভারতবর্ষের একজন নাগরিক হিসেবে সমস্ত ইতিহাসের উত্তরাধিকারী আমরা। মন্দ যা তাও আমাদের, ভালো যা তাও আমাদের। তখন আর তানাজি হিন্দুর সঙ্গে মুসলমান মুঘল যুদ্ধের কোন আঁচ থাকবে না। আর সাঈফের মত কোন মুসলমান ভুলেও নিজের ছেলের নাম তৈমুরের মত একটা খুনির নামে নাম রাখবে না। যতদিন ভারতের মুসলিম সাম্রাজ্যবাদকে নিয়ে আপনি গর্বিত ততদিন তানাজিদের নতুন করে হিন্দু বীর বানানো হবে। যদি আপনি মুসলিম হিসেবে মুঘলদের নিয়ে গর্বিত হয়ে কোন দোষ না করে থাকেন তাহলে তানাজির পক্ষ নিয়ে নিজেদের হিন্দু বীরদের নিয়ে গর্বিত হওয়াও কোন হিন্দুর জন্য কেন দোষের হবে?
ছবি: উইকিপিডিয়া, তানাজি সিনেমার পোস্টার
-সুষুপ্ত পাঠক
#সুষুপ্তপাঠক
28 July 2022
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................