ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা জীবনের শেষ ১১ টা বছর ধরে আক্ষরিক অর্থেই বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন পাশ্চাত্যের মানসভূমিতে!

প্রচলিত অর্থে ঈশ্বরবিশ্বাসী বলতে যা বোঝায় তা আমি কখনোই নই। অলৌকিক অজানা কোনো শক্তির সামনে ভয়ে হোক কিংবা শ্রদ্ধায় হোক কোনোদিন মাথানত করার চিন্তাভাবনাই আসেনি।  ধর্মীয় রীতিনীতিও কিছুই মানিনা মন থেকে। আর ইসকন নামক সম্প্রদায়টির অন্য দেবদেবীদের অপমান করা কৃষ্ণভক্তি ( কালীকে কৃষ্ণদাসী বলা ইত্যাদি ইত্যাদি ) বা ঘাসপাতা খাওয়া নিয়ে গোঁড়ামী তো আজ পর্যন্ত মেনে নিতে পারেনি।

 এটা আমারই দুর্ভাগ্য বলতে হবে যে আজ পর্যন্ত যে কজন ইসকনীর সাথে কথা হয়েছে‚ প্রত্যেকেই কম করে একবার হলেও আমায় নিজেদের মতো তৃণভোজী বানানোর চেষ্টা করেছে।  কেন রে ভাই? জীবনে তো ওই একটাই সুখ আছে আমার‚ মাঝেমধ্যে ভালোমন্দ কিছু খেতে পাই। সেইটুকুও না কাড়লে চলছে না? ইনফ্যাক্ট এখন কোনো ইসকনীর সাথে স্বতঃ - রজঃ- তমঃ ইত্যাদি ইত্যাদি খাবারের ভাগ ও কর্মভেদে প্রয়োজনীয়তা বা প্রভুপাদ ছাড়াও গীতার অন্য ব্যাখ্যা নিয়ে কথাবার্তা বলতেও যাই না। জানি শুনবে না‚ খামোখা তর্ক করবে। 

কিন্তু হ্যাঁ‚ তার সাথে এটাও সত্যিই যে নীচের প্রভুপাদের এই ছবিটা আমার জীবনের অন্যতম inspirational ছবিগুলোর মধ্যে একটা।  আমার লাইফে সমস্যা কম নেই। নিরন্তন সমস্যাই দেখে আসছি জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই।  মাঝেমধ্যেই ইচ্ছা হত সবকিছু একেবারে শেষ করে দিতে। এখন অবশ্যই হয়না‚ বাট লাইফে সত্যিই একটা স্টেজ এমন পার করেছি যখন বেশ কয়েকবার সুইসাইডের চিন্তাভাবনা এসেছিল। কার সৌভাগ্য‚ কার দুর্ভাগ্য তা জানিনা কিন্তু সেই চিন্তা আর ফলপ্রসূ হয়নি! 

লাইফের সেই স্টেজে‚ ইনফ্যাক্ট এখনো কোনো দুর্বল সময়ে যাদের জীবনকথা আমায় অনুপ্রেরণা যোগায় তাদের মধ্যে প্রভুপাদ একজন। 

না‚ কোনো অলৌকিক আশ্বাস বা ভক্তিটক্তি কিছু না। ভদ্রলোকের জীবনকাহিনীটাই এতটাই অনুপ্রেরণামূলক যে‚ যেকেউ সেখান থেকে নিজেকে চার্জ করে নিতে পারে। 

একটা লোক‚ তার ৭০ বছর বয়স‚ যে বয়সে বেশিরভাগ মানুষই বাতিলের খাতায় চলে যায়‚ অন্যের বোঝা হয়ে বেঁচে থাকতে হয় বেশিরভাগ মানুষকে যে বয়সে‚ সেই বয়সের একজন একা একা নিঃস্ব অবস্থায় সাত সমুদ্র‚ তেরো নদী পার করে চলে গেল আমেরিকায়।  তাও সেটা আজকের মতো গ্লোবাল ভিলেজের যুগে না‚ ১৯৬৫ সালে! কল্পনাও করা যায় কি?  তারপর আজ পর্যন্ত কেউ যা করতে পারেননি উনি তাইই করেছেন। ভক্তি আন্দোলনের দ্বারা জীবনের শেষ ১১ টা বছর ধরে আক্ষরিক অর্থেই বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছেন পাশ্চাত্যের মানসভূমিতে! হ্যাঁ স্বামী বিবেকানন্দের কথা মাথায় রেখেই বলছি।  বিবেকানন্দের পথ ছিলো জ্ঞানযোগের্। যা অবশ্যই সমাজের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর মাঝে সীমিত থাকতে বাধ্য। কিন্তু ভক্তিবাদ আরো অনেক বেশী উদার! সবাইকেই সে নিজের বিশাল বুকে আশ্রয় দিতে পারে। 

সেই একজন নিঃস্ব বৃদ্ধের তৈরী সংগঠনই আজ পুরো পৃথিবীর কাছে ভারতকে তীর্থভূমি বানিয়েছে ( ঠিক যেভাবে পুরো এশিয়া ও ইউরোপের এক অংশের কাছে  ভারতকে তীর্থভূমি বানিয়েছিলেন ভগবান বুদ্ধ।  আজও প্রাচীন মান্দারিন ভাষায় ভারতকে বলা হয়  স্বর্গভূমি। ) ইউরোপ - আমেরিকা - রাশিয়া - আফ্রিকা থেকে কৃষ্ণভক্ত মানুষরা এসে আজ ভারতের মাটিতে লুটিয়ে পড়ে কীর্ত্তন করছে‚ হরে কৃষ্ণ বলে মেতে উঠছে জীবনের সব চাওয়া পাওয়া ভুলে। এই কৃতিত্ব অবশ্য প্রভুপাদের!

আজ ইসকন প্রতিষ্ঠাতা ও আচার্য শ্রীল অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের জন্মতিথিতে সশ্রদ্ধ প্রনাম জানাই এই ভক্তিবাদী কর্মবীরকে।

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted