#আমার একটি দুই লাইনের পোস্ট একজন ফেইসবুক বন্ধু শেয়ার করতে গিয়ে দীর্ঘ একটি মন্তব্য করেছেন যা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ হয়েছে। তার মন্তব্যে ‘মুসলিম স্বাতন্ত্রতার’ সাফাই গাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সমাজ জীবনে সংস্কৃতিমনা, সেক্যুলারবাদীরা প্রতিনিয়ত নিজ বাঙালিত্ব ও নিজস্বতার পক্ষে লড়ে যাচ্ছে যে ইসলামিক কালচারের বিরুদ্ধে এই মুসলিম স্বাতন্ত্রতার পক্ষে থাকা বাঙালি হিন্দু লিবারালদের সেকথা মাথায় নেই।
#আমার ফেইসবুক বন্ধু লিখেছেন-
“#একটা ব্যাপার মাথায় রাখা জরুরি। বাঙালি সংস্কৃতিতে যেসব ব্যাপারকে "হিন্দু" এলিমেন্ট বলার চেষ্টা করা হয় তার অধিকাংশ আসলে স্থানীয় ভৌগোলিক এলিমেন্ট, যেগুলোর সাথে 'বৈদিক' ধর্মের আদতে কোনো সম্পর্ক নেই বললেই চলে। আবার এটাও ঠিক যে, বাঙালি সংস্কৃতিতে যে অবৈদিক এলিমেন্ট প্রায় নেই সেটারও কৃতিত্ব অনেকাংশে মুসলমানের। যেমন, ধরেন গায়ে হলুদের যে রীতি- এটা অবৈদিক রীতি, এসেছে মূলত সাঁওতালদের কাছ থেকে, বৈদিক রীতিতে এই জিনিসের কোনো আদি অস্তিত্ব নেই। আধুনিক সময়েও হিন্দু বাঙালি এটাকে যতটানা গ্রহণ করেছে, মুসলমান বাঙালি এটাকে তারচে অনেক বেশি আয়োজন করে গ্রহণ করেছে”
#বাঙালি সংস্কৃতিতে “হিন্দু এলিমেন্ট” স্থানীয় ভৌগলিক এলিমেন্ট সেটা আমরা বাংলাদেশের নাস্তিক সেক্যুলার লিবারালরা দিনরাত বলে এসেছি যখন মুসলমানবাদীরা আমাদের সংস্কৃতিকে “হিন্দুয়ানী” বলে প্রত্যাখান করার আহ্বান জানিয়েছে। গায়ে হলুদ আরবি তুর্কি আফগান মুসলমানরা গ্রহণ করেনি। এটা ধর্মান্তরিকত মুসলমানদের লোকজ আয়োজন। এখনো গ্রামের মুসলমানদের বিয়ের অনুষ্ঠানে প্রচুর “হিন্দুয়ানী” আয়োজন থাকে যার বিরুদ্ধে ইসলামিস্টরা কট্টর হয়ে উঠছে। কাজেই ভারতবর্ষে মুসলমান যদি মুসলমানই থেকে যেত তাহলে সে কি করে বাঙালি থাকত? কারণ আমার সেই ফেইসবুক বন্ধু লিখেছেন-
“#একই কথা খাটে খোদ বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও। বৈদিক ধর্মাচরণে সর্বভারতীয় সংস্কৃত'র প্রাধান্যের কারণে বাংলার আঞ্চলিক স্বাতন্ত্রের ভাষা হিসেবে 'বাংলা' রাজনৈতিক গুরুত্ব পেয়েছে মুসলমান শাসকদের কাছেই। সুতরাং, বাঙালি সংস্কৃতিতে সবথেকে বড় মুসলমান এলিমেন্টটাই এটা যে, তা বৈদিক এপ্রোপ্রিয়েশনের মুখেও খুব শক্তভাবে অবৈদিক রয়ে যেতে পেরেছে। এরজন্য মহররমকে সার্বজনিন হয়ে ওঠার দরকার নেই। এমনকি বাংলার হিন্দু বলে যারা পরিচিত, তারাও ধর্মাচরণে অবৈদিক- গান্ডে পিন্ডে মাংশ গেলেন, বৈদিক পুরাণের মূলদেবতাদের খুব একটা ঘটা করে পুজো দেননা। এগুলো কিন্তু এসেনশিয়ালি মুসলমান রাজনৈতিক অবদান। বাঙালি যে বৃহত্তর হিন্দুস্তানিদের (হিন্দু না কিন্তু) থেকে ভিন্ন একটা সাংস্কৃতিক পরিচয়, এর কারণই এই যে বাঙালির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ অবৈদিক থাকতে চেয়েছে। এক অর্থে বাঙলার মুসলমান মুসলমানই হয়েছে কারণ সে আদতে বাঙালি। সুতরাং মুসলমান বাঙালি হতে পারে কিনা এই প্রশ্ন করাটাই মূর্খতা। বাঙালি না হলে তারপক্ষে মুসলমান হওয়াটাই অসম্ভব”
#এগুলো বামপন্থিদের শেখানো বুলি! হিন্দুস্থানীদের মত কেন বাঙালিরা হতে যাবে? বাংলার জনগোষ্ঠির নিজস্ব সংস্কৃতিকেই তারা লালন করে গেছে। কিন্তু বাঙালি মুসলমান যখনই রাজনৈতিকভাবে স্বাতন্ত্র জাতি হতে গেছে তখনই সে বাঙালি কিনা সেই বিতর্ক উঠেছে। ইতিহাস জানতে হবে ওহাবী আন্দোলন শুরুতে একটি ধর্মীয় সামাজিক আন্দোলন ছিলো যেখানে হাজি শরীয়তুল্লাহ ও তিতুমীর হিন্দুদের মত নাম, হিন্দুদের মত পোশাক, আচার আচরণ ত্যাগ করার ডাক দিয়েছিলো। এর আগে বাংলার মুসলমানদের নাম শুনে বুঝার উপায় ছিলো না সে হিন্দু নাকি মুসলমান। সবার নামই প্রায় বাংলায় রাখা হতো। ড. মুনতাসির মামুন লিখেছেন মাত্র দুইশো বছর আগেও বাংলার গ্রামগুলিতে ঈদের নামাজ পড়তে জানা মুসলমান খুঁজে পাওয়া যেত না। ঈদ ছিলো বিদেশী মুসলমান শাসকদের উত্সব। স্থানীয়রা (হিন্দু মুসলমান কৃষক শ্রেণী) অবাক চোখে ভিনদেশীদের উত্সব চেয়ে চেয়ে দেথত। কেল্লায় তোপ দাগানো, বাজি পোড়ানো দেখাটা ছিলো তাদের কাছে অন্যের উত্সব দেখার মত। কিন্তু যথন থেকে এই স্থানীয়দের ‘মুসলিম জাতি’ হিসেবে আলাদাভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা হলো তখনই তারা বাঙালিত্ব থেকে বেরিয়ে পড়তে লাগল। নিজেরাই দাবী করল তারা মুসলমান। বাঙালিদের সব কিছুই হিন্দুদের যা পরিত্যাক্ত। মীর মোশাররফ হোসেনের মত লেখক বাঙালি মুসলমানদের সমস্ত ‘হিন্দুয়ানী’ ত্যাগ করতে বলেছিলেন...।
#মুসলিম শাসকদের বাংলা ভাষায় লিখিত সাহিত্যকে পৃষ্ঠপোষকতা বা বাংলাকে রাজধানী করে শাসন করাটাকে আলাদাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। বিদেশী এইসব শাসকদের স্থানীয় ধর্মান্তরিত মুসলমানরা নিজেদের পূর্বপুরুষ ভাবাটা, তাদের সংস্কৃতিকে নিজেদের সংস্কৃতি ভাবাটা যে আত্মপ্রতারণা সেটি বুঝতে না পারাটা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিকতা!
Md Amin
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................