আযহারি কিভাবে হিমালয় দেখলেন?

আযহারি কিভাবে হিমালয় দেখলেন?

মাওলানা মিজানুর রহমান আযহারির আরেকটি ওয়াজের কথা বলি৷ তিনি বলেন, কায়রো থেকে কাতার যাওয়ার পথে তিনি বিমান থেকে হিমালয় দেখেছেন। শ্রোতারা প্রশ্ন না করেই বললেন, সোবহানাল্লাহ! আমরাতো প্রায় ৪ লক্ষ কি.মি. দূরের চাঁদকে দেখি অথচ মাত্র পৌনে তের হাজার কি.মি দূরে থাকা স্ট্যাচু অব লিবার্টিকে দেখি না। কেন? ভাস্কর্যটি অনেক দূরে ও ছোট বলে? আসলে আলো সরল পথে চলে আর পৃথিবী গোলাকার বলেই আমরা পৃথিবী পৃষ্ঠে থাকা ১৫-১৬ কিলোমিটারের বেশি দূরের বস্তুকে দেখতে পাই না। পৃথিবীর গোলাকার শরীরই বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। যত শক্তিশালী দূরবীনই হোক স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখা যাবে না এই কারণেই। বড় স্থাপনা আরেকটু দূরে থেকেও দেখা যায়। যেমন নির্মল আকাশ থাকলে আমরা পঞ্চগড় থেকে হিমালয়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ দেখতে পাই। অবশ্য বাংলাবান্ধা থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার দূরত্ব মাত্র ১২২ কি.মি.।আকাশে অনেক ধুলিকনা বা কুয়াশা থাকলে তা আর দেখা যায় না। আর কায়রো থেকে হিমালয় পর্বতমালার দূরত্ব ৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি। পৃথিবীর পরিধি ৪০ হাজার কি.মি. ধরলে এই দূরত্বের মধ্যে ৪৫ ডিগ্রি কোন উৎপন্ন হবে। সে হিসেবে কায়রো থেকে হিমালয়ের চূড়া দেখা যাবে যদি তার উচ্চতা কমপক্ষে ২ হাজার কি.মি. হয় (অনুমান করেছি, অংক করিনি)। বিমান সাধারণত ১০ কিলো মিটার উপর দিয়ে চলে। ওই ওপর থেকে দেখতে হলে হিমালয়ের উচ্চতা আরো ১০ কিলোমিটার কম হলেও চলবে মানে ১৯৮১ কিলোমিটার হতে হবে! হিমালয়ের উচ্চতা আবার ৯ কিলোমিটারেরও কম। 


তাই ওই উচ্চতা থেকে সম্পূর্ণ হিমালয় দেখতে হলে বিমানকে আরো সোয়া দুইশগুন উপর দিয়ে চলতে হবে। কাতার থেকেও হিমালয়ের দূরত্ব ৩২৫৩ কিলোমিটার। সেখান থেকেও দেখা সম্ভব নয়। তার মানে এসব গল্প একেবারেই বানোয়াট! তাহলে কেন বলা হয় এমন বানোয়াট গল্প? শুধুই ভক্তদের কাছে নিজেকে বড় করে তুলতে! ভক্তদের মিথ্যা বলেই খাদ্য বানাতে হয়৷ ভক্ত মানেই খাদ্য৷

বছর কয়েক আগে তারেক মনোয়ার সাহেবের ওয়াজ খুবই আলোড়ন তুলেছিল। তিনি দাবি করেছিলেন, তিনি আর বিমানে নয়, রকেটেই যাতায়াত করেন। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ফুটবল খেলেছেন। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন৷ ভক্তরা 'সোবাহান আল্লাহ' বলে চেঁচিয়ে উঠলেও সচেতন মানুষের কাছে দাবিগুলোও হাস্যকর হয়ে উঠেছিল। রকেটতো আর ঢাকা থেকে নোয়াখালি/ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাতায়াত করে না। রকেট যায় মহাশূন্যে। চাঁদে তো আর ওয়াজ করতে যাওয়া যায় না। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগেও তিনি খেলেননি৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দায়ও যাননি। তাহলে কেন এমন দাবি করেন? নিজেকে বিরাট কিছু জাহির করার জন্যই এমনটা করেন যাতে ভক্তরা আরো আহ্লাদিত হয় ও আদর্শ খাদ্য হয়ে উঠে৷ হাত ভরে তাদের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে দেয়। মাওলানা কাজী ইব্রাহিম সাহেবও এমন সব আজগুবি কথা বলেন যা শুনে সচেতন মানুষ হাসাহাসি করে। আর অন্ধ-মূর্খ ভক্তরা ভাবে- কতো বড় বিজ্ঞানী! তারা নিজেকে এমনসব মানুষের সামনে জাহির করেন যারা এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানে না। এসব বিশাল বিশাল দাবি শুনে সরল মানুষেরা ভেবে বসেন- আহা! বক্তা না জানি কতো ওজনদার! সমস্যা হচ্ছে ইউটিউবের পাল্লায় পড়ে। এখান থেকেই বিষয়গুলো সচেতন মানুষের কাছে এসে পড়ে এবং তারা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন তুলেন। অন্য ধর্মের মানুষের কাছে মুসলিমদের ছোট হতে হয়, হাসির পাত্র হতে হয়।

আমার শৈশবে অর্থাৎ ৩০/৪০ বছর আগেও দেখেছি এমন মিথ্যার ফোয়ারা ছুটাতে৷ একজন প্রখ্যাত বক্তা দেলোয়ার হোসন আনসারিকে এমন দশটি ভুল তথ্য ধরিয়ে দিলে তিনি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি৷ শুধু আমার বাবাকে ডেকে বলেছিলেন, আপনার ছেলে অনেক জানে৷ মানে হল তিনিও জানতেন তার বক্তব্য মিথ্যায় ভরপুর৷ বাস্তবিক চাঁদে গিয়ে নীল আর্মস্ট্রং ফাঁটা দাগ দেখেননি বা আজান শুনেননি৷ এডিসন, আইনস্টাইন মূর্খ নন৷ ওই যে প্রশ্ন তুলতে না পারা মূর্খ ভক্তের দল খাদ্য হয়ে বসে আছে৷ তাদেরতো খাদ্য বানাতে হবে৷ তারাতো এসবের সত্যতা অনুসন্ধান করবে না৷ তাই মিথ্যা বলতে তাদের জিভ আটকায় না৷ তাই হিমালয় না দেখলেও ভুয়া দাবি তারা করতেই থাকে৷ হায় মূর্খ খাদ্যের দল! তোমাদের বোকা বানিয়েই যাচ্ছে!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted