বিবর্তনবাদ ডারউনের এক হাজার বছর আগেই একজন মুসলমান বিজ্ঞানী আবিস্কার করেছিলেন!

আপনি জানেন কি বিবিসি বাংলা তিন বছর আগেই দাবী করেছিলো বিবর্তনবাদ ডারউনের এক হাজার বছর আগেই একজন মুসলমান বিজ্ঞানী আবিস্কার করেছিলেন! হা হা হা... কী শুনে অবাক লাগছে? বিবিসি বাংলা জানে বিবর্তনবাদকে অস্বীকার করার দিন শেষ হতে চলেছে। একদিন মুসলমানরা এটাকেও কুরআন ও মুসলমানদের অবদান হিসেবে দাবী করতে চাইবে তাই তারা দ্বিনের স্বার্থে অনেক আগেই মুসলমানদের হয়ে একটা কাজ করে রেখেছে। ২০১৯ সালে খুবই চাতুরির সঙ্গে গোঁজামিল দিয়ে বাগদাদের দার্শনিক আল #জাহিজকে ‘বিবর্তনবাদের জনক’ বানিয়ে ফেলেছিলো বিবিসি বাংলার এহসান মাসুদ!




অথচ গ্রীক বিজ্ঞানী #আনাক্সিমান্ডার (খ্রিস্টপূর্ব ৬১০- খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০) যুক্তি দেখান, যেহেতু মানব শিশু জন্মের পর একদম নরম তুলতুলে অপরিপক্ক অবস্থায় থাকে তাই বনের জীবনে আদিম মানুষদের শিশুরা আজকের শিশুদের মত করে জন্মালে প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকতে পারত না। স্টিফেন হকিং এটাকে মানবেতিহাসে ‘বিবর্তনবাদের’ প্রথম চিহৃ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। আদিম মানুষ আমাদের মত ছিলো না- এটাই প্রথম সন্দেহ যা বিবর্তনবাদের আভাস ছিলো।(দি গ্রান্ড ডিজাইন, স্টিফেন হকিং ও লিওনার্দ ম্লোদিনাও, পৃষ্ঠা ১৮)।

#খেয়াল করুন, আনাক্সিমান্ডার বাগদাদের আল জাহিজ থেকে প্রায় এক হাজার চারশো বছরে আগে জন্মেছিলেন। আল জাহিজ জন্মগ্রহণ করেন ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে। আনাক্সিমান্ডার জন্মগ্রহণ করেন খ্রিস্টপূর্ব ৬১০। তাহলে লাফ দিয়ে বিবিসি বাংলা ডারউনের পূর্বে বিবর্তনবাদের জনক হিসেবে ‘মুসলিম বিজ্ঞানী’ আবিস্কার করাটা যে পুরোপুরি জাল সেটি নিশ্চয় আপনাদের বুঝতে কোন অসুবিধা হয়নি। আসলে কি জানেন, আমরা কেউ বলছি না আনাক্সিমান্ডার বিবর্তনবাদের সূচনা করেছিলেন, কিন্তু যে প্রশ্ন তিনি তুলেছিলেন, প্রথম মানুষ যে পূর্বে আজকের মত ছিলো না সেটি সন্দেহ হিসেবে যুগান্তকারী ছিলো। আল জাহিজ #আব্বাসীয় খিলাফতের সময় লাতিন ভাষার বিজ্ঞান দর্শনের বইগুলি খলিফাদের পৃষ্টপোষকতায় যে অনুবাদ হয়েছিলো আরবীতে- সেই জ্ঞান চর্চায় নিজেকে আলোকিত করেছিলেন। তিনি প্রাণী বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। আল জাহিজের জন্মের আরো পাঁচশো বছর আগেই গ্রীকদের বইগুলি অনুবাদ ছড়িয়ে পড়েছিলো আরব বিশ্বে। গ্রীকদের এইসব আবিস্কার সম্বলিত গ্রন্থ সেই হযরত মুহাম্মদের সময়কালে আরবে অনুবাদ হয়ে আসত যা খোদ মক্কা মদিনার অধিবাসীরাই অধ্যায়ন করেছিলো। অন্য একটা লেখায় দেখিয়েছিলাম কুরআনে গ্রহ-নক্ষত্র, চাঁদ সূর্য ও ভ্রুণ সম্পর্কিত তথ্যগুলো আরবে গ্রীদের লিখিত বইগুলো থেকে ধার করা যা #মুহাম্মদ গ্রহণ করেছিলেন সমসাময়িক আরবী শিক্ষিতদের কাছ থেকে। আরবে ইসলাম বিজয় হবার পরে ইসলামী সাম্রাজ্য বিস্তারে মুসলমানরা দিকে দিকে জিহাদ করতে ছুটতে থাকে এবং একের পর এক সাফল্য আসতে থাকে। সেই ধারায় দক্ষিণ ইরাকের বাসরা নগরিতে ইসলামী খেলাফত দৃঢ় অবস্থানে গড়ে উঠে। ইসলামি খিলাফত নামে হলেও কার্যত বাগদাদ বসরার শাসকদের অনেকেই জ্ঞান বিজ্ঞানে আগ্রহী ছিলেন। মুসলমানদের কাছে একমাত্র জ্ঞানের বই কুরআন মনে করা হলেও এইসমস্ত শাসকরা জ্ঞানকে ধর্মনিরপেক্ষ ও পার্থিব বিষয় বলে মনে করতেন। তাই তারা গ্রীক ও ভারতীয় বিজ্ঞানীদের লেখা বই আরবীতে অনুবাদ করে আরবী ভাষাভাষিদের পড়ার সুযোগ করে দেন। এই সময়কালেই শাসকদের পৃষ্টপোষকতায় এক শ্রেণীর মানুষের গ্রুপিং শুরু হয় যারা ধর্মতত্ত্বকে যুক্তি দিয়ে বিচার করে গ্রহণ করা শুরু করেন। তখন ছিলো আব্বাসীয় খিলাফত। আব্বাসীয় খলিফাদের পৃষ্টপোষকতায় এই যুক্তিবাদীদের বলা হয় ‘#মুতাজিলাহ’ সম্প্রদায়। এরা মিরাজ ভ্রমণের বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। ‘জ্বিন জাতি’ বলতে কিছুর অস্তিত্ব থাকা বিষয়ে সন্দেহ প্রসন করেন। ঠিক এই সময়কালেই ৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন আল-জাহিজ। বসরাতে তখন আরবীতে গ্রীক গ্রন্থগুলো অনূদিত হয়ে গেছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের একমাত্র কেন্দ্র তখন গ্রীক সভ্যতা হয়ে রোম সভ্যতা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আল-জাহিজের মত বিজ্ঞানীদের জ্ঞানের উৎস গ্রীক চিন্তানায়কদের লেখা বইগুলো থেকে আগেই বলেছি। পরবর্তীকালে আল-জাহিজ প্রাণীদের টিকে থাকার জন্য লড়াই করতে হয় বলে মত দেন। তিনি একটি বই লেখেন যেখানে তিনশ প্রাণীর বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। এটা থেকে আল-জাহিজ বিবর্তণবাদের কথা বলেছেন বা মানুষ অন্য প্রাণী থেকে বিবর্তিত হয়েছে এমন কোন ধারণাই করা যায় না। প্রাণীদের বিবরণ, প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে প্রাণীদের টিকে থাকতে হয়- এ থেকে প্রাণীরা বিবর্তিত হয়ে বহু প্রজাতীর সৃষ্টি করেছে এমন কিছু ধারণা করা যায় না। ডারউনের আগে আল জাহিজের লেখা পড়ে দুনিয়ার কোন বিজ্ঞানিও তার ধরতে পারেননি। কিন্তু #ডারউনের আবিস্কারের শতবর্ষ পরে জাকির নায়েকের মত করে বিবিসি বাংলা আল জাহিজের মধ্যে বিবর্তনবাদ আবিস্কার করে বসে আছে! আল্লামা ইকবাল আল জাহিজের অনেক অনুরাগী ছিলেন ‘মুসলিম বিজ্ঞানী’ হিসেবে তাকে নিয়ে গর্ব করতেন। আল জাহিজ মানুষের জন্মকে যদি বিবর্তিত হয়ে  অন্য প্রাণী থেকে এসেছে বলতেন তাহলে একজন গোঁড়া মুসলমান হিসেবে ইকবাল কিছুতে জাহিজকে মান্য করতেন না। পৃথিবীর কেউ ডারউনের আগে জাহিজ পড়ে তার লেখায় মানুষের উদ্ভব অন্য প্রাণী থেকে হয়েছে এমন কোন তথ্য না পেলেও বিবিসি বাংলার এহসান মাসুদ পেয়ে গিয়েছেন! 

#বিবিসি বাংলা রেডিও ‘ইসলাম ও বিজ্ঞান’ নামের অনুষ্ঠান তৈরি করেছিলো বিজ্ঞানকে ইসলামী হিসেবে বিভক্ত করতে এবং মানুষের মধ্যে মুসলিম হিসেবে গর্ব তৈরি করে মানুষকে মুসলিম জাতীয়তাবাদী হিসেবে গড়ে তুলতে। এরাই আবার কঠরভাবে ‘হিন্দুত্ববাদের বিরোধী! হা হা হা...। যাই হোক, এরকম অনুষ্ঠান বা নিউজ তৈরি করে বিবিসি সাধারণ মানুষের কাছে যেটি প্রচার করতে চেয়েছে, বিবর্তনবাদ একজন মুসলিম প্রথম আবিস্কার করেছিলো। এতে মুসলিম হিসেবে গর্ব বৃদ্ধি পাবে। এটিই হচ্ছে ‘প্যান ইসলামিজম’। প্যান ইসলামিজ হচ্ছে আপনি বিজ্ঞান অনুরাগী হোন কিন্তু সেটা মুসলমান হিসেবে হোন। এমনকি ভবিষ্যতে যদি ‘মুসলমান নাস্তিক’ নামের কোন পরিচয় নিয়ে নাস্তিকরা গর্ব করতে থাকে তো প্যান #ইসলামিজম সেটাকেও সমর্থন করবে! বিবর্তনবাদ আদম হাওয়ার সৃষ্টিতত্ত্বকে নাকচ করে দিলেও প্যান ইসলামিজম বিবর্তনবাদকে কোন মুসলিম বিজ্ঞানীর আবিস্কার সেরকম প্রচারণাকে স্বাগত জানাবে। প্যান ইসলামিজম সিনেমাকে ‘ইসলামী সিনেমা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ইসলামে হারাম অথচ সেখানে মুসলমান কেউ শ্রেষ্ঠ হলে প্যান ইসলামিজম তা নিয়ে মুসলমান হিসেবে গর্ব করতে বলে। প্যান ইসলামিজমের মূল উদ্দেশ্য ‘মুসলিম জাতি’ -এমন একটি বিনি সুতার মালা গাঁথা। সেখানে ‘ইসলামী বিশ্ব’ এনে সাম্প্রদায়িকভাবে জাতি বিভেদ তৈরি করে দেয়াই তার আসল উদ্দেশ্য। 

#সুষুপ্ত #পাঠক #Anaximander #AlJahiz #TheGrandDesign #StephenHawking #LeonardMlodina #Mu'tazilah #AbbasiCaliphate #PanIslamism #NaturalSelection #SusuptoPathok

Copyright © 2023 Susupto Pathok aka সুষুপ্ত পাঠক all rights reserved.

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted