এখন টিভি খুললে দেখি কয়েকজন হুজুর খুব উত্তেজিত হচ্ছেন পাঠ্যপুস্তকে বিবর্তন পড়ানো নিয়ে। একজন বললেন ৯০ ভাগ মুসলমানের অনুভূতির প্রতি সম্মান রেখেই পাঠ্যপুস্তক রচনা করতে হবে।
আমিও ওনার সাথে একমত হয়ে বলতে চাই, বাংলাদেশের সমস্ত হাসপাতালের সমস্ত টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ করে দেয়া উচিত। টিকা জিনিসটা তৈরি করা হয় বিবর্তনের একেবারে বেসিক বোঝাপড়ার ওপর ভিত্তি করেই। এই যে এক ডোজ নেয়ার পর আমাদের ক্রমান্বয়ে দ্বিতীয় তৃতীয় এমনকি চতুর্থ ডোজ টিকা নিতে হল এটা কেন? কারণ আগের টিকা নতুনভাবে বিবর্তিত করোনাকে মারতে পারছে না। করোনা বিবর্তিত হচ্ছে চোখের সামনে। আগের মশার কয়েলে এখন মশা মরে না। মশা বিবর্তিত হচ্ছে চোখের সামনে।
এরমধ্যে দেখলাম একজন হুজুর বলছেন পৃথিবীর মানুষ মূলত এলিয়েন। অন্য সবার বিবর্তন হলেও মানুষ আসমান থেকে সরাসরি নেমে আসছে। ম্যাটার অফ ফ্যাক্ট- যুক্তির এই লাইনআপও 'বিবর্তন বলতে কিছু নাই' লাইনআপের চাইতে বেটার।
এই হুজুররাই বলেন ইসলাম নিয়ে না জেনে শাহরিয়ার কবির কেন ইসলাম নিয়ে কথা বলবেন। এটাকে যৌক্তিক ভেবে আবার ওনাদের দেখি জীববিজ্ঞান নিয়ে কনফিডেন্টলি বলতে 'পৃথিবীর কোন বিজ্ঞানী বিবর্তনে বিশ্বাস করে না'। অথব বহু ঈশ্বরে বিশ্বাসী মুসলিম জীববিজ্ঞানীরা বিবর্তনের ভেতরে বরং ঈশ্বরের অস্তিত্বকে খুঁজে পেয়েছেন।
বিবর্তন যদি না থাকে তাহলে এন্টিবায়োটিক কিভাবে কাজ করে? কেন বেশি এন্টিবায়োটিক কনজিউম করলে শরীরের ক্ষতি হয়? শরীরের দুষ্ট জীবাণুরা এন্টিবায়োটিকের সাথে টিকে থাকতে শিখে গেলে কি বিপদ হয় সেটা আমরা সবাই দেখি। এরোসল দিলে আগের মত মশা মারা যায় না এটা আমরা সবাই দেখি। পুরুষের শরীরে অদরকারি স্তন, অদরকারি এপেন্ডিক্স, লেজ না থাকার পরেও পূর্বপুরুষের টেইলবোন এখনো বহন করে চলি, তবুও আমাদের নাকি বিবর্তন হয় নাই।
ডারউইনের পাঁচশ বছর আগে মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন পরিষ্কারভাবে বিবর্তন নিয়ে আলাপ করে গেছেন। খেজুর, আঙুর, শামুকের অসংখ্য প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি দেখেছেন বিবর্তনের প্রমাণ।
১৪০০ শতকে আল মুকাদ্দিমা গ্রন্থে খালদুন লিখছেন-
'অতঃপর সৃষ্টি জগতের দিকে লক্ষ্য করুন, কিভাবে খনিজ পদার্থ হইতে আরম্ভ করিয়া এক অপূর্ব ধারাবাহিকতায় উদ্ভিদ ও প্রাণী পর্যন্ত সুবিন্যাস্ত রহিয়াছে। খনিজ পদার্থের শেষ দিক উদ্ভিদের প্রথম দিকের সহিত সংযুক্ত, যেমন ঔষধি ও বীজহীন গুল্ম; উদ্ভিদের শেষ দিক যেমন খেজুর গাছ ও আঙুর লতা, প্রাণীর প্রথম দিকের সহিত সংযুক্ত, যেমন শামুক ও ঝিনুক – ইহাদের কেবল স্পর্শশক্তিই বিদ্যমান।
এই সৃষ্টি জগতের পরস্পর সংযুক্তির অর্থ হইলো ইহাদের যেকোন একটির শেষ দিক পরবর্তিটির প্রথম দিকে পরিবর্তিত হইবার জন্য অদ্ভুতভাবে উন্মুখ হইয়া রহিয়াছে। অতঃপর প্রাণীজগৎ বিস্তৃতি লাভ করিয়া বহু শাখায় বিভক্ত হইয়াছে এবং পর্যায়ক্রমিক সৃজনশীলতার মধ্য দিয়া মনন ও দর্শনের অধিকারী মানুষে আসিয়া উপনীত হইয়াছে।
মানুষের এই পর্যায় সেই বানর জগৎ হইতে উন্নীত হইয়াছে, যে জগতে অনুভূতি ও উপলদ্ধি একত্রিত হইয়াছিলো কিন্তু বাস্তব মনন ও দর্শনে পৌছিতে পারে নাই। ইহার পরই মানুষের প্রথম দিকের আরম্ভ এবং ইহাই আমাদের অভিজ্ঞতার শেষ পর্যায়।'
(আল মুকাদ্দিমা / ইবনে খলদুন)
ইসলামকে বিবর্তনের মুখোমুখি দাঁড় করানোটা একটা সালাফি প্রোজেক্ট। পৃথিবীর অসংখ্য ইসলামিক স্কলার বরং খালদুনকে বিবর্তনের আবিষ্কারক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবী করেছেন বিভিন্ন গ্রন্থে।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................