-ইউরোপ আমেরিকার মানুষের ধর্ম ইসলাম নয় অথচ তারা ইসলাম অনুসারে জীবনযাপন করে! আর আমাদের ধর্ম ইসলাম কিন্তু আমরা ইসলাম অনুসারে জীবনযাপন করি না!
-তা এতদিন বলতেন ইউরোপ আমেরিকার মানুষ পশুপাখীর মত ফ্রি সেক্স করে এখন বলছেন ওরা ইসলাম অনুসারে চলে!
-কাঠমোল্লাদের কথা আমার সামনে বলবেন না! ওরা ইসলামের কি জানে?
-তা ইউরোপ আমেরিকা ঠিক কিভাবে ইসলাম অনুসারে চলে একটু বলবেন?
-এই শৃঙ্খলা, সুশাসন, ন্যায্য মজুরি, কাউকে ঠকায় না, মিথ্যা বলে না এসব তো ইসলামী জীবনযাপন! ওরা সেটার প্রাক্টিস করে কিন্তু আমরা মুসলমান কিন্তু চলি অমুসলমানদের মত!
-আরেকটু যদি বুঝিয়ে বলেন...
-আরে ভাই মনে করেন ওরা খাবারে ভেজাল করে না। ওদের সমাজে নিরাপত্তা আছে। এগুলোই তো ইসলামী শাসনের জিনিস। ওরা নিজেরা ইসলামের কথা না বললেও ইসলামকেই ফলো করছে!
-ইউরোপ আমেরিকাতে একটা মেয়ে রাত দুইটা তিনটায় একা বাসে করে কোথাও চলে যেতে পারে। বনের মধ্যে তাবু খাটিয়ে ক্যাম্পিং করে বাচ্চা বাচ্চা মেয়েরা। এর জন্য ওদের কোন পর্দা করার দরকার পড়েনি। মাহরামও সঙ্গে প্রয়োজন হয়নি। ওদের উদাহরণ থেকে তো তাহলে বলা যায় পর্দা মেয়েদের নিরাপত্তা দেয় এটা সঠিক নয়।
-আরে ভাই আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারেন নাই... ব্যাপারটা এরকম না... আমি বলতে চাইছি...
-আমিও আপনার কাছ থেকে পরিস্কার হতে চাইছ ঠিক কি করে ওরা ইসলাম অনুসরণ করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করল আর সুসভ্য হলো...
-দেখেন ইসলাম বলেছে, সবার জন্য সমান সমাজ। ওরা সেটা করেছে। বলেছে খাদ্য ভেজাল না করতে, ওজনে কম না দিতে... ওরা সেভাবেই তো চলছে। এটাই ইসলামকে ফলো করা...
-আপনি বলতে চাইছেন ইসলামের আগে এই ভালো নৈতিক দিকগুলির কথা মানুষ জানত না? প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর আগের হিপোক্রেটিস যে শপথটি তৈরি করেন সেখানে কি বলা আছে কোনদিন পড়ে দেখেছেন? আজকের যুগের মানুষও সেই শপথ পাঠ করে ডাক্তার হয়। এ জন্য গ্রীকরা দাবী করে না তারা পৃথিবীবাসীকে নৈতিকতা শিখিয়েছে। এমন না হিপোক্রেপিসই এরকম নৈতিকতার ধারণা দিয়েছিলেন। তখনো মানুষের সমাজে এরকম নৈতিকতা বজায় ছিলো বলেই তিনি চিকিত্সকদের মনে করিয়ে দিয়েছেন, রোগী স্বাধীন না ক্রীতদাস তা বিবেচনা করবে না, কোন রোগীর প্রাইভেসি নষ্ট করবে না, ব্যবসায়ী উদ্দেশ্যে এই শাস্ত্রকে ব্যবহার করবে না...। আজো এই নৈতিকতাই ডাক্তারদের শেখানো হয়। গ্রীকরা তো তখন পৌত্তলিক ছিলো, তাহলে কি বলা চলে আজো যে নৈতিকতাকে মানবজাতি মেনে চলছে সেটা আসলে পৌত্তলিকতাকে অনুসরণ করা?
-ভাই আপনি প্যাঁচান ক্যান? সহজ জিনিসটা বুঝেন না?
-ভাই কিছু মনে করবেন না। আপনিই আসলে কিছু বুঝেন নাই। মাত্র দেড় হাজার বছর আগে একটা ধর্মের বইতে লেখা ‘সকল প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে’ আর সেটা শুনেই আপনারা আহা উহু শুরু করে দেন। অথচ খেয়াল করেন না এটা তো প্রাচীন মিশরের লোকজনও জানত! তারা কি দেখত না সকল প্রাণী জগতেই মৃত্যু আছে? এটা তো মানুষের জ্ঞান হবার পরই সে চাক্ষুস করেছিলো। কাজেই ঘুষ না খেতে, খাবারে ভেজাল না করতে, খুন না করতে, অন্যের জিনিস কেড়ে না নিতে- এরকম কমন নৈতিকতা মানব সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিলো তিন চার হাজার বছর ধরেই। ফলে সেসময়ের সমস্ত মানব সমাজের ধর্মগুলিও কমন এই নৈতিকতার বাণী চর্বিত চর্বণ করে গেছে। আপনাকে আরো একটি কথা বলি খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে ভারতে জন্ম নেয়া চরক। তিনি আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রের একজন জন্মদাতা। তিনিও তার চিকিত্সকদের জন্য শপথ তৈরি করেছিলেন যা হিপোক্রেটিসের মতই নৈতিকতায় বাঁধা। তার মানে ভারতে তখন মানুষের কাছে এরকম নৈতিকতা বজায় ছিলো। চরক যখন তার ছাত্রদের জন্য শপথ লিখছেন তথন কুরআনের জন্মই হয়নি! ইসলামী শরীয়তের জন্ম হয়েছে তার আরো দুই তিনশো বছর পর! চরকের এই শপথসহ তার চিকিত্সাশাস্ত্র আরবীতে অনুবাদ হয়েছিলো বাগদাদের খলিফাতের বদন্যতায়। ফলে ইবনে সিনার মত কিংবদন্তি চিকিত্সক চরক দ্বারা ছিলেন প্রবলভাবে প্রভাবিত। নিশ্চয় চরকের নৈতিক শপথ দ্বারাও?...
-ভাই আপনি ভুলের মধ্যে আছেন। কিসের সঙ্গে কি মেশাচ্ছেন...
আপনিই ভুলের মধ্যে আছেন। শুনতে না চান এটুকু বলে শেষ করি, পশ্চিমারা অপরাধীদের হাত কেটে, গলা কেটে অপরাধীদের এখন শাস্তি দেয় না। আপনারা সেই দিতে বলেন। ওদের ওখানে মৃত্যুদ্বন্ড উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ইউরোপের অনেক দেশই এখন জেলখান খালি পড়ে থাকছে অপরাধীর অভাবে। আর ওরা মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। কে কার সঙ্গে সেক্স করবে, বিয়ে করে সেক্স করবে নাকি না করে- সেটা নিয়েও মাথা ঘামায় না। আপনারা তো বিয়ে ছাড়া সেক্স করলে তাকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলবেন! তারপরও কি করে ওদের দেশগুলিকে ইসলাম অনুসারে চলছে বলে দাবী করেন? আপনাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, এসব বলে এদেশের ধর্মান্ধ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অশিক্ষিত জনগোষ্ঠিকে বুঝাতে চান ইউরোপ আমেরিকার মত দেশ চাইলে ইসলামী শাসন আনতে হবে- তাই না?
-বেহুদা প্যাঁচাল পাড়ার টাইম নাই। মাগরিবের সালাত পড়তে যেতে হবে...
©Susupto Pathok সুষুপ্ত পাঠক
ব্লগ শেয়ার -
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................