যশোরের যশস্বী নীল রতন ধর বাঙ্গালীর বরনীয় ও স্মরনীয় যিনি -

যশোরের যশস্বী নীল রতন ধর বাঙ্গালীর বরনীয় ও স্মরনীয় যিনি -

অন্তত দুবার তাঁর নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। নিজে হয়ত নোবেল পাননি কিন্তু বেশ কয়েকবার অভিজাত নোবেল কমিটির নির্বাচকের পদ অলঙ্কৃত করেছেন। তিনি চেয়েছিলেন কম ব্যয়ে আমাদের দেশে একটি কৃষি বিপ্লব হোক। পরাধীন ভারতের বিজ্ঞানচর্চার অন্যতম প্রাণপুরুষ আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অন্যতম মানসপুত্র ড. নীলরতন ধর বলতেন "বিজ্ঞানের সেবা, মানুষের উপকার করা ও সর্বসাধারণের জন্য বিজ্ঞান প্রসার করা বৈজ্ঞানিকের ধর্ম"।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 

নীলরতন ধরের পিতৃদেব প্রসন্নকুমার যশোর শহরের আইনজীবী,মনে প্রাণে স্বদেশী, আদালতে বাংলায় সওয়াল করতেন। ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়ের মন্ত্রীসভার সদস্য ছিলেন নীলরতনের অগ্ৰজ ড. জীবনরতন ধর। ছাত্রজীবনে বিশেষত প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়ার সময় সহপাঠীদের মধ্যে ছিলেন জিতেন্দ্রমোহন সেন,অমিয়চরণ বন্দ্যোপাধ্যায়। একটু নীচের ক্লাসে পড়তেন মেঘনাদ সাহা,জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ,জ্ঞানেন্দ্রনাথ ঘোষ। আমৃত্যু তাদের বন্ধুত্ব অটুট ছিল। বিএসসি পড়ার সময় অধ্যাপক হিসেবে পেয়েছেন জগদীশচন্দ্র বসু ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের মত দিকপালদের।

 ১৯১১সালে বিএসসি পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হলেন। এম এস সি পাশ করেছেন প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে। মজার বিষয় হল এমএসসি পাশের আগেই তিনি গবেষক, প্রফুল্লচন্দ্র নাইট্রাইটের ভৌত রাসায়নিক গুণাগুণের উপর গবেষণা করছিলেন। তিনি কিছুটা দায়িত্ব ছাত্র নীলরতনের উপর ছাড়লেন। দুজনে মিলে কিছু গবেষণাপত্র লিখলেন প্রকাশিত হল দেশ-বিদেশের পত্রিকায়।ড. শান্তিস্বরূপ ভাটনগর সেই কারণে বলেছেন " ড. ধর ইজ দ্য ফাউন্ডার অফ ফিজিক্যাল কেমিস্ট্রি ইন ইন্ডিয়া"। এই গবেষণা ড. ধর কে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দেয়।ভারত সরকারের স্টেট স্কলারশিপ পেয়ে উচ্চতর গবেষণার জন্য পাড়ি দিলেন বিলেতে। ভর্তি হয়েছিলেন লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইম্পিরিয়াল কলেজে। এখানে তিনি গবেষণায় কৃতকার্য হয়ে মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে ডি এস সি উপাধি পেয়ে গেলেন। প্যারিসের সোরবন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্টেট ডক্টরেট অফ সায়েন্স উপাধি পেলেন ,একই সঙ্গে লন্ডনের কেমিকেল সোসাইটির ফেলো নীলরতন ধর ইন্ডিয়ান কেমিকেল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন।
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 

পড়াশুনা অনেক হল একটা স্থায়ী চাকরির দরকার,ব্রিটিশ সরকার তাঁকে পাঁচ জায়গায় চাকরির অফার করলে তিনি বেছে নিয়েছিলেন মুইর সেন্ট্রাল কলেজকে।পরে তিনি এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌত রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপনা করেছেন।
খুব সাধারণ জীবনযাপন করতেন। বিয়ে করেছিলেন শীলা ধরকে। তাঁর অকালমৃত্যু হলে সহধর্মিণীর স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করতে সেইসময় তেরো লক্ষ টাকা খরচ করে প্রতিষ্ঠা করেন শীলা ধর ইনস্টিটিউট।
গবেষক বিজ্ঞানী নীলরতন ধর আমৃত্যু বলে এসেছেন জৈবিক সারের কথা ‌কারণ এই সার মাটিতে নাইট্রোজেন এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। ড.ধরের ভালবাসার গবেষণা হল জৈবসার। ভারতবাসীর খাদ্য নিয়ে তাঁর ভাবনা-চিন্তার অন্ত ছিল না। তিনি চালের সঙ্গে ভারতের মানুষ গম খেতে জোর দিতেন। কারণ চালে অ্যামিনো অ্যাসিড থাকলেও পুষ্টি ও শক্তির জন্য গমের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছিলেন।সব মিলিয়ে বলা যায় খাদ্য,কৃষি ও নাইট্রোজেন নিয়ে ড. ধরের গবেষণা।দুর্ভাগ্যের বিদেশের উন্নত রাষ্ট্রগুলি নীলরতন ধরের অনেক সুপারিশ মেনে চললেও তাঁর নিজের দেশে সেই সব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হয়নি।
সংকলনে ✍🏻 অরুণাভ সেন
© ধ্রুবতারাদের খোঁজে 

#NilRatanDhar 
#professor 
#scientist 
#bengali 
#soilscience 
#chemistry 
#legendery
#NobelPrize 

পুস্তক ঋণ ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার, বিজ্ঞান সাধক বাঙালি বারিদবরণ ঘোষ

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted