বখতিয়ার খিলজি কি নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেছিলেন? স্বয়ং বখতিয়ার খিলজ যদি এসে এখন বলে, হ্যাঁ, আমিই নালন্দা ধ্বংস করেছি তাহলেও হিন্দু কমিউনিস্ট ও মুসলিম লীগাররা সেটা বিশ্বাস করবে না! বলবে, না না তুমি নালন্দা ধ্বংস করোনি...!
বখতিয়ার খিলজির নালন্দা ধ্বংস না করার কোন কারণ নেই। সেকালের একজন স্রেফ লুটেরা যোদ্ধা বিধর্মীদের কিতাব কালামের প্রতি কেন শ্রদ্ধা রাখতে যাবে? বলা হয় বখতিয়ার খিলজি “ভুল করে” একটি বিহার পুড়িয়ে দিয়েছিলেন দুর্গ মনে করে তবে সেটি নালন্দা নয়। বখতিয়ার খিলজি মাত্র দুইশো সৈন্য নিয়ে এই কাজটি করতে গিয়েছিলেন। যদি এটি দূর্গ মনে করে বখতিয়ার খিলজি আক্রমন করতেন তাহলে এত কম সৈন্য নিয়ে তিনি কোনদিন সেটা করতেন না। একটা দূর্গে কি পরিমাণ সৈন্য থাকে সেটা বখতিয়ার খিলজি জানতেন। আরো জানতেন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র শিক্ষকরা থাকে সেখানে কোন অস্ত্র থাকে না। ফলে দুই শো সৈন্য নিয়ে বিহার আক্রমন করে সোনার মূর্তি রত্ন যা পেয়েছে সবই লুটে নিয়েছে। হাজার হাজার বই দেখতে পেয়ে বইয়ের বিষয়স্তু শুনে সেগুলো পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেয়া হয়। মিনহাজ বর্ণনা করেছেন শত শত মাথা মুন্ডিত "ব্রাহ্মণ" গলাকাটা অবস্থায় মরে পড়েছিলো! মিনহাজ আসলে বৌদ্ধ শমণদেরকে ব্রাহ্মণ বলে ভুল করেছিলেন। মিনহাজের বইটি গুরুত্বপূর্ণ এ কারণে যে, তার সোর্স হচ্ছে বখতিয়ারের সৈন্যবাহিনীতে ছিলেন এমন একজনের সঙ্গে তার কথা হয় বখতিয়ারের নালন্দা হামলার চল্লিশ বছর পর। ফলে নালন্দা ধ্বংস বখতিয়ার খিলজি করেছিলেন সেটির বিষয়ে কি করে উড়িয়ে দেয়া যাবে? মুসলমানদের আগমনের পূর্বে হিন্দু ও বৌদ্ধ রাজাদের মধ্যে সংঘাত ছিলো। বিহার ও মন্দির তখনো আাক্রান্ত হয়েছে। হিওয়েন সাঙ ভারত দেখে গিয়ে বিস্তারিত লিখেছিলেন। তিনি কি দেখে গিয়েছিলেন তা নিয়ে বিস্তারিত একটি লেখা লিখবো বলে স্থীর করেছি তাই এখানে বিরত থাকলাম।
বখতিয়ার খিলজি তো ভালো কথা, আজকের যুগে এমন শিক্ষিত ধর্ম বিশ্বাসী মুসলমান কি পাওয়া যাবে যার ক্ষমতা থাকলে ডারউনের বিবর্তন বিজ্ঞানের বইটি পৃথিবী থেকে চিরতরে ধ্বংস করতে মনে মনে সংকল্প করে না? না হলে বহু মুসলিম দেশে কেন বইটি নিষিদ্ধ?
মজাটা হচ্ছে মিনহাজ হচ্ছেন বখতিয়ার খিলজিকে নিয়ে লেখা একমাত্র ঐতিহাসিক যিনি বখতিয়ারের মৃত্যুর চল্লিশ বছরের মধ্যে তার সম্পের্কে তথ্য সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে তার সৈন্যদের পেয়েছেন। কিন্তু বামপন্থী ও মুসলিম লীগারারা প্রায় আটশো বছর পর “গবেষণা” করে পাচ্ছেন বখতিয়ার নালন্দা ধ্বংস করেননি! বলছেন, “সম্ভবত” এটি ব্রাহ্মণবাদীদের কাজ!
হিন্দু রাজা মিহিরকুল বৌদ্ধ মন্দিরে হামলা করেছেন সত্য, তেমনি সম্রাট অশোকও বৌদ্ধ হয়ে হিন্দুদের দেবালয়ে আক্রমন করেছিলেন। নালন্দা কয়েকবার আক্রমনের শিকার হয়ে, দুর্ঘটনার শিকার হয়েও ঘুড়ে দাঁড়িয়েছিলো। ফলে বখতিয়ার এটাকে আক্রমন করলে দোষটা কোথায়? নালন্দার নাম বহুদূর পর্যন্ত গিয়েছিলো। মধ্যযুগের একজন রক্তলোলুপ লুটেরা অশিক্ষিত ধর্মান্ধ যোদ্ধা কাফেরদের ধর্মীয় বইয়ের প্রতি কেন শ্রদ্ধাশীল থাকবে? কিন্তু বাঙালি মুসলমানদের জাতির পিতা বানানোর একটি আওয়াজ তো চলছে, তারা বলছেন মুসলমানদের ইতিহাস শুরু বখতিয়ার খিলজি যখন বাংলা আক্রমন করে তখন থেকে। এটাই বাঙালি মুসলমানদের বীরত্বের শুরু। আত্মপরিচয়ের শুরু। ফলে তারা তাদের বাপকে নালন্দা ধ্বংসের জন্য দোষী করতে অস্বস্তিবোধ করে। হিন্দু কমিউনিস্টরা লেনিনের-মাও দিয়ে কি করে বিপ্লব করবে যদি বাঙালি-বাংলা এই দুটো কোন ঐতিহ্য স্মরক সাহিত্য ইতিহাস ব্যক্তি দিয়ে আষ্টেপাষ্টে ধরে রাখে। ফলে ভাঙ্গতে হবে বিদ্যাসাগর রবীন্দ্রনাথের মূর্তি! দরকার পড়লে বখতিয়ার খিলজির মূর্তি গড়ে ধর্ম পরিচয়ে বাঙালিকে খন্ডিত করে দিতে হবে। এতেই লাভ। লেনিনের পাঠচক্র করে যদি বিপ্লব দীর্ঘজীবী করা যায়!...
এমন দিন আসবে যখন কোন রাজাকার বৃদ্ধ বয়সে তার কুকীর্তি স্বীকার করে লিখে গেলেও তখন বলা হবে এটা মুক্তিযুদ্ধ হওয়ার পঞ্চাশ বছর পর বৃদ্ধ বয়সে লেখা কারোর স্মৃতিকে বিশ্বাস করা যায় না! যেমনটা মিনহাজের সঙ্গে দেখা হওয়া বখতিয়ারের সৈন্য বাহিনীতে থাকা এক বৃদ্ধের স্মৃতিচারণকে বলা হয়!
(সূত্র: তবকাত-ই-নাসিরী, মিনহাজ-ই-সিরাজ, প্রকাশক: বাংলা একাডেমি ঢাকা, প্রথম প্রকাশ: জুন ১৯৮৩)
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................