বাঙালি মুসলমানের হিরো আলম মন

বাঙালি মুসলমানের হিরো আলম মন

শূদ্রের শূদ্র হল নমঃশূদ্র! সেই নমঃশূদ্র থেকেই সাধারণত আমরা বাঙালি মুসলমান। বাঙালি মুসলমানের মন এঁকে ছিলেন আহমদ ছফা। পুঁথির কাল্পনিক অতি আজগুবি চরিত্রে আস্থা রাখা বাঙালির মন এখন বদলেছে। কারণ এখন আর সমাজে পুঁথির প্রচলন নেই। এখন বাঙালি মুসলমানের মন গঠন করে ওয়াজের তারেক মনোয়ার, মিজানুর রহমান আযহারী এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনের হিরো আলম ও অনন্ত জলিল।

রাজনীতিতে শ্রেষ্ঠ বাঙালি নেতাদের অধিকাংশই আদিতে বাঙালি ছিলেন না। অবিভক্ত বাংলার প্রথম তিনজন প্রধানমন্ত্রীর কেউই আদি বাঙালি নন। শেরে বাংলা একে ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমুদ্দিনসহ শীর্ষ মুসলিম নেতারা এসেছেন পারস্য না হয় আফগান থেকে। বঙ্গবন্ধুর পরিবারও এসেছেন ইরাক থেকে। তাদের সাথে আমাদের সাংস্কৃতিক সংযোগ ছিল না। এ কারণেই হয়তো সারাদেশে ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে বাঙালি হয়তো আরবীয় হয়ে উঠবে। বাঙালি মুসলমান শৈশবেই আরবি শেখার ব্যর্থ চেষ্টা করে। কয়েক বছর পড়ে রিডিং পড়া শিখে তবে আমরা অর্থ বুঝে আরবিতে কথা বলতে শিখতে পারি না। আদি বাঙালি মন থেকে অর্থাৎ শেকড় থেকে সরিয়ে খাঁটি মুসলমান বানানোর চেষ্টাতো নতুন নয়। হরফ বদলানোর চেষ্টা দেখেছি। তার আগে হাজী শরিয়ত উল্লাহ ও তিতুমির চেষ্টা করেছেন খাঁটি মুমিন মুসলমান বানাতে। সব চেষ্টা ব্যর্থ হলেও চেষ্টা থেমে থাকেনি।


মিজান আযহারী কাতার থেকে কায়রো যাওয়ার বয়ানে যখন তরতাজা হিমালয় দেখার বর্ণনা দেন তখন কেউ বলতে পারেন না, হিমালায় ওই পথে পড়ে কি না। তারা ধরেই নেয় ওই পথে হিমালয় পড়ে এবং হুজুর তা দেখেছেন। তারেক মনোয়ার আরেক কাঠি সরেস। তিনি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে খেলেছেন, অক্সফোর্ডের শ্রেষ্ঠ অধ্যাপক হয়েছেন তিনবার, রকেটে বহুবার যাতায়াত করেছেন, ব্রিটিশ রানীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, আইফোনের প্রতিষ্ঠাতা বেলগ্রেডের (?) সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, স্যামসাং এর প্রতিষ্ঠাতা মি. স্যামসাং (?) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন এমন অসংখ্য মিথ্যা ওয়াজে অনবরত বলে মুসলমানদের মন তৈরি করেন। শ্রোতারা ভাবে একজন মুসলমান মাদ্রাসায় পড়ে কত বড় কামেলদার হয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আমন্ত্রণ উপেক্ষা করে মাহফিলে এসেছেন! সোবাহান আল্লাহ! বাঙালি মুসলমান যারা শূদ্রের শূদ্র নমঃশূদ্র থেকে ধর্মান্তরিত হয়েছেন, তাদের পক্ষে প্রশ্ন করা কঠিন। তাদের জীনে সে বৈশিষ্ট নেই। ফলে তারা রাতের ভোটকে বলে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়া!

অনন্ত জলিলকে বাঙালি মুসলমান খুবই সম্মান করে। করতেই পারে কারণ তিনি অভিনয় না জানলেও ধর্মের কথা বলেন। একজন নায়কের মুখে ধর্মের কথা শোনা মিজানুর রহমান আযহারী ও তারেক মনোয়ারের মুখে মিথ্যা শোনার চেয়ে মন্দ নয়। কিন্তু তাদের মনোজগত অনন্ত জলিলও দখল করে নেই যতটা আছে হিরো আলম। আমি অনেক পোস্টেই বলেছি, হিরো আলম হলেন সর্ব বিষয়ে অযোগ্য একজন মানুষ। বাঙালি মুসলমান নিজে অধিকাংশ বিষয়ে অযোগ্য থাকে। দুএকটি বিষয়ে কিছু মানুষ সামান্য যোগ্যতা অর্জন করে। সর্ববিষয়ে অযোগ্য একজনকে পেলে তারা খুশি হয়ে উঠে। নিজের ভিতরের অনেক বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে দেখতে পায়। ফলে সে মহান হয়ে উঠে। হিরো আলম মহানতর হয়ে উঠেছে বাঙালি সমাজে। সে নাকি সেভেন পাশ! ফলে তাকে অর্ধশিক্ষিত বলা যাবে না। তারেক মনোয়ারের মতো তাকে অক্সফোর্ডের অধ্যাপক বলতে হবে? সেভেন পাশকে অর্ধশিক্ষিত বলা যাবে না? বাঙালি মুসলমানের অধিকাংশই অল্পবিদ্যাধারী কিন্তু তাদের অর্ধশিক্ষিত বলা যায় না। হিরো আলম সাংবাদিক সম্মেলনে দেখালেন তিনি বই পড়েন। বইগুলো দেখেই বুঝতে পারলাম সেগুলোর ভাঁজ খোলা হয়নি। সবগুলো একই বই! তাকে শতভাগ সুস্থ্য লোক না বললে মামলা খেতে হবে। অর্ধ শিক্ষিত বাঙালি মুসলমান নিজের ভিতরে হিরো আলমকে উপলব্ধি করে।

আমি অনেকবারই শুনেছি এবং মনেও করি বাংলাদেশে বাঙালি মুসলমানের চেয়ে চাকরিতে বাঙালি হিন্দু এগিয়ে আছে। আমাকে সম্প্রতি একজন নির্বাহী কর্মকর্তা দেখালেন, তাদের নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত কয়েকশত কর্মীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হিন্দু। প্রাথমিক স্কুলগুলোতে গিয়েও দেখেন অনুপাতের চেয়ে বেশি। এমনকি পুলিশ প্রশাসনেও তাই। এসএসসিতে আমাদের স্কুল থেকে আমরা তিনজন প্রথম বিভাগে পাস করি। আমি সবচেয়ে বেশি নাম্বার পাই। এর পরের দুজন হিন্দু অপু উকিল ও রঞ্জিত! আপনি তারেক মনোয়ার ও হিরো আলমকে আদর্শ মেনে বুঁদ হয়ে থাকবেন। পড়াশোনায় না থেকে ধর্মে-কর্মে থাকবেন আর ভাল করার স্বপ্ন দেখবেন তাতো বাস্তবায়িত হবে না। আমাদের সাথে পড়া একটি ছেলেকে দেখি এক পীরের কাছ থেকে তাবিজ আনতে। সে পীরের সাথে চুক্তি করে, এমন তাবিজ দিতে হবে যেন সে ফার্স্ট হতে পারে। পীর চায় ২৫ টাকা আর আমার সহপাঠী দিতে চায় ৫ টাকা। শেষে ১০ টাকায় রফা হল। কদিন ভাব নিয়ে স্কুলে আসলো। কিন্তু সেভেন থেকে আর এইটে উঠতে পারলো না। হিরো আলমও এইটে উঠতে পারেনি। বাঙালি মুসলমান এখনো পীর ছাড়েনি। তাদের ভরসাস্থলও দেশজুড়ে থাকা এক লক্ষ পীর! 

হিরো আলমের অধিকার রয়েছে নির্বাচন করার, কথা বলার, অভিনয় করার, গান গাওয়ার ও কবিতা লেখার। আমাদের অধিকার রয়েছে তার মান নিয়েও প্রশ্ন তোলার। হিরো আলম যাতে তার অধিকার পায়, তার জন্য আমিও পোস্ট দিয়েছি আবার বলেছি সে সর্ব বিষয়ে একজন অযোগ্য মানুষ। যখন একটা সময়ে বিপুল মানুষ হিরো আলমের অনুরাগী হয় তখন আমরা সমাজটাকে বুঝতে পারি, সমাজের মানসিকতাটাও ধরতে পারি। আমাদের সমাজের ভাবাদর্শ আমাদের জানা থাকলেও আরো স্পষ্ট হয় হিরো আলমের প্রতি মানুষের অনুরাগ দেখে। কিন্তু হিরো আলমের প্রতি এমন অনুরাগ কেন সেটা জানা বোঝা দরকার। অনবরত মিথ্যাচার করে মিজানুর রহমান আযহারী ও তারেক মনোয়ার যদি শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে পারেন, তবে বাঙালি মুসলমানের মনে কেন হিরো আলম শ্রেষ্ঠ হবেন না? হিরো আলমের ভয়েস, হাইট, প্রজ্ঞা, ভাষা, কণ্ঠ, দক্ষতা, কৌশল আদর্শ বাঙালি মুসলমানের সাথে যায় বৈকি!

0/Post a Comment/Comments

যুক্তি সংগত কথা বলুন.................

Stay Conneted