সনাতন সংস্কৃতির দেশ ভারত বিশ্বসভায় নুতন করে তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।
✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️✍️
ভারত কেন বিশ্বসভায় শ্রেষ্ঠ আসনের উপযুক্ত তা আবার প্রমাণ হলো জি-২০ বিশ্বসভায়।দিল্লির প্রগতি
ময়দানে সনাতন সংস্কৃতির ধারা মেনে তৈরি করা হয়েছিল একটি উপযোজন যা মন্ডপম নামে নামকরণ করা হয়েছে।মন্ডপ হলো দেবদেবীদের জন্য নির্দিষ্ট স্থান যেখানে হিন্দুরা শ্রদ্ধাভরে নিজস্ব কৃষ্টি মেনে দেবদেবীর আরাধনা করে থাকেন।এমন একটি অসাধারণ সাংস্কৃতির মিলন কেন্দ্র মন্ডপমে মিলিত হয়েছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন সংস্কৃতির পথিকৃতেরা।
নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান।এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সারা বিশ্বের সব সভ্যতা সংস্কৃতি ভাষা সব একাকার হয়ে বিশ্ব রাজসূয় যজ্ঞে সনাতন সংস্কৃতিকেই নুতন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।ছিল না কোন অহংকার সবাই মিলেমিশে একাকার। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টিতে যে নান্দনিকতা দরকার ভারতই অত্যন্ত দক্ষতায় তার শ্রেষ্ঠত্ব দেখিয়েছে।ভারতের সভ্যতা সংস্কৃতির ঐতিহ্য যে সারা পৃথিবীতে অনন্য তা আরও একবার প্রমাণ হলো।
মন্ডপমের সামনে প্রতিস্থাপিত হয়েছে নটরাজনের একটি অষ্টধাতুর মূর্তি যার উচ্চতা ২৮ফুট।নটরাজের এই মূর্তিকে মহাজাগতিক শক্তি ও সৃজনশীলতার উৎস মনে করা হয়।এই মূর্তি ভারতের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতীক।শিবের এই অর্ধনারীশ্বর মূর্তি একাধারে পুরুষ ও প্রকৃতির বিমোহিত রূপ।এই মূর্তির অবয়বেই রয়েছে শিবের সৃষ্টি ও তান্ডবের মাহাত্ম্য।নটরাজের ৪টি হাত।উপরের ডান হাতে রয়েছে ডমরু যা সৃষ্টির প্রতীক।নীচের ডান হাতে রয়েছে বরাভয় মূর্তি যা আশীর্বাদের প্রতীক।নটরাজের উপরের বামহাতে রয়েছে অনন্ত আগুন যা ধ্বংসের প্রতীক।আর নীচের বাম হাতে রয়েছে পরিত্রানের রূপ।নটরাজের চারপাশে রয়েছে কুণ্ডলিনী শক্তির প্রতীক।সেখানে রয়েছে একটি সাপ।নটরাজের কানে রয়েছে দুল।এটি প্রমাণ করে একই অঙ্গে শিব ও পার্বতীর এক অপূর্ব মিলনের প্রতিচ্ছবি।
সম্মেলনে সবার নজর ছিল কোনার্ক সূর্য মন্দিরের চাকা।সূর্য মন্দির ভারতীয় সংস্কৃতি সভ্যতা স্থাপত্য ও শিল্পকলার এক অপূর্ব নিদর্শন।এটি একটি ভারতীয় দর্শন যা ভারতের এগিয়ে চলার কথা বলে।রথের চাকা অগ্রগতির প্রতীক।যা কিনা দেশকালকে সঙ্গে নিয়ে সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলে।এই চাকা পরিবর্তনেরও প্রতীক।কারণ এই চাকা স্থীর নয় চলমান।নুতন ভারতের উত্থান এই চাকার মাহাত্ম্য কেই নির্দেশ করে।জাতীয় পতাকায়ও রয়েছে রথের এই চাকা।কারণ এই চাকা গনতন্ত্রের প্রতীক।১৩শতকে রাজা নরসিংদেবের রাজত্বকালে এই কোনার্ক চক্র নির্মিত হয়েছিল।জি-২০ সম্মেলনে এই চক্র প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে ভারতের ক্রমোবর্ধমান উন্নয়ন বিশ্ব দরবারে তুলে ধরা হয়েছে।
ভারতীয় সংস্কৃতিতে জ্ঞান ও সম্বৃদ্বির দেবী দুজনেই পদ্মের উপর উপবিষ্ট।ভারত বিশ্বাস আধ্যাত্মিকতা এবং ঐতিহ্যে বৈচিত্রে ভরপুর এক দেশ।পৃথিবীর অনেক ধর্ম ভারতে জন্ম নিয়েছে যা মিলনের এক তীর্থক্ষেত্র।গনতন্ত্রের প্রতি ভারতের বিশ্বাস অটল।ভারতের বৈশ্বিক আচরণ উপনিষদের এক অমৃত মন্ত্র, "বসুদেব কুটুম্বকম" এর ধারায় সারা পৃথিবী এক পরিবার নির্দেশ করে।ভারতীয় সংস্কৃতি বসুদেব কুটুম্বকম মন্ত্রে বিশ্বাসী।ভারত সারা পৃথিবীর সভ্যতাকে কুটুম্বের মতোই আতিথেয়তায় ভরিয়ে প্রমাণ করেছে সারা পৃথিবী একসূত্রে গাথা।ভারত সনাতনের যোগ্য দেশ হিসেবেই সে মন্ত্রে সারা বিশ্বকে দীক্ষিত করতে পেরেছে।
ভারত মন্ডপমটি তৈরি করা হয়েছে শঙ্খর আদলে।শঙ্খ মঙ্গলের প্রতীক।সন্ধায় হিন্দু বাড়িতে কুলবধূরা শঙ্খ ধ্বনি করেন সংসারের মঙ্গল কামনায়।মন্ডপমের প্রতিটি দেয়ালে তুলে ধরা হয়েছিল ভারতীয় কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের নানান দিক।শিল্পকলা ভারতীয় পৌরানিক কাহিনীর চিত্ররূপ বিভিন্ন কিংবদন্তি চরিত্র হরপ্পা সভ্যতার শিল্পকর্মে সজ্জিত হয়েছিল।কথক কথাকলি ভারত নাট্যম ঘুমর মনিপুরি ও মহিনিত্যম নৃত্যের মনোমুগ্ধকর বিভিন্ন ভঙ্গি চিত্রায়িত হয়েছিল এক অপূর্ব মহিমায়।ভারতের পরম্পরা ফুটে উঠেছে আহিল্যাবাই মহারানা প্রতাপ পৃত্থিরাজ চৌহানের মতো বীর শ্রেষ্ঠদের চিত্র এই সম্মেলনকে মহিমান্বিত করেছে।ফুটে উঠেছে সূক্ষ্মতার সঙ্গে বিমূর্ত তরঙ্গের এক শৈল্পিক ধারা।ছিল দেবতাদের বিশাল বিশাল মূর্তি নৌকায় বসে থাকা কৃষ্ণ বজরংবলি শ্রীরাম সহ বহুদেবতাদের ছবি ফুটে উঠেছে শৈল্পিক বিমূর্ততায়।
ঋষি সুনকের স্বপ্ন ছিল ভারতে এসে দিল্লির অক্ষরধামে কৃষ্ণ প্রনামের।ঋষি যে একজন গর্বিত হিন্দু তার প্রমানই রেখে গেলেন তীর্থভূমি ভারতে এসে।
এই বিশ্বসভায় নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদী ভারতকে বিশ্বদরবারে "ভারত" নামে নুতন ভাবে উপস্থাপিত করেছেন যা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।এই জি-২০ বৈঠকের আগে ভারত যে একটি সনাতন সংস্কৃতির দেশ সেটা মনেই হয়নি।দেশভাগের পর থেকে ভারত ছিল একটি পশ্চাদপদ দেশ।সেই দেশ আজ জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসনে অধিষ্ঠিত।এ জয় ভারতের সনাতন ধর্মের জয় এ জয় নরেন্দ্র মোদির জয়।
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................