ভারত ২২৮ রানে পাকিস্তানকে হারানোর পর বাংলাদেশী ক্রিকেট দর্শকদের শোকে স্তব্ধ হতে দেখে পাকিস্তানের লোকজনই আসলে লজ্জ্বা পাবে! পাকিস্তানীরা বাংলাদেশীদের পুছেও না। সৌদিরা ডাকে ‘মিসকিন’। তাতেও প্রেমের কমতি নেই। আসলে নাদির শাহ বা তৈমুর লং যদি আজকের যুগে ফিরে এসে দেখতেন যাদেরকে তারা গণিমতের মাল হিসেবে দাস দাসী করে এনেছিলেন তাদেরই মুসলমান উত্তরপুরুষরা মূর্তি ভাঙ্গছে কামান দেগে, মন্দির ভাঙছে... আফগানিস্থান থেকে শুরু করে ইরান আর ঐদিকের সমস্ত অঞ্চলের “হিন্দু” বা পৌত্তলিক বিদ্বেষ যে আকার নিয়েছে- দেখে তারা আশ্চর্য হতেন!
আরে মশাই, ক্রিকেট কি রাজনীতির বাইরের জিনিস? অন্তত এই উপমহাদেশে? যদি কাল ঢাকার পল্টনে ভারত বাংলাদেশ নামে দুই দল কুতকুত খেলেও, কিংবা গোল্লাছুট- বিশ্বাস করেন হাজার হাজার লোক জড়ো হবে শুধুই পৈশাচিকভাবে ভারতীয় বিদ্বেষের জন্য! এই যে ‘ভারতীয়’ নামের পরিচয়টি- এটি মুসলিম লীগের কাছে স্রেফ “হিন্দু” আইডেন্টি। পাকিস্তানের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা, পাকিস্তান ক্রিকেট টিমকে তাদের সেকেন্ড চয়েজ (আসলে অনেক ক্ষেত্রে এটি ফাস্ট চয়েজ) সেটি স্বাভাবিক পথ ধরেই এসেছে। মুসলিম উম্মাহ চেতনা পাকিস্তানের প্রতি স্বাভাবিক ভালোবাসা। আরো একটি দিক হচ্ছে পাকিস্তানের গণহত্যা রেপ নিয়ে। আসলে সত্য হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের “গণহত্যা” চলেছে হিন্দু কমিউনিটির উপর। আরেকটি আওয়ামী লীগ সমর্থকদের উপর। কারণ এরা ভারতের হয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ চালিয়েছে। তাজউদ্দিন আসলে একজন ছদ্মবেশী হিন্দু তার নাম ‘তেজারাম’ এটি পাকিস্তানের তখনকার দায়িত্বশীল সেনা অফিসাররাই বিশ্বাস করতেন! আর হিন্দু নারীরাই বেশি রেপ হয়েছে কে না জানে? শরণার্থীদের ৯৮ ভাগ ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়। ফলে পাকিস্তানের প্রতি কি করে রাগ বিদ্বেষ আসবে বাংলাদেশী মুসলিম লীগারদের?
আমি এমন করেই লিখি। দগদগে ঘা দেখাই। অন্যরা এসব সহ্য করতে পারে না। তাই মেনে নিতে পারে না। যুদ্ধের মাত্র সাড়ে তিন বছর পর ভুট্ট কী করে জনমানুষের বিপুল ভালোবাসা লাভ করেছিলো এই ঢাকাতে? যুদ্ধের পর পাকিস্তান ক্রিকেট টিমের সফরের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করেছিলেন ইমরান খান তাদের দেশের টেলিভিশনে। তিনি বলেছেন, রাস্তার দুই পাশের মানুষ তাদের টিম বাসের সামনে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলে যেভাবে রব তুলেছিলো দেখে তিনি কেঁদে ফেলেছিলেন। তিনি মন্তব্য করেছিলেন, এই ভালোবাসার বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে পাকিস্তানের সামরিক শাসকরা...।
ইমরান খান ভুল বলেননি। ৭০ সালের নির্বাচন মেনে নিলে বাংলাদেশের জন্মই হতো না। ইন্দিরা গান্ধিও পাকিস্তান ভাঙ্গার কোন সুযোগ পেতেন না। তারপরও পাকিস্তান ভেঙ্গেছে। আমাদের একশ্রেণীর বুদ্ধিজীবী মুক্তিযুদ্ধকে চেতনা নাম দিয়েছেন। সেখানে নিজেদের মন মত নানা রকম কথা লিখে প্রচার করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে শেষ কথা বলে গিয়েছেন আবুল মনসুর আহমদ, আমি এটা সব সময় উল্লেখ করি, তাঁর ‘আমার দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর’ বইতে তিনি বাংলাদেশের জন্ম নিয়ে লিখেছেন, এক পাকিস্তানের জায়গায় দুই পাকিস্তানের জন্ম হয়েছে। লাহোর প্রস্তাবে পাকিস্তান নামের কোন রাষ্ট্রের কথা ছিলো না। একাধিক মুসলিম দেশের কথা ছিলো। সেটাই ঘটেছে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হয়েছে। ভারত সেখানে একটা ভূমিকা রেখেছে মাত্র...।
যাক, নতুন করে আর কিছু বলার নেই। সাধারণ ক্রিকেট দর্শকদের কথা বাদই দেন, ক্রিকেট সাংবাদিকদের মধ্যে যে পরিমাণ কট্টর মুসলিম লীগারদের আধিক্য- তাতে খেলাটার সৌন্দর্য এই দেশে বহু আগেই নষ্ট হয়ে গেছে!
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................