পৃথিবীতে যত সাম্রাজ্যবাদ আছে, ব্রিটিশ, পূর্তগিজ, ফরাসী...সেই উপনিবেশিক শাসনের হত্যা শোষণ নিপীড়ন নিয়ে কথা বলা ইতিহাস চর্চা, খোদ ইউরোপীয়ানরা তাদের উপনিবেশ শাসনের সময়কার অনাচার নিয়ে কথা বলে। একমাত্র ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে কথা বলাই হারাম! যে এটা নিয়ে কথা বলবে, সে ইহুদী, ইজরাইয়েল, মোসাদ, বিজেপি, র’, হিন্দু জাতীয়তাবাদী...।
এই জন্য ভারতে তিনশো বছরের মুসলিম শাসন যে একটা সাম্রাজ্যবাদ সেটার কোন স্বীকৃতি নেই! ভারতের সেই সময়ের ইতিহাস লিখেছে মুসলমানরা। সেই ইতিহাসই বামপন্থীদের ইতিহাসের রেফারেন্স। তারা কখনোই ভারতে ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে সঙ্গে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ নিয়ে একটি কথাও বলেনি। উল্টো ভারতে মুসলিম শাসনকে বাদ দিলে ভারতের ইতিহাস বলতে কিছু থাকে না বলে দাবী করে। এখানে কেউ পাল্টা যুক্তি দিলে আর রক্ষে নেই! সে সোজা চাড্ডি!
তাদের যুক্তি হচ্ছে, মুসলমানরা বহিরাগত হলেও এখানে সাম্রাজ্য স্থাপন করে এখানেই থেকে গিয়েছিল। এটাকে নিজেদের দেশ বানিয়ে ফেলেছিল। এর বিরুদ্ধে পাল্টা যুক্তি যখন দেই- আমেরিকায় সাদারা তো সেখানে উপনিবেশ স্থাপন করে সেখানেই থেকে গিয়েছিল। সেটাকেই নিজেদের দেশ বানিয়ে ফেলেছিল। তবু আজো সাদাদের উপনিবেশ ইতিহাস, তাদের অত্যাচার আদিবাসীদের উপর, সেসব কি আমরা বলি না? আফ্রিকাকেও তো সাদারা নিজেদের দেশ বানিয়ে থেকে গেছে। খোদ সাদা চামড়ার মার্কিন লেখকরা বিস্তর বই লিখে গেছেন এ বিষয়ে। এবি গুথরি নামের একজন লেখক ব্রিটিশ সাদারা কেমন করে আমেরিকা গিয়ে উপনিবেশ স্থাপন করে আদিবাসীদের মেরেহেজে দখল করেছিল তা নিয়ে ‘দ্য বিগ স্কাই’ নামের এক ঢাউস উপন্যাস লিখে বুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কেবল আমিই তৈমুর লং নিয়ে কথা বলে তিরস্কার পেলাম! কেন ভারতীয় বাচ্চাদের নাম তৈমুর রাখা হয় সে প্রশ্ন করে চাড্ডি হলাম!
লড ক্লাইভের লুটপাটের ইতিহাস ভারতে একটি জনপ্রিয় ইতিহাস। এই ইতিহাস সকলেই জানে। এসব নিয়ে কথা বলা হচ্ছে ‘ইতিহাস চর্চা’। এখন যারা লন্ডনে বসবাস করে তেমন ভারতীয় উপমহাদেশীয়রা মনে করে আমাদের টাকা লুটপাট করেই ব্রিটিশদের এত ধনসম্পদ। লড ক্লাইভ একটা খলনায়ক আমাদের ইতিহাস। কিন্তু সুলতান মাহমদু ভারতীয়দের এত বেশি দাস বানিয়ে ধরে নিয়ে প্যারস্যের দাস বাজারে উঠিয়েছিলেন যে দাসদের দর সর্বনিন্ম পর্যায়ে পড়ে গিয়েছিল। এত লুট মাহমুদ আর ইরানের নাদির শাহ করেছিল যে সেসব দেশ সম্পদশালী হয়ে গিয়েছিল। আজ কেউ ইরান বা মধ্যপাচ্য গিয়ে বলে না, আমাদের ধনসম্পদ লুটপাট করে ওরা সম্পদশালী হয়েছে। উল্টো সুলতান মাহমদু, নাদির শাহদের ইতিহাস বলা হলে সেটার নাম হয় “মুসলমানদের ভিলেন বানানো হয়েছে”!
মুঘল আমলের দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলাই তো ডাইরেক্ট ‘মুসলিম বিদ্বেষী’! ইংরেজদের সময় দুর্ভিক্ষ নিয়ে কথা বলুন- সেটা ইতিহাস চর্চা, কিন্তু তাজমহল বানিয়ে কোটি কোটি মানুষ ভাত-রুটির জন্য মরে পড়ে থেকেছে সেটা নিয়ে কথা বলা মানে আপনি কারোর এজেন্ট হয়ে লিখছেন! এই যে ভারতে ‘মুসলিম শাসন’ নিয়ে কথা বললেই বিতর্কিত হতে হয়, এর মানে হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের’ উত্তরাধিকাররা সরব। বামপন্থীরা তাদেরকে জনসমর্থন মনে করে দলে পাবার আশা করে। এসব স্বপ্ন স্বপ্নদোষে পরিণত হবে।
এসব নিয়ে লেখার কারণে আমি সেফ জোন থেকে বেরিয়ে গেছি। তথাকথিত নিরপেক্ষ আমি হইনি। আমার পক্ষ সত্যের পক্ষে। ভারতবর্ষে ব্রিটিশ, পূর্তগিজ, ফরাসী উপনিবেশ হয়েছিল, ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদ ঘটেছিল, তেমনি এখানে মুসলিম শাসনে ‘ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ’ দখল করেছিল। ইউরোপীয়ান সাম্রাজ্যবাদ মধ্যযুগীয় একটি আগ্রাসনবাদ। এর এখন কোন বাস্তবতা নেই। কিন্তু মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ একটি ধর্মীয় মতবাদ। যার ভারতীয় উপমহাদেশীয় নাম “মুসলিম লীগ”। এই মুসলিম লীগ দর্শনের কথা বলেই আমি সেফ জোন থেকে বেরিয়ে গেছি। নইলে আমি মিষ্টি মিষ্টি মুক্তমনা থেকে যেতে পারতাম। ফলে এখন আমার লেখা যাদের যৌক্তিক বলে মনে হয় তারাও নিজেদের সেফ জোনে রাখতে সেটি প্রকাশ করেন না। আমার প্রথম বইতেও আমি ভারতবর্ষের মুসলিম লীগ দর্শনের ইতিহাস বর্ণনা করেছি। এই বইটি প্রকাশ হওয়ার পর একশ্রেণীর মুসলিম লীগ ও বামপন্থীদের গা জ্বলে যাচ্ছে। শুনেছি বইটি ভালো চলছে, সেটিও একটি কারণ প্রতিদিন আমার বিরুদ্ধে পোস্ট দেয়ার।
আমার বই নিয়ে আমি কিছু বলবো না। পাঠকদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। সেটা থাকুক। আমার কথা হচ্ছে আমি জনপ্রিয় হতে আসিনি। আমাকে চাড্ডি, মোসাদ, আরএসএস, সিআইএ এজেন্ট যা খুশী বলা হোক, আমার কিছু যায় আসে না। আমি যা লিখি সে বিশ্লেষণ যে কতখানি বাস্তব, সত্য, সেটি আজ না হলেও কাল বুঝতে পারবেন। তাদের হতাশাটা আমি বুঝতে পারি। বইটি ঠেকাতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। প্রথম বই নিয়ে সেরকম কৌশলই ছিল। আমার প্রথম বই বের হওয়াই একটা আড় হয়ে ছিল প্রকাশকদের জন্য। সেটি কেটে গেছে। এরপর একের পর এক বই বের হতে পারবে। আমার সেসব বই আমাকে জনপ্রিয় নয়, আরো বেশি বন্ধুহীন করে দিবে। কিন্তু আমাকে উপেক্ষা করতে পারবেন না...।
এক দশক আগে ব্লগে লিখেছিলাম, আমি নতুন প্রজন্মের জন্য লিখি। আজো সে কথাই বলি। আমি নতুন প্রজন্মের জন্য লিখি। আমি তাদের নাড়িয়ে দিতে চাই, প্রচলিত ইতিহাস ঐতিহ্য বলতে যা জানো, তা সত্য নয়...।
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................