প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ: চাপাবাজীর একাংশ ও জবাব
(আলাপরত তৃতীয় ব্যক্তিটি প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ বইয়ের মিথ্যাচারের লাইনে লাইনে ঢুকে সত্যটা ধরিয়ে দিয়েছে)
লোকটি বললো,- ‘সাজিদ, আমি মনে করি, তোমাদের ধর্মগ্রন্থ, আই মিন আল কোরান, সেটা কোন ঐশী গ্রন্থ নয়। এটা মুহাম্মদের নিজের লেখা একটি বই।মুহাম্মদ করেছে কি, এটাকে জাষ্ট স্রষ্টার বাণী বলে চালিয়ে দিয়েছে।’
এইটুকু বলে লোকটা আমাদের দু’জনের দিকে তাকালো। হয়তো বোঝার চেষ্টা করলো আমাদের রিএ্যাকশান কি হয়।
আমরা কিছু বলার আগেই লোকটি আবার বললো, – ‘হয়তো বলবে, মুহাম্মদ লিখতে-পড়তে জানতো না। সে কিভাবে এরকম একটি গ্রন্থ লিখবে? ওয়েল! এটি খুবই লেইম লজিক। মুহাম্মদ লিখতে পড়তে না জানলে কি হবে, তার ফলোয়ারদের অনেকে লিখতে-পড়তে পারতো।উচ্চ শিক্ষিত ছিলো। তারা করেছে কাজটা।মুহাম্মদের ইশারায়।’
তৃতীয় ব্যক্তি: মুহাম্মদ লেখাপড়া জানতেন কিনা সেটা নিয়ে জোর বিতর্ক আছে। তবে হযরত মুহাম্মদ অশিক্ষিত ছিলেন’ এটা যে কোন মুসলমানের কাছে অত্যন্ত প্রিয়। কারণটা হচ্ছে এতে কুরআন যে মুহাম্মদ নিজে লিখেননি সেটাকে বেশ বড় করে প্রচার ও বিশ্বাস করা যায়। কিন্তু সহি হাদিস বলছে একটি চুক্তির খসড়া পাঠ করে মুহাম্মদ নিজ হাতে একটি লাইন কেটে বাদ দিয়েছিলেন! Sahih Muslim, Book 019, Number 4401), al-Bara’ b. ‘Azib, one of Mohammad’s gang members testified: “Abu Talib penned the treaty between the Holy Prophet (may peace be upon him) and the polytheists, on the Day of Hudaibiya. ……………..They (the polytheists) said: Do not write the words: “Messenger of Allah.” If we knew that you were the Messenger of Allah, we would not fight against you”. Smart people indeed! The narrator continues….. “The Prophet (may peace be upon him) said to Ali: “Strike out these words!” He, (Ali) said: “I am not going to strike them out.” So the Prophet (may peace be upon him) struck them out with his own hand………….”. লেখাপড়া না জানলে কেমন করে মুহাম্মদ এটা করেছিল? আলী অস্বীকৃতি জানালে মুহাম্মদ নিজে উঠে লাইনটা কেটে দিলেন কিভাবে? একজন বকলম মানুষের পক্ষে এটা কিছুতে সম্ভব নয়। মুহাম্মদ চাচার সঙ্গে সিরিয়ায় ব্যবসায়ী সফরে যেতেন। সে যুগে স্কুলে ভর্তি হয়ে লিখতে বা পড়তে শিখবে- এমনটা মনে করার কারণ নেই। অভিভাবক শ্রেণী যে কেউ এটা শিখাতে পারতেন। তাছাড়া খদিজা তার ব্যবসা একজন গন্ডমূর্খের হাতে কেন দিবেন? মুহাম্মদ নিরক্ষর ছিলেন খুব বড় করে প্রচার করা হয়- তাহলে কি আলী, ওমর, আবু বকর উচ্চশিক্ষিত ছিলেন? তবু আমার মুমিন ভাইদের কথা যদি মেনে নেই যে মুহাম্মদ লিখতে-পড়তে জানতেন না তহলেও কি প্রমাণ হয় কুরআন হযরত মুহাম্মদ লেখেননি? যেমন কবি হোমার এলিয়াড ও ওডিসি মহাবাক্য লিখেছেন- এই বাক্যে মনে হতে পারে হোমার বুঝি কাগজ-কলম নিয়ে নিজে বসে বসে মহাকাব্যটি লিখেছিলেন। আসলে হোমার জন্মান্ধ ছিলেন এবং নিরক্ষর। তাছাড়া সেই যুগে কোন কবিতাই লেখা হতো না। কবিরা মুখে মুখে কাব্য রচনা করতেন আর ভক্তরা সেটা মুখস্ত করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম ছড়িয়ে দিতো। কাব্য হিসেবে ইলিয়াড ও ওডিসি বহুকাল পরে লিখিত রূপ দেয়া হয়েছিল। আর মূল রচনাকারী হিসেবে রয়ে গেছেন হোমারের নাম। আমাদের লালন ফকিরও জীবনে একটি গানও লিখেননি। তিনি লেখাপড়া সম্ভবত জানতেন না। এখন কেউ কি বললেন- লালনের গান লালনের নয় কারণ উনি তো লেখাপড়া জানতেন না- এগুলি নিশ্চয় ওহি হিসেবে কেউ পাঠিয়েছিল? হযরত মুহাম্মদ লেখাপড়া না জানলেও তিনি মুখে মুখে কবিতা বলে যেতেন যা উনার সহযোগিরা তখনি সেটা লিপিবদ্ধ করে ফেলতেন। একজন কবির পক্ষে অক্ষর জ্ঞান থাকার প্রয়োজন নেই। কাজেই হযরত মুহাম্মদ লেখাপড়া জানতেন না তাই কুরআন তিনি কিভাবে লিখবেন- এরকম যুক্তি হাস্যকর।
সাজিদ তার কাপে শেষ চুমুক দিলো। তখনও সে চুপচাপ।
লোকটা বললো,- ‘কিছু মনে না করলে আমি একটি সিগারেট ধরাতে পারি? অবশ্য, কাজটি ঠিক হবে না জানি।’
আমি বললাম,- ‘শিওর!’
এতক্ষণ পরে লোকটি আমার দিকে ভালোমতো তাকালো। একটি মুচকি হাসি দিয়ে বললো,- ‘Thank You…’
সাজিদ বললো,- ‘খালু, আপনি খুবই লজিক্যাল কথা বলেছেন। কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর নিজের বানানো হতেও পারে। কারন, কোরান যে ফেরেস্তা নিয়ে আসতো বলে দাবি করা হয়, সেই জিব্রাঈল আঃ কে মুহাম্মদ সাঃ ছাড়া কেউই কোনদিন দেখেনি।’
লোকটা বলে উঠলো,- ‘এক্সাক্টলি, মাই সান।’
– ‘তাহলে, কোরানকে আমরা টেষ্ট করতে পারি, কি বলেন খালু?’
– ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, করা যায়…….’
সাজিদ বললো,- ‘কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর বানানো কি না, তা বুঝতে হলে আমাদের ধরে নিতে হবে যে, মুহাম্মদ সাঃ স্রষ্টার কোন দূত নন।তিনি খুবই সাধারন, অশিক্ষিত একজন প্রাচীন মানুষ।’
লোকটা বললো,- ‘সত্যিকার অর্থেই মুহাম্মদ অসাধারণ কোন লোক ছিলো না। স্রষ্টার দূত তো পুরোটাই ভূয়া।’
সাজিদ মুচকি হাসলো। বললো,- ‘তাহলে এটাই ধরে নিই?’
– ‘হুম’- লোকটার সম্মতি।
সাজিদ বলতে লাগলো,- ‘খালু, ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি, হজরত ঈউসুফ আঃ এর জন্ম হয়েছিলো বর্তমান ফিলিস্তিনে। ঈউসুফ আঃ ছিলেন হজরত ঈয়াকুব আঃ এর কনিষ্ঠতম পুত্র। ঈয়াকুব আঃ এর কাছে ঈউসুফ আঃ ছিলেন প্রাণাধিক প্রিয়।কিন্তু, ঈয়াকুব আঃ এর এই ভালোবাসা ঈউসুফ আঃ এর জন্য কাল হলো। তার ভাইয়েরা ষড়যন্ত্র করে ঈউসুফ আঃ কে কূপে নিক্ষেপ করে দেয়। এরপর, কিছু বণিকদল কূপ থেকে ঈউসুফ আঃ কে উদ্ধার করে তাকে মিশরে নিয়ে আসে। তিনি মিশরের রাজ পরিবারে বড় হন।ইতিহাস মতে, এটি ঘটে- খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের আমেনহোটেপের রাজত্বকালের আরো তিন’শ বছর পূর্বে। খালু, এই বিষয়ে আপনার কোন দ্বিমত আছে?’
লোকটা বললো,- ‘নাহ। কিন্তু, এগুলো দিয়ে তুমি কি বোঝাতে চাও?’
তৃতীয় ব্যক্তি: ইতিহাস হিসেবে যা বলছেন এগুলোর কোনটাই ইতিহাস নয় কারণ এগুলোর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই! ইউসুফ, ইয়াকুব, বেকুব, মুসা ঈসা বলতে কোন মানুষের ঐতিহাসিক প্রমাণ নেই। ইহুদীরা এইসব নবীদের কথা তাদের ধর্মীয় বই থেকে গল্প করত। সে যুগে এগুলোকেই ইতিহাস মনে করা হত। এগুলো তাই ইহুদীরা ইতিহাস হিসেবে বিশ্বাস করত। আরবরাও এইসব ‘ইতিহাস’ জানত।… আচ্ছা বাকীটুকু বলে যান…
সাজিদ বললো,- ‘খালু, ইতিহাস থেকে আমরা আরো জানতে পারি, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকে চতুর্থ আমেনহোটেপের আগে যেসকল শাসকেরা মিশরকে শাসন করেছে, তাদের সবাইকেই ‘রাজা’ বলে ডাকা হতো। কিন্তু, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ শতকে চতুর্থ আমেনহোটেপের পরে যেসকল শাসকেরা মিশরকে শাসন করেছিলো, তাদের সবাইকে ‘ফেরাঊন’ বলে ডাকা হতো। ঈউসুফ আঃ মিশরকে শাসন করেছিলেন খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্দশ শতকের চতুর্থ আমেনহোটেপের আগে।আর, মূসা আঃ মিশরে জন্মলাভ করেছিলেন চতুর্থ আমেনহোটেপের কমপক্ষে আরো দু’শো বছর পরে।অর্থাৎ, মূসা আঃ যখন মিশরে জন্মগ্রহন করেন, তখন মিশরের শাসকদের আর ‘রাজা’ বলা হতো না, ‘ফেরাঊন’ বলা হতো।’
– ‘হুম, তো?’
– ‘কিন্তু খালু, কোরানে ঈউসুফ আঃ এবং মূসা আঃ দুইজনের কথাই আছে। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, কোরান ঈউসুফ আঃ এর বেলায় শাসকদের ক্ষেত্রে ‘রাজা’ শব্দ ব্যবহার করলেও, একই দেশের, মূসা আঃ এর সময়কার শাসকদের বেলায় ব্যবহার করেছে ‘ফিরাঊন’ শব্দটি। বলুন তো খালু, মরুভূমির বালুতে উট চরানো বালক মুহাম্মদ সাঃ ইতিহাসের এই পাঠ কোথায় পেলেন? তিনি কিভাবে জানতেন যে, ঈউসুফ আঃ এর সময়ের শাসকদের ‘রাজা’ বলা হতো, মূসা আঃ সময়কার শাসকদের ‘ফেরাঊন’? এবং, ঠিক সেই মতো শব্দ ব্যবহার করে তাদের পরিচয় দেওয়া হলো?’
তৃতীয় ব্যক্তি: ব্রাদার আপনি দেখছি মুহাম্মদের চাইতে বেশি কুরআন বুঝে গেছেন! মুহাম্মদকে (মুহাম্মদের দাবী অনুযায়ী) জিব্রাইল এসে কুরআন ব্যাখা করে যেতো সেই মুহাম্মদ তো এরকম কিছু তার সারগেদদের বলে যান নাই। ইবনে কাথির, আল তাবারী, ইমাম বুখারীরা কেউ এইসব চমকপ্রদ তথ্য উপস্থাপন করতে পারেনি! আপনি তাহলে মুহাম্মদের চাইতে বড় কুরআন বুঝনেওলা! যেমন আপনার ওস্তাদ জাকির নায়েক নতুন নতুন আবিস্কার কুরআন থেকে বের করে আনে!… যাই হোক, এবার আসল কথায় আসি। মনে রাখতে হবে কুরআনে পিড়ামিডের কোন উল্লেখ নাই! এমন কি প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লিপি পাঠোদ্ধার করা না গেলে মিশরীয় সভ্যতার কোন ইতিহাসই মানুষ বুঝতে পারত না। অথচ কুরআন তো ১৪০০ বছর আগে থেকেই আছে। মানুষ হায়ারোগ্লিফিক লিপি আবিস্কার করেছে এই সেদিন মাত্র। কুরআনে যখন ‘ফেরাউন’ বলে কাউকে উল্লেখ করেছে সেটা একজন ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কথনই সেটা রাজার উপাধী তা স্পষ্ট করে কুরআনে লেখা নেই। সারাবিশ্বের মুসলিমরা তাই ফেরাউন বলতে মিশরের একজন অত্যাচারী শাসক হিসেবে জানে যে কিনা মুসা নবীর সঙ্গে ফাইট করেছিলো। কুরআনের ২৭টি সুরায় ৭৪ বার ফেরাউন নামটি এসেছে কিন্তু একবারও ফেরাউনের প্রকৃত নামটি আল্লাহ বলেননি! অথচ ফেরাউনের স্ত্রীর নাম উল্লেখ করেছেন আসিয়া বিবি হিসেবে। কুরআনে একটি সুরাতেও কেউ দেখাতে পারবে না ফেরাউন বলতে রাজার উপাধি বুঝানো হয়েছে। আচ্ছা যে লোক মনে করে ফেরাউন নামের এক রাজার সঙ্গে মুসা নবীর যুদ্ধ হয়েছিলো সে তো তাই করবে যা কুরআনে করা হয়েছে। ফেরাউনকে ফেরাউন বলা হয়েছে আর অন্যদের রাজা– কারণ কুরআন লেখক মনে করেছে মুসার সঙ্গে ফাইট করা রাজার নাম ছিলো ফেরাউন! আরেকটা বিষয়, মুসা নবী আর ফেরাউনের কাহিনীর সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণ ও কংস রাজার কাহিনী হুবহু মিল কেন বলেন তো? কারণ হচ্ছে আর্যদের প্রাচীন উপকথা অপভ্রংশ হয়ে একেক জায়গায় একেক রূপ নিয়েও কাহিনী একই রকম থেকে গিয়েছিলো। মুসা এই জন্যই ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত হয় না।… আচ্ছা আপনারা আগে শেষ করেন।
মহব্বত আলি তৃতীয় লোকটির যুক্তিতে খুশি হয়ে হো হো হো করে হাসতে লাগলো। বললো,- ‘মূসা আর ঈউসুফের কাহিনী তো বাইবেলেও ছিলো। মুহাম্মদ সেখান থেকে কপি করেছে, সিম্পল।’
সাজিদ মুচকি হেসে (আসলে ফ্যাকাসে হাসি দিয়ে) বললো,- ‘খালু, ম্যাটার অফ সরো দ্যাট, বাইবেল এই জায়গায় চরম একটি ভুল করেছে। বাইবেল ঈউসুফ আঃ এবং মূসা আঃ দুজনের সময়কার শাসকদের জন্যই ‘ফেরাঊন’ শব্দ ব্যবহার করেছে, যা ঐতিহাসিক ভুল। আপনি চাইলে আমি আপনাকে বাইবেলের ওল্ড টেষ্টামেণ্ট থেকে প্রমান দেখাতে পারি।’
তৃতীয় ব্যক্তি: ওল্ড টেস্টামেন্টই সঠিক। কারণ ওলন্ড টেস্টামেন্ট যারা লিখেছিলেন তারা জানতেন মিশরের রাজাদের উপাধি ‘ফেরাউন’। কারণ সে সব জায়গায় রাজাদের ‘ফেরাউন’ বলে উল্লেখ করেছে। ইহুদী পন্ডিতরা অনেক শিক্ষিত ছিলো তাদের ধর্ম সম্পর্কে। হযরত খাদিজার চাচাতো ভাই নওফেলও একজন প্রসিদ্ধ তাওরাত বিশেষজ্ঞ ছিলেন যিনি আরবীতে তাওরাত অনুবাদ করেছিলেন। মুহাম্মদকে তিনি তালিম দিয়েছিলেন তাওরাত সম্পর্কে। মুসার সঙ্গে ফাইট করা ফেরাউনের নাম বলতে না পারাটা খুব দু:খজনক। যার লাশ আল্লাহ সংরক্ষণ করে রেখেছে পৃথিবীবাসীকে দেখানোর জন্য- তার নামটাই উল্লেখ নেই- এ কেমন কথা? আসল কিচ্ছা হচ্ছে, ফেরাউনের লাশ সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে নীল নদের কাছে-এমনটা আরবের ইহুদীরা বংশ পরম্পরায় মিথে পরিণত করেছিলো। মুহাম্মদ সেই মিথটাই জানতেন। কারণ মুসা নামের ঐতিহাসিক প্রমাণহীন ব্যক্তির সঙ্গে কোন ফেরাউনের যুদ্ধ হয়েছিলো (সেরকম কোন যুদ্ধই আসলে হয়নি যেখানে সমুদ্র দুভাগ হয়ে গিয়েছিলো!) তা কোনদিনই প্রমাণ করা যাবে না। তবু ধার্মীক মন বলে কথা। তাওরাতের বর্ণনাকে পুঁজি করে সময়কাল ধরে অনেকে অনেক মত দেন। যেমন- মুসা নবী জন্ম নিয়েছিলেন দ্বিতীয় রামেসিসের সময়। অনেকে দাবী করেন মুসা বড় হবার কালে ফেরাউনের দ্বিতীয় রামেসিসের) মৃত্যু ঘটে এবং মুসার জীবনের পরের অংশ ঘটে দ্বিতীয় রামেসিসের উত্তরাধিকারী মারনেপতাহর রাজত্বকালে। আরেক গ্রুপ ঈমানদার মনে করেন, মুসার সময়ের ফেরাউনের নাম ছিল ওলীদ ইবনে মাসআব ইবনে রাইয়ান। তার বয়স হয়েছিল চারশ বছর। আপনি মাত্রই বললেন হযরত ইউসুফের সময়কালে ফেরাউন উপাধি ছিলো না- অথচ ঈমানদারদেরই দাবী হজরত ইউসুফের যুগের ফেরাউনের নাম ছিল রাইয়ান। এ দুই ফেরাউনের মধ্যে ৪০০ বছর সময়ের ব্যবধান ছিল। মানুষ কি করে চারশ বছর বাঁচত সেই উত্তর আপনাকে দিয়ে যেতেই হবে! উনারা কি একা চারশ বছর বাঁচত নাকি সঙ্গে মন্ত্রী স্ত্রী সন্তান প্রজা সবার বয়স চারশো ছিলো? সুরা আন কাবুতে বলা হয়েছে নূহ নবী পঞ্চাশ হাজার বছর পর্যন্ত তার উম্মদদের মধ্যে ছিলেন! এটা কেমন করে সম্ভব? তিনি কি একা এত বছর বেঁচে ছিলেন নাকি সঙ্গে তার দেশের লোকজন? এরকম রূপকথার গল্প যে বইতে থাকে সেটাকে ঐশ্বরিক বলাই ভাল! না হলে গাঁজাখুরিকে কেউ বিশ্বাস করবে না! এই ধরণের চাপাবাজী করার আগে ডব্লু এসটি ক্লেয়ার লিখিত ‘দি সোর্স অব ইসলাম’ বইটি পড়লে জানতে পারতেন কুরআনের তথাকথিত ঐতিহাসিক সব তথ্য ছিলো আরবে প্রচলিত সব রূপকথা। আদ জাতি, লুত জাতি, সামুদ জাতি বলতে আরবরা প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বাস করত। তারা আরো একটি জাতিকে বিশ্বাস করত- জ্বিন জাতি! অদৃশ্য হতে পারা এবং আকাশে বসবাস করা এইসব জাতিদের আরবরা প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বাস করত। আজতক অদৃশ্য ব্যাকটেরিয়া ভাইরাস আবিস্কার হয়ে গেলো অথচ জ্বিন জাতিদের কোন টেলিস্কোপে পাওয়া গেলো না। জ্বিনদের তো মানুষদের মতই বিচার হবে। তারা তো আল্লাহর ফেরেস্তা না- তাহলে মানুষ কেন তাদের সন্ধান পাবে না?
লোকটা কিছুই বললো না। চুপ করে আছে। সম্ভবত, উনার প্রমান দরকার হচ্ছে না। (এটা বানায় লেখা। কারণ তৃতীয় ব্যক্তির কথার পর সাজিদেরই চাপা থেমে যাবার কথা)
সাজিদ বললো,- ‘যে ভুল বাইবেল করেছে, সে ভুল অশিক্ষিত আরবের বালক মুহাম্মদ সাঃ এসে ঠিক করে দিলো, তা কিভাবে সম্ভব, যদি না তিনি কোন প্রেরিত দূত না হোন, আর, কোরান কোন ঐশি গ্রন্থ না হয়?’
লোকটি চুপ করে আছে। এরমধ্যেই তিনটি সিগারেট খেয়ে শেষ করেছে। নতুন আরেকটি ধরাতে ধরাতে বললো,- ‘হুম, কিছুটা যৌক্তিক।’
সাজিদ আবার বলতে লাগলো,- ‘খালু, কোরানে একটি সূরা আছে, সূরা আল ফাজর নামে। এই সূরার ৬ নম্বর আয়াতটি এরকম,- ‘তোমরা কি লক্ষ্য করো নি, তোমাদের পালনকর্তা ইরাম গোত্রের সাথে কিরূপ ব্যবহার করেছেন?’
এই সূরা ফাজরে মূলত আদ জাতি সম্পর্কে বলা হয়েছে। আদ জাতির আলাপের মধ্যে হঠাৎ করে ‘ইরাম’ নামে একটি শব্দ চলে এলো, যা কেউই জানতো না এটা আসলে কি। কেউ কেউ বললো, এটা আদ জাতির কোন বীর পালোয়ানের নাম, কেউ কেউ বললো, এই ইরাম হতে পারে আদ জাতির শারীরিক কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য, কারন, এই সূরায় আদ জাতির শক্তিমত্তা নিয়েও আয়াত আছে। মোদ্দাকথা, এই ‘ইরাম’ আসলে কি, সেটার সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা কেউই দিতে পারেনি তখন। এমনকি, গোটা পৃথিবীর কোন ইতিহাসে ‘ইরাম’ নিয়ে কিছুই বলা ছিলো না। কিন্তু, ১৯৭৩ সালে, ন্যাশনাল জিওগ্রাফি সিরিয়ায় মাটির নিচে একটি শহরের সন্ধান পায়।এই শহরটি ছিলো আদ জাতিদের শহর। সেই শহরে পাওয়া যায়, সুপ্রাচীন উঁচু উঁচু দালান। এমনকি, এই শহরে আবিষ্কার হয় তখনকার একটি লাইব্রেরি। এই লাইব্রেরিতে একটি তালিকা পাওয়া যায়। এই তালিকায় তারা যেসকল শহরের সাথে বাণিজ্য করতো, সেসব শহরের নাম উল্লেখ ছিলো।আশ্চর্যজনক হলেও সত্য এই- সেই তালিকায় ‘ইরাম’ নামের একটি শহরের নামও পাওয়া যায়, যেটা আদ জাতিদেরই একটি শহর ছিলো। শহরটি ছিলো একটি পাহাড়ের মধ্যে। এতেও ছিলো সুউচ্চ দালান।
চিন্তা করুন, যে ‘ইরাম’ শব্দের সঠিক ব্যাখ্যা এর পূর্বে তাফসিরকারকরাও করতে পারেনি। কেউ এটাকে বীরের নাম, কেউ এটাকে আদ জাতির শারিরীক বৈশিষ্ট্যের নাম বলে ব্যাখ্যা করেছে, ১৯৭৩ সালের আগে যে ‘ইরাম’ শহরের সন্ধান পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে ছিলো না, কোন ভূগোলবিদ, ইতিহাসবিদই এই শহর সম্পর্কে কিছুই জানতো না, প্রায় ৪৩ শত বছর আগের আদ জাতিদের সেই শহরের নাম কিভাবে কোরান উল্লেখ করলো? যেটা আমরা জেনেছি ১৯৭৩ সালে, সেটা মুহাম্মদ সাঃ কিভাবে আরবের মরুভূমিতে বসে ১৪০০ বছর আগে জানলো? হাউ পসিবল? তিনি তো অশিক্ষিত ছিলেন।কোনদিন ইতিহাস বা ভূগোল পড়েন নি। কিভাবে জানলেন, খালু?’
তৃতীয় ব্যক্তি: খালুর কথা রাখেন। আমি বলছি শুনেন। সুরা ফাজরের আয়াতটা আমি উল্লেখ করছি “তুমি কি ভেবে দেখনি তোমার প্রতিপালক আ’দ জাতির ইরামে কী করেছিলেন? তাদের ছিল সুউচ্চ সব স্তম্ভ, যেমনটি পৃথিবী কোনোদিন দেখেনি আগে।” (কুরআন, সুরা ফাজর, ৮৯:৬-৮)”। এই যে আয়াতে বলা হয়েছে “তুমি কি ভেবে দেখনি” এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এর অর্থ দাঁড়ায় আরবরা এই নগরির কথা জানত। পৃথিবীর বুক থেকে মুছে যাওয়া ট্রয় নগরি পরবর্তীতে প্রত্ত্বতত্ত্ববিদরা আবিস্কার করেছিলেন। কিন্তু হোমারের কাব্যে ট্রয় নগরি ও হেলেনের কথা মুখে মুখে সাহিত্য হিসেবে চলে এসেছিলো। সেই ট্রয়কে ঘিরে হোমার যে কাব্য লিখেছিলেন তা গল্পগথা হলেও ট্রয় নগরিটি থাকতেও পারে যা পরে আবিস্কৃত হয়েছিলো। যেমন মহাভারতে উল্লেখিত প্রাচীন ভারতের অনেক স্থান আজো পাওয়া যায়। তাই বলে কি মহাভারতের চরিত্ররা সবাই বাস্তব? সব জাতির মধ্যেই মিথ রূপকথা প্রচলিত যা এক সময় মানুষ বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে আসে কারণ মানুষ কল্পনা করতে ভালোবাসে। আপনার এইসব তথ্য অন্ধবিশ্বাসীদের কাছে সহজেই গ্রহণীয় হবে কিন্তু পড়াশোনা করা লোকজনকে বোকা বানাতে পারবেন না। দেখুন এই ইরাম নগরি আরদের কাছে বহুল শ্রুত একটি শহর ছিলো। সাদ্দাদের বেহেস্তখানা বলতে আরবদের কাছে একটা রূপকথা প্রচলিত আছে। সাদ্দাদ নামের এক প্রভাবশালী রাজা নিজে একটা বেহেস্ত বানিয়ে আল্লার সঙ্গে টেক্কা দিয়ে কিভাবে ধ্বংস হয়েছিলো সে গল্প আরবরা মুখে মুখে বংশ পরম্পরায় চালিয়ে গেছে। এই কাহিনী ইসলামের মিথ হিসেবে মুসলিম বিশ্বেও বহুল শ্রুত। অথচ এটা আলিফ লায়লা নামের আরব্য রজনী গন্থে (আমাদের যেমন ঠাকুরমার ঝুলি) ২৭৭ থেকে ২৭৯ তম রজনীতে রাজার কাছে রানী বর্ণনা করেন। অথচ আপনি এমন দাবী করলেন ইরাম সম্পর্কে কেউ জানত না! এমন কি আরবদের অনেকে মনে করত কাবাঘরের ভেতরে রক্ষিত হযরে আসওয়াদ পাথরটি ‘ইরাম’ নগরি থেকে এসেছে। তারপরও বলবেন স্বয়ং মুহাম্মদ জানত না ‘ইরাম’ খায় নাকি মাথায় দেয়? জিব্রাইল জানত না? দেখুন ইবনে কাথির তার তাফসিরে কি বলেছেন, আ’দ জাতি ক্ষমতাশালী ছিলো তারা নির্মাণ করেছিলো সুউচ্চ বাড়িঘর। তারা এক সময় একেশ্বরবাদ বর্জন করে মূর্তিপুজা শুরু করে তাই আল্লাহ তাদের কাছে হুদ নবীকে পাঠান। তবু তারা কথা না শুনলে আল্লাহ ঝড় দিয়ে তাদের ধ্বংস করে দেন। একদিন সকালে তাই ‘ইরাম’ জনশূন্য পড়ে থাকে (ইবনে কাথির, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া/ কুরআন, ৪৬:২৪-২৫)। ইবনে কাথিরে তাফসিরে কোথাও ‘ইরাম’ বলতে কোন বীরকে বা আদ জাতির শারীরিক সক্ষমতা বলা হয়নি। এই মিথ্যাচারটা কেন করলেন? বরং ‘আল বায়যাওয়ি’ থেকে আব্দুল্লাহ ইবন কিলাবাহ এর বর্ণনা করা একটা ঘটনা জানতে পারা যায়, তিনি ইয়েমেনে একজন আরবের দেখা পান যে কিনা হাদ্রামুতের পশ্চিমে মরুভূমির গহীনে একটা শহরের দেখা পেয়েছেন যা ‘ইরাম’ নগরীর বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়। আরেক বর্ণনায় জানা যায় আবদুল্লাহ নিজেই ‘ইরাম নগরিতে যান এবং জহরত নিয়ে আসেন। এই অভিযানের কথা তখনকার খলিফা সাহাবী মুয়াবিয়া জানতে পারলে আবদুল্লাহ নিজের অভিযানের প্রমাণ হিসেবে কিছু জহরত দেখায় মুয়াবিয়াকে। মুয়াবিয়া তখন কাব আল আহরারের কাছে ‘ইরাম’ শহরের কথা জানতে চাইলে তিনি একই রকম বর্ণনা দেন। তাহলে দেখা যাচ্ছে সাহাবী মুয়াবিয়াই ‘ইরাম’ নগরির কথা জানত আর সেটা নাকি হাদিসে তাফসিরে কোথাও নেই! কি হাস্যকর! আরব্য রজনীতে যে নগরের গল্প আছে সেটা নাকি পৃথিবীর কেউ জানত না কুরআনের আগে!! দ্বিতীয়ত ন্যাশনাল জিওগ্রাফি ‘ইরাম’ নামের কোন শহর আবিস্কারের কথা বলেনি! বরং ঐ অনুষ্ঠানে বলা হয় আবিস্কৃত সভ্যতাটি প্রাচীন উপকথা ‘ইরামের মত মনে করা হয়’ বলা হয়েছে। আর জায়গাটা সিরিয়া নয়- ওমানে! এবার বুঝছেন তো মুহাম্মদ কিভাবে ইরাম নামটা জেনেছিলো?
আমি খেয়াল করলাম, লোকটার চেহারা থেকে মোঘলাই ভাবটা সরে যেতে শুরু করেছে। পুত্রতুল্য ছেলের কাছ থেকে তিনি এতোটা শক খাবেন, হয়তো আশা করেন নি। (এটা আসলে সাজিদের ঘটছে! সে ধরা খেয়ে গেছে এবং ঘামছে!)
সাজিদ আবার বলতে লাগলো,-‘খালু, আর রহমান নামে কোরানে একটি সূরা আছে। এই সূরার ৩৩ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে,-‘হে জ্বীন ও মানুষ! তোমরা যদি আসমান ও জমিনের সীমানায় প্রবেশ করতে পারো, তবে করো। যদিও তোমরা তা পারবেনা প্রবল শক্তি ছাড়া’ মজার ব্যাপার হলো, এই আয়াতটি মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে। চিন্তা করুন, আজ থেকে ১৪০০ বছর আগের আরবের লোক, যাদের কাছে যানবাহন বলতে কেবল ছিলো উট আর গাধা, ঠিক সেই সময়ে বসে মুহাম্মদ সাঃ মহাকাশ ভ্রমণ নিয়ে কথা বলছে, ভাবা যায়? সে যাহোক, আয়াতটিতে বলা হলো,- ‘যদি পারো আসমান ও জমিনের সীমানায় প্রবেশ করতে, তবে করো’, এটি একটি কন্ডিশনাল (শর্তবাচক) বাক্য। এই বাক্যে শর্ত দেওয়ার জন্য If (যদি) ব্যবহার করা হয়েছে। খালু, আপনি যদি এ্যারাবিক ডিকশনারি দেখেন, তাহলে দেখবেন, আরবিতে ‘যদি’ শব্দের জন্য দুটি শব্দ আছে। একটি হলো ‘লাও’, অন্যটি হলো ‘ইন’। দুটোর অর্থই ‘যদি।’ কিন্তু, এই দুটোর মধ্যে একটি সুক্ষ্ম পার্থক্য আছে। পার্থক্যটি হলো- আরবিতে শর্তবাচক বাক্যে ‘লাও’ তখনই ব্যবহার করা হয়, যখন সেই শর্ত কোনভাবেই পূরণ সম্ভব হবে না। কিন্তু, শর্তবাচক বাক্যে ‘যদি’ শব্দের জন্য যখন ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়, তখন নিশ্চয় এই শর্তটা পূরণ সম্ভব। আশ্চর্যজনক ব্যাপার, কোরানে সূরা আর রহমানের ৩৩ নম্বর আয়াতটিতে ‘লাও’ ব্যবহার না করে ‘ইন’ ব্যবহার করা হয়েছে। মানে, কোন একদিন জ্বীন এবং মানুষেরা মহাকাশ ভ্রমণে সফল হবেই।আজকে কি মানুষ মহাকাশ জয় করেনি? মানুষ চাঁদে যায়নি? মঙ্গলে যাচ্ছে না? দেখুন, ১৪০০ বছর আগে যখন মানুষের ধারনা ছিলো একটি ষাঁড় তার দুই শিংয়ের মধ্যে পৃথিবীকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক তখন কোরান ঘোষণা করছে, মহাকাশ ভ্রমণের কথা। সাথে বলেও দিচ্ছে, একদিন তা আমরা পারবো। আরবের নিরক্ষর মুহাম্মদ সাঃ কিভাবে এই কথা বলতে পারে?’
তৃতীয় ব্যক্তি: এবার ভাই হাসায় মারবেন দেখছি! একটা একটা করে জবাব দেই। ভাই জ্বিন জাতিটাকে একটু চন্দ্র অভিযানের মত করে আমারে বুঝান তো? এই জাতিদের সম্পর্কে গোটা বিশ্বে কোন ধারণা আছে? পৃথিবীতে মানুষ এত ভাষায় এত জাতিতে বিভক্ত আর জ্বিনের সেরকম কোন সমস্যাই দেখি না। তারা দেখি বাংলাতেও কথা বলতে পারে! মানে যখন বাঙালী কাউকে ‘জ্বিনে ধরে’ তখন তারা মোটা গলায় কথা বলতে থাকে। যাই হোক, জ্বিনের মত আদিভৌতিক একটা জিনিস যারা বিশ্বাস করে বসে আছে তাদের বুদ্ধির লেবেল ও মাত্রা বিপদজনকভাবে অন্ধ! মুহাম্মদ মহাকাশ ভ্রমণের কথা যখন বলছিলেন তখন উনার মাথায় থাকত প্রাচীন আরবদের নানা উপকথা ধর্মকথা যেখানে ধর্ম প্রবর্তকরা আকাশ ভ্রমণ করে এসেছিলেন বলে প্রচলিত ছিলো। মিরাজের ঘটনা মত হুবহু আরবের কিছু ধর্মের পাওয়া যায়। মুহাম্মদ আকাশ সম্পর্কে কুরআনে যা লিখেছে তাতে মনে হয় না আকাশকে কঠিন কোন পদার্থের ছাদ ছাড়া ‘শুন্য’ কিছু মনে করতেন না। মুহাম্মদের আসমান ও জমিনের “সীমানা” বলাতে তিনি আকাশ ও এই পৃথিবীকে কেমন মনে করতেন তা বুঝা যায়। তিনি মনে করতেন আকাশ দিয়ে আমাদের ডেকে রাখা হয়েছে। যেমন কুরআনে আমরা পাই- আল্লাহ তিনিই যিনি আসমানগুলিকে বিনা খুটিতে উচ্চে দন্ডায়মান রাখিয়াছেন তাহা তোমরা দেখিতেছ, তৎপর তিনিই স্থির হইলেন আরশের উপর, গতিশীল করিয়াছেন সূর্য ও চন্দ্রকে প্রত্যেকেই নিজ নিজ পথে ক্রমাগত চালিত হয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত,—। সূরা-১৩:রা’দ, আয়াত:২। আসমানকে বিনা খুটিতে খাড়া রাখতে পারাটা নি:সন্দেহে বিরাট ব্যাপার বৈকি! এবার আসি আপনার বার বার বলা ‘সেই ১৪০০ বছর আগে’ যখন গাধার পিঠে চড়ত, বকরি চড়াতো পৃথিবীর সবাই তখন এমন জ্ঞানের কথা কিভাবে কুরআনে আসল? হযরত মুহাম্মদের সময় দুনিয়াতে কেবল বকরি চড়ানো রাখাল ছাড়া কোন বই জ্ঞান বিজ্ঞান ছিলো না এমন একটা ইতিহাস বানাতে মুমিনদের জুড়ি নেই। অথচ পৃথিবীতে তখন জ্ঞান বিজ্ঞানের একটা সভ্যতা অলরেডি পুরাতন হয় গিয়েছে। গ্রীকদের মহান সব চিন্তা নায়করা তখন বিশ্বে জ্ঞান বিজ্ঞানে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এমন কি আমাদের ভারতবর্ষে তখন গণিতে বিরাট আবিস্কার ঘটে গেছে। এ কারণে তখন আরবদের মধ্যে কারো চিকিৎসা বিজ্ঞান যেমন ভ্রুণ, মানুষের জন্ম রহস্য, মহাকাশ বিদ্যা, সূর্য, চাঁদ, পৃথিবী সম্পর্কে কোন ধারণা ছিল না এমনটা ভাবাটাই মূর্খতা। ‘সেই ১৪০০ বছর আগে মানুষ মহিষের দুই শিংয়ের উপর পৃথিবী’ এমন গল্প বিশ্বাস করত না। কারণ এরিস্টটলের জন্ম খ্রিস্টের জন্মের ৩৫০ বছর আগে। হিপোক্রেটাস ৪০০ খ্রিস্টপূর্বে চিকিৎসা বিজ্ঞানকে বিপুল সমৃদ্ধ করে ফেলেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করে ছিলেন কেমন করে সন্তান জন্ম নেয়। এরিস্টটল ৩৫০ খ্রিস্টপূর্বে মানব শিশুর জন্ম রহস্য ব্যাখ্যা করেছিলেন। এছাড়া ভারতীয় চিকিৎসাবিদ চরক খ্রিস্টপূর্ব ১২৩ সময়ে ভ্রণ সম্পর্কে বিস্তারিত আবিষ্কার করেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা হযরত মুহাম্মদের চাচাতো ভাই হারিস ইবনে কালাদা ছিলেন একজন চিকিৎসক। তিনি এরিস্টল, হিপোক্রেটাস ও গেলেন লিখিত চিকিৎসা শাস্ত্র অধ্যায়ন করেছিলেন। উনার চিকিৎসাবিদ্যা এতই সুখ্যাতি হয়েছিল যে পারস্য সম্রাট খসরু তাকে রাজ দরবারে ডেকে নিয়ে যান। হারিস থেকে হযরত মুহাম্মদ কুরআনে ভ্রুণ, মানব শিশুর জন্ম রহস্য ও মহাকাশ জ্ঞান বিষয়ে অনেকটাই গ্রহণ করেছিলেন। যেমন কুরআন বলছে- ৯৬:২ – সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে। ৭৫:৩৬-৩৯ মানুষ কি মনে করে যে, তাকে এমনি ছেড়ে দেয়া হবে? সে কি স্খলিত বীর্য ছিল না? অতঃপর সে ছিল রক্তপিন্ড, অতঃপর আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং সুবিন্যস্ত করেছেন। অতঃপর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন যুগল নর ও নারী।
মুহাম্মদের কাজিন হারিসের মত মক্কার প্রসিদ্ধ চিকিৎসকরা যে মেডিকেল সাইয়েন্স তখনকার যুগে পড়েছিলেন সেখানে গেলেনের ২৬টি বই ছিল তাদের পাঠ্য। কুরআনের বিজ্ঞান বিষয়ে আল্লার সমস্ত জ্ঞান এই হারিসদের মত বিদেশ থেকে লেখাপড়া করে আসা মানুষদের কাছ থেকে ধার করা। তবে হারিস হযরত মুহাম্মদের কুরআনের আয়াত নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করতেন। তিনি এসবকে মুহাম্মদের নিজস্ব কবিতা বলতেন। হারিসের মত শিক্ষিত জ্ঞানী লোকের হাসিরপাত্র হয়ে মুহাম্মদ কতখানি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বুঝা যায় যখন বদরের যুদ্ধে পর হারিসকে বন্দি করে মুহাম্মদ হত্যা করার আদেশ দেন! (সুত্র: সীরাত ইবনে হিশাম)।
সাজিদ বললো,- ‘খালু, খুব অল্প পরিমাণ বললাম। এরকম আরো শ খানেক যুক্তি দিতে পারবো, যা দিয়ে প্রমান করে দেওয়া যায়, কোরান মুহাম্মদ সাঃ এর নকল করে লেখা কোন কিতাব নয়, এটি স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসা একটি ঐশি গ্রন্থ। যদি বলেন, মুহাম্মদ সাঃ নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এই কিতাব লিখেছে, আপনাকে বলতে হয়, এই কিতাবের জন্যই মুহাম্মদ সাঃ কে বরণ করতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা। এই কিতাবের বাণী প্রচার করতে গিয়েই তিনি স্বদেশ ছাড়া হয়েছিলেন।তাকে বলা হয়েছিলো, তিনি যা প্রচার করছেন তা থেকে বিরত হলে তাকে মক্কার রাজত্ব দেওয়া হবে। তিনি তা গ্রহন করেন নি। খালু, নিজের ভালো তো পাগলও বুঝে। মুহাম্মদ সাঃ বুঝলো না কেনো? এসবই কি প্রমান করেনা কোরানের ঐশি সত্যতা?’
তৃতীয় ব্যক্তি: যুক্তিহীন মানুষ ‘ঐশি’ ব্যাপারে বিশ্বাস করে কারণ ঐশি কোন যুক্তি দিয়ে প্রমাণ হয় না। আবু বকরকে যখন বলা হয়েছিলো তোমার বন্ধু তো শুনলাম মহাকাশ ভ্রমণ করে এসেছে, এ বিষয়ে তোমার মত কি? আবু বকর উত্তর দিয়েছিলেন, আমি তো জানি তার সঙ্গে আকাশের আল্লার রাতদিন কথা হয়, সেখানে তার মহাকাশ ভ্রমণ অবিশ্বাস করার কি আছে? এই হচ্ছে বিশ্বাসের ভাইরাস। যারা ঐশ্বি অলৌকিক জিনিসে বিশ্বাস করেন তারা সেগুলো যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারেন না। না পেরে এইসব আবল তাবল যুক্তি দিয়ে মানুষকে ‘ঐশ্বি’ বিশ্বাস করাতে চায়! মুহাম্মদ তার জিব্রাইলকে একজন কাউকে দেখাতে পারত। সেটা দেখালে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যেতো না। কিন্তু দেখাতে পারেনি। তাই বলেছিলেন তিনি আল্লার ম্যাসেঞ্জার এটা বিশ্বাস করতে হবে। তারই এক আহাম্মক ফলোয়ার আজ এইসব কুযুক্তি দিয়ে একটা রূপকথার বই সবাইকে ঐশ্বি হিসেবে বিশ্বাস করাতে অনেক কষ্ট করেছে। কিন্ত সবটাই চিচিং ফাক হয়ে গেলো…। আরেকটি কথা, মুহাম্মদকে কুরাইশরা কুরআন প্রচার না করলে তাদের রাজা কারার অফারটি যুক্তিতে টেকে না। ইসলাম প্রচারের প্রথম ১৩ বছর মক্কার মাত্র একশ জন ইসলাম গ্রহণ করেছিলো। এদের বেশির ভাগই ছিলো সমাজে অচ্ছুৎ, ভগঘুরে মানুষ। এই ১৩ বছর ইসলাম প্রচারে মুহাম্মদ নিজেই ছিলেন চরম হতাশ। এরকম একটি বাতিল প্রোডাক্টসকে প্রচার না করলে কুরাইশরা মুহাম্মদকে কেন রাজা হবার অফার দিবে? এগুলো মুসলমানদের বানানো ইতিহাস। যখন মুসলমানরা জিতে যায় ইতিহাস তারাই লিখেছিলো। স্বভবতই সেখানে মনের মাধুরি মিশিয়ে সাদাকে কালো করা হয়েছে। আর নির্যাতনের কাহিনীও অতিরঞ্জিত। মুহাম্মদকে হত্যার প্লাণও যুক্তিতে টেকে না। কারণ মুহাম্মদকে হত্যা করলে যে সতই অন্যায় করুক বনু হাশিম গোত্র তার রক্তঋণ না নিয়ে ছাড়ত না। যে কারণে ১৩ বছর মক্কায় মুহাম্মদ কুরাইশদের ধর্মকে নিয়ে আজেবাজে কথা বললেও কেউ তাকে হত্যা করতে পারেনি। আপনি যদি মসজিদে ঢুকে বলেন- এইসব নামাজটামাজ বন্ধ কর, আমি যেভাবে যা করতে বলি সেটা কর- আপনাকে কি আস্ত বের হতে দিবে বলে মনে করেন? মুহাম্মদকে আস্ত বের হতে দেয়া হয়েছে। মারতে চাইলে মুহাম্মদকে মারাটি কি খুব কঠিন ছিলো? মুহাম্মদের ধর্ম যদি কুরাইশদের জন্য হুমকি থাকত তাহলে মুহাম্মদকে মদিনায় গিয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ শুরু করতে হয় না। এটা বুঝতে কমনসেন্স লাগে। বিশ্বাসীদের সেটাই থাকে না!
লোকটা কোন কথাই বলছেনা। সিগারেটের প্যাকেটে আর কোন সিগারেট নেই । (এটা আসলে সাজিদের হয়েছিলো। সে জানে ছাগলদের ভালো করে ধরিয়ে দিলে পালানোর পথ থাকে না…।
(বই: প্যারাডক্সিক্যাল মিথ্যাচার, সুষুপ্ত পাঠক পৃষ্ঠা ৩০-৫০)
বইয়ের ডাউনলোড লিংক কমেন্টে দেয়া হলো।
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................