-আপনাদের একটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করি, মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে আপনাদের আপত্তি কেন?
-পশু পাখির মুখোশ বানিয়ে মিছিল এগুলো তো আমাদের ধর্মে নিষেধ। জীবন্ত প্রাণীর প্রতীক কল্পনা করাই তো হারাম। রহমতের ফেরেস্তা আসে না। এগুলো হিন্দুদের প্রতীক। এই যে পেঁচা- এটা তো হিন্দু দেবী লক্ষ্মীর বাহন। এটার মুখোশ দিয়ে মুসলমান নববর্ষ পালন করবে নাকি?
-তাহলে তো মুসলমানদের জন্য গরুর মাংস খাওয়াও হারাম হয়ে যায়! গরু হিন্দু দেবতাদের বাহন!
-এগুলো হচ্ছে আজাইরা যুক্তি!
-আজাইরা না। আপনার নবী মুহাম্মদ নিজের পতাকার নাম দিয়েছিলে ঈগল! নিজের প্রতীক নির্বাচন করেছিলেন ঈগল। আরবিতে ঈগলকে ‘উকাব’ বলে। নিজের যুদ্ধাবস্থাকে ঈগলের মত খিপ্র মনে করতেন তিনি। এই যে জীবন্ত প্রাণীকে প্রতীক কল্পনা করা এটা তো হারাম?
-ফালতু কথা!
-ঠিক আছে এটা বাদ দেন। জমজমের কূপের পানি মুসলমানদের মহা পবিত্র। সেই কূপ খনন করার জন্য একজন কাফেরকে কেন নির্বাচন করা হলো?
-কে কাফের?
-মুহাম্মদের পিতামহ আবদুল মোতালেব।
-আস্তাগফিরুল্লাহ! উনি কেন কাফের হবেন?
-আবদুল মুত্তালিবের পুত্র আবু তালিব কেবলমাত্র ইসলাম ধর্মকে স্বীকার করেনি বলেই মুহাম্মদ তাকে জাহান্নামে ফেলে দিয়েছেন। এই যে দেখেন হাদিস কি বলছে- আল্লাহর নবী আবু তালিবকে বললেন- চাচা, বলূন আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই। তাহলে আমি আল্লাহর কাছে আপনার জন্য সাক্ষ্য দেব। অত:পর আবু তালিব তার শেষ বাক্য উচ্চারন করে মারা গেলেন যা ছিল- আমি আব্দূল মুত্তালিবের ধর্মে বিশ্বাসী এবং আল্লাহর নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করলেন। তখন আল্লাহর নবী বললেন -তারপরও আমি আপনার জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইব যদি না তিনি নিষেধ করেন। (সহি বুখারী, বই – ২৩, হাদিস নং-৪৪২)। তো চাচা আবু তালিব কাফের হলে আবদুল মোতালিব কি?
-উনি ইব্রাহিমি ধর্মের অনুসারী ছিলেন!
-তাই? আবদুল মুত্তালিব কাবার সামনে তীর নিক্ষেপ করে ভাগ্য গণনা করতো না? লাত, উজ্জা, মান্নাত দেবীকে কাবায় রেখেই তো তাদের চারপাশে সাতবার ঘুরত। সেটাকে আপনি ইব্রাহিমি ধর্ম বলছেন! উপরের হাদিসটি থেকে জানা যাচ্ছে আবু তালিব তার পূর্ব পুরুষের ধর্মকেই পালন করতেন। অর্থ্যাৎ আবদুল মুত্তালিবের ধর্মই ছিল আবু তালিবের ধর্ম। যেই ধর্মে প্রফেট মুহাম্মদও তার কৈশোর-যৌবন বিশ্বাস করে এসেছিলেন। সেই ধর্ম বিশ্বাস করায় আবু তালিবের জন্য আল্লাহ’র কাছে মুহাম্মদ ‘ক্ষমা’ চাইলেন সেখানে আবদুল মোতালিব কাফের না তো কি?
-তা না হলো, এতে আপনাদের সমস্যা কি?
-কাবাঘরকে হাতি দিয়ে গুড়িয়ে দিতে চেয়েছিল রাজা আবরাহা। আবদুল মুত্তালিব কাবার আল্লার মূর্তির সামনে প্রার্থনা করলেন কাবাঘরকে রক্ষা করতে। আবাবিল পাখি দিয়ে কাবাঘরকে রক্ষা করা হলো। যে কাবায় ৩৬০টা মূর্তি রেখে পূজা হচ্ছিল সেটা ভেঙে ফেলাই তো মুসলমানদের কাজ তাই না? মুহাম্মদ তো সেটাই করেছিলেন। তাহলে আল্লাহ সেদিন মূর্তি পুজা রক্ষা করতে আবাবিল পাখী কেন পাঠাই ছিলেন? লাত উজ্জার পূজা রক্ষা করতে কেন আবাবিল পাখী পাথর ছুড়ে মারল? তারপর ধরেন, জমজমের পানির মত পানি যেটা মুসলমানরা মহা পবিত্র বলে মনে করে- সেই কূপটা আবদুল মোতালিব পূনঃখনন করলেন। কী রকম বেখাপ্পা লাগে না?
-কি বলতে চান?
-কাফের হিসেবে আবদুল মোতালেব তো দোযগে যাবে তাই না? অথচ তার কাবা রক্ষা নিয়ে গল্প গর্বভরে আপনারা বলেন।
-উনি দোযগে যাবেন সেকথা কোথাও বলা নেই।
-আবদুল মোতালিব তো দূরের কথা যে মা মুহাম্মদকে দশ মাস পেটে ধরছে তাকেই দোযগে ফেলে দিচ্ছেন! কেবল মাত্র মুশরিক হওয়ার কারণে তার জন্য নবী দোয়া করতে পারেন নাই আল্লার নির্দেশে। তাই মার জন্য ‘ক্ষমা’ চাইছেন! কিসের ক্ষমা? কি পাপ করেছেন? এই যে হাদিসটা- আবু হোরায়রা থেকে বর্ণিত, আমি নবীকে বলতে শুনেছি- আমি আমার মায়ের জন্য ক্ষমা ভিক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছিলাম কিন্তু তিনি তা মঞ্জুর করেন নি। আমি তার কবর জিয়ারত করার অনুমতি চেয়েছিলাম এবং তিনি তা মঞ্জুর করেছেন। সহি মুসলিম, বই-৪, হাদিস-২১২৯।
-আসলে আপনি বলতে চান কি!
-আমি বলতে চাই, এত কিছু রেফারেন্স বলছে আবদুল মুত্তালিব একজন মুশরিক ছিলেন। তার দোযগে যাওয়া ইসলাম অনুযায়ী সময়ের ব্যাপার মাত্র। স্বয়ং নবী তার জন্য সুপারিশ করতে পারবেন না। তাহলে ইসলামের অন্যতম নিদর্শন কাবাঘরকে রক্ষা করার জন্য আবদুল মুত্তালিব নেতৃত্ব দিয়েছিল কেন? জমজম কূপ যার পানি মুসলমানদের জন্য মহাপবিত্র তা কেন আবদুল মুত্তালিবের হাতেই পূনঃখনন হতে যাবে? উত্তর দেন…
-ইসলাম নিয়া আপনাদের এত চুলকানি কেন?
-এটা তো রিভার্স খেললেন! চুলকানি তো আপনাদের। পেঁচায় চুলকানি, পহেলা বৈশাখে চুলকানি! মুখোশ মূর্তি ভাস্কর্য সব কিছুতে চুলকানি! ‘ধর্ম যার যার উত্সব সবার’-এতেও চুলকানি! টিপ পরায় চুলকানি! রঙ খেলায় চুলকানি! মেলায় চুলকানি! গানে বাজনায় চুলকানি! এত চুলকানি যে কেন সেটা জানতেই বাকী পৃথিবীর মানুষের কাছে ধরা পড়ে গেছে আসল চুলকানির উত্স ইসলাম!
-পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে ছিলাম থাকবো ইনশাল্লাহ!
-আসলে কাবাঘর ছিল আবদুল মুত্তালিবের পৌত্তলিক ধর্মের ঈশ্বরের ঘর। জমজম কূপের পানি আবদুল মুত্তালিবের ধর্মের অনুসারীরা পবিত্র জ্ঞান করত। বাবু জাহেল, আবু তালিবরা এ্ কূপের পানিকে পবিত্র জ্ঞানে পান করত। হজ করতে এসে পৌত্তলিক তীর্থযাত্রীরা এই কূপের পানি পান করে নিজেকে পবিত্র মনে করত। এইসব ঐতিহ্য আর বিশ্বাসকে ইসলাম হাইজ্যাক করে নেয়াতে পূর্বাপর ইতিহাস আর ইসলামী কাফের বিদ্বেষ মিলে এক বিরাট গোজামিলের সৃষ্টি হয়ে গেছে। এমনিতেই হজ, কাবাঘর, হজরে আসওয়াদ, জমজমের কূপ ইসলামে পৌত্তলিকতার এক বিরাট নিদর্শন হয়ে আছে…
-রোজা রেখে এত কথা বললে রোজা হালকা হয়ে যাবে। না হলে আপনার কথার সব কটা জবাব দিতাম ইনশাল্লাহ…
©সুষুপ্ত পাঠক
Post a Comment
যুক্তি সংগত কথা বলুন.................